fbpx

সাইনোসাইটিস প্রতিরোধে করনীয়

সাইনুসাইটিস অতি পরিচিত একটা সমস্যা। মুখমণ্ডল তথা মাথার সামনের দিকে নাকের আশপাশে চার জোড়া বায়ুভর্তি কুঠুরি থাকে।

এসব কুঠুরিগুলোকেই বলা হয় সাইনাস। এগুলোতে প্রদাহ হলে তখন তাকে বলা হয় সা্ইনোসাইটিস।

সাইনাসের প্রকারভেদ:

সাইনোসাইটিসের ফলে রোগীর মুখমণ্ডলের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণা অনুভূত হয়। মুখমণ্ডলের ভেতর চার রকমের সাইনাস দেখা যায়। ১. কপালের পিছন দিকে অস্থির যে গহ্বর থাকে তাকে বলা হয় ফ্রন্টাল সাইনাস, ২. মুখের ভেতর অস্থির যে গহ্বর থাকে তাকে বলা হয় ম্যাক্সিলারি সাইনাস, ৩. চোখ আর নাকের মাঝখানে মৌচাকের মতো যে সাইনাস থাকে তাকে বলা হয় ইথময়েডাল সাইনাস, ৪. আমাদের নাকের ঠিক পিছনে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে, তাকে বলা হয় এসফেনয়েডাল সাইনাস।

কারণ ঃ

১সাধারণত ঠাণ্ডা ও ভেজা পরিবেশ, ধোঁয়া, ধূলোবালি ইত্যাদি পরিবেশ সাইনুসাইটিস হওয়ার জন্যে উপযুক্ত পরিবেশ বলে বিবেচিত।
২. নাকের ইনফেকশন।
৩. সাঁতার : দূষিত পানি কিংবা উচ্চমাত্রার ক্লোরিনযুক্ত পানিতে গোসল করলে সাইনুসাইটিস হবার সম্ভাবনা থাকে।
৪. আঘাত : যেকোনো আঘাতের কারণে সাইনাস ছিদ্র হয়ে উন্মুক্ত হলে ইনফেকশন হতে পারে।৫৪. দাঁতের ইনফেকশন।
৫. নাকের প্যাক।
৬. নাকের বাঁকা হাড়।
৭. নাকের মাংস ফুলে বড় হয়ে যাওয়া (হাইপারট্রফিড ইনফেরিয়র টার্বিনেট)।
৮. নাকের পলিপ।
৯. সিস্টিক ফাইব্রোসিস।
১০. বড় এডিনয়েড।
১১. জন্মগতভাবে নাকের পেছনের ছিদ্রটি বন্ধ থাকা ইত্যাদি।

রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ 

  • সাইনোসাইটিস রোগে প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়। সকালে কম থাকে, দুপুরের দিকে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায় আবার বিকেলের দিকে সামান্য কমে যায়
  • মাথা নাড়াচাড়া করলে, হাঁটলে বা মাথা নিচু করলে ব্যথার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়
  • জ্বর জ্বর ভাব থাকে, কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়
  • নাক বন্ধ থাকে। পরীক্ষা করলে নাকের ভেতর পুঁজ পাওয়া যেতে পারে
  • সাইনাস এর এক্স রে করলে সাইনাস ঘোলাটে দেখায়।

 

সাইনাসের ইনফেকশন  

  • নাকের এলার্জি থাকলে, নাকের হাড্ডি বাঁকা থাকলে, নাকের ভেতর বাইরের কিছু ঢুকলে এবং এডিনয়েড (নাকের পেছনের টনসিল) বড় হলে
  •  দাঁতের ইনফেশন থেকে বা দাঁত তুলতে গিয়েও সাইনাসে ইনফেকশন হতে পারে
  •  সাইনাসের হাড্ডি ফেটে গেলেও এরূপ হতে পারে
  •  ময়লা পানিতে ঝাঁপ দিলে ঐ পানি নাকের ভেতর দিয়ে সাইনাসে ঢুকেও এ ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে
  •  এছাড়াও অপুষ্টি, আবহাওয়া দূষণ এবং ঠান্ডা স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় এই রোগ বেশি হয়।

