fbpx

শ্রীদেবীর লাশ গ্রহণকারী কে এই আশরাফ?

কে এই আশরাফ?

বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার শ্রীদেবীর পরিবারের সদস্যদের বদলে তার আশরাফ থামারাসারি। কিন্তু কে এই আশরাফ? খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেলো প্রচারবিমুখ পরোপকারী এ মানুষটির অবাক করা অনেক তথ্য। খবর বিবিসির।

সংযুক্ত আরব আমীরাতের আজমান শহরের বাসিন্দা এই ব্যক্তি আদতে ভারতের কেরালার বাসিন্দা।

একটা মোটর গ্যারেজ আছে তার। কিন্তু বিদেশ-বিভূঁইয়ে ভারতীয়-বাংলাদেশী কিংবা পাকিস্তানী অথবা নেপালের মানুষের কাছে তিনিই আক্ষরিক অর্থে শেষ আশ্রয় – আশা-ভরসাস্থল।

যখনই ওই দেশে অবস্থানরত কোনও বিদেশী মারা যান, মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে এই আশরাফ থামারাসারির শরণাপন্ন হন অনেকেই।

আরব আমিরাত থেকে কত মৃতদেহটি  ফেরত পাঠিয়েছেন আশরাফ ?

গত সতেরো বছরে প্রায় ৪,৭০০টি মৃতদেহ আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠিয়েছেন আশরাফ।

এর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল সহ ৮৮টি দেশের নাগরিকদের মৃতদেহ রয়েছে।

অনেক ক্ষেত্রে শবদেহ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্যও কেউ থাকেন না। তখনও ভরসা এই আশরাফ থামারাসারিই।

শ্রীদেবীর মৃত্যুর কয়েকদিন পরে তার মৃতদেহের যে ‘এমবামমেন্ট সার্টিফিকেট’ সংবাদমাধ্যমের হাতে আসে, সেখানে প্রথমই আশরাফের নামটা দেখা যায়। তিনিই ওই মৃতদেহ গ্রহণ করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। আর সেখানেই একটি ফোন নম্বরও দেয়া ছিল সংযুক্ত আরব আমীরাতের আজমান শহরের বাসিন্দা আশরাফ নামের ওই ব্যক্তির। শ্রীদেবীর পরিবারের বদলে তার মৃতদেহ গ্রহণ করলেন কে এই আশরাফ? খোঁজ করতেই পাওয়া গেল আশরাফ থামারাসারির ওই পরোপকারের গল্পগাথা।

সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার সকালে যখন ফোন গণমাধ্যম থেকে ফোন করা হলে আশরাফ ওদিক থেকে সবিনয়ে জানালেন, ‘একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। তাই নিয়ে পুলিশের কাছে এসেছি। পনেরো মিনিট পরে কথা বলবেন দয়া করে?’

বাকি ঘটনা। সালটা ছিল ২০০০ !

তার কাছ থেকেই জানা গেল বাকি ঘটনা। সালটা ছিল ২০০০।

আশরাফ তার এক বন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলেন শারজার এক হাসপাতালে। বেরিয়ে আসার সময়ে দেখেন দু’জন ভারতীয় কাঁদছেন।

আশরাফ জানতে পালেন ওরা তার মাতৃভূমি কেরালার মানুষ। তাদের জিজ্ঞাসা করে জানাতে পারলেন, ওদের বাবা মারা গেছেন। তখন নিজে থেকেই ওদের সঙ্গে অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে ওদের বাবার মৃতদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন আশরাফ। তখন থেকেই শুরু।

চার-পাঁচ দিন লেগে গিয়েছিল সেই মরদেহ কেরালায় পাঠাতে। আর তার কয়েকদিন পরেই আশরাফ খবর পেলেন এক বাংলাদেশী নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তার দেহও দেশে পাঠাতে এগিয়ে গেলেন তিনি।

তারপর গত সতেরো বছরে প্রায় ৪,৭০০টি মৃতদেহ আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠিয়েছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, আমি গত সপ্তাহেই চেন্নাই গিয়েছিলাম। এর আগে বার চারেক কলকাতায় গেছি। আসামের হোজাই, ওড়িশা – কোথায় না গেছি শবদেহ নিয়ে! বাংলাদেশে অবশ্য এখনও যাইনি। তবে সেদেশের প্রায় সাড়ে ৬০০ নাগরিকের মৃতদেহ দেশে পাঠাতে হয়েছে আমাকে।

নিয়মকানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়

তার কথায়,’এখানে কেউ মারা গেলে যে সব নিয়মকানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেগুলো অনেকেই জানেন না। সবাই তো এদেশে রোজগার করতে এসেছে। তাই কারও এত অফিস ঘোরাঘুরি করে মৃতদেহ নেয়া, তারপরে সেটা বিমানে করে দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়া এত কিছু করার সময়ও নেই। এখন তাই কেউ মারা গেলেই লোকে আমাকে খবর দেন। আমি স্বস্তি পাই এটা করে।

এতো কিছুর জন্য কারও কাছ থেকে একটা পয়সাও আশরাফ নেননি কখনও।

আশরাফ আরও বললেন,এ নিয়ে রোজ এতো ঘোরাঘুরি করতে হয় যে আমি আর গ্যারেজের কাজ দেখতে পারি না। ওটা এক শ্যালককে