সাইনোসাইটিস প্রতিরোধে করনীয়ঃ

প্রচুর পানি পান করুন

সাইনোসাইটিসের সমস্যা হলে প্রচুর পানি পান করুন। প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে আসে। শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে গেলে সেটা ধীরে ধীরে বের হয়ে যায় নিজে থেকেই। তাই সাইনোসাইটিসের সমস্যা দেখা গেলে সারাদিন প্রচুর পানি পান করতে থাকুন।

খাবার

গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক। তাই প্রতিদিন অন্তত এক কোয়া রসুন খেলে ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনজনিত সাইনোসাইটিস কিছুটা প্রতিরোধ হবে। এছাড়াও প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন দুই চা চামচ মধুর সাথে দিনে দুই বার খেলে সাইনোসাইটিস সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়। প্রতিদিন এক চা চামচ পেঁয়াজের রস এক চা চামচ মধুর সাথে মিলিয়ে খেলেও সাইনোসাইটিসের সমস্যা কিছুটা কমে যাবে। এছাড়াও, এক চা চামচ আদা কুচির সাথে এক চামচ মধু খেলে সাইনোসাইটিসজনিত মাথাব্যথা কিছুটা কমে।

জলীয় বাষ্প

কম জলীয়বাষ্পযুক্ত স্থানে সাইনোসাইটিসের সমস্যা বেড়ে যায় এবং বেশি কষ্ট হয়। আবার বেশি জলীয় বাষ্প যুক্ত যায়গাতেও শ্লেষ্মার প্রকোপ বাড়ে। তাই চেষ্টা করুন এমন যায়গায় থাকতে যেখানে জলীয় বাষ্প স্বাভাবিক। স্যাঁতসেঁতে কিংবা অতিরিক্ত শুষ্ক আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে এমন বাসায় থাকার চেষ্টা করুন।

গরম পানির ভাপ নিন

সাইনোসাইটিস সমস্যায় গরম পানির ভাপ নেয়া একটি কার্যকর পদ্ধতি। গরম পানির ভাপ নিলে নাসিকা পথ ভেজা থাকবে এবং সহজেই শ্লেষ্মা বের হয়ে আসতে সুবিধা হবে। তাই গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে নিয়ে দিনে দুই বার করে গরম পানির ভাপ নিন।

মুখে গরম টাওয়েল পেচিয়ে রাখুন

সাইনোসাইটিসের কারণে যখন নাকে, মাথায় অথবা কপালে অস্বস্তি লাগবে তখন গরম পানিতে একটি টাওয়েল ভিজিয়ে ভালো করে চিপে নিন। এরপর এই টাওয়েলটা মুখের উপর দিয়ে শুয়ে থাকুন কিছুক্ষণ। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষনিক ভাবে বেশ আরাম পাওয়া যায়।

গরম পানীয় খান

যখন বাইরে বের হবেন তখন তো আর গরম পানির ভাপ নেয়া সম্ভব না। তাই বাসার বাইরে যতক্ষন থাকবেন কিছুক্ষণ পর পর চিনি ছাড়া গরম চা, কফি অথবা স্যুপ খাবেন। গরম তরল খাবার গুলো খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে আসে এবং সহজে পরিষ্কার হয়ে যায়।

ঘন ঘন নাক পরিষ্কার করুন

যতবার নাকে শ্লেষ্মা আসবে ততবার পরিষ্কার করে ফেলুন। ভুলেও শ্লেষ্মা নাক দিয়ে টেনে নেয়ার বদঅভ্যাস করবেন না। বারে বারে নাক পরিষ্কার করে ফেললে সাইনোসাইটিসের কারণে নাক ভারী হয়ে থাকা বা অস্বস্তি কিছুটা কমবে।

ধোঁয়া ও ধুলো থেকে দূরে থাকুন

সিগারেটের ধোয়া, ধুলাবালি, হেয়ার স্প্রে, বডি স্প্রে ইত্যাদি ধরনের জিনিস গুল থেকে দূরে থাকুন। এধরণের জিনিশ গুলো নাসিকা পথে ঢুকে যায় এবং সাইনোসাইটিস সমস্যা বাড়ায়। রাস্তায় বের হলে নাকে কাপড় দিয়ে রাখুন অথবা মাস্ক পড়ে নিন। তাহলে ধুলার সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে এবং সাইনোসাইটিসের সমস্যার আরাম পাওয়া যাবে।

currentbdnews24.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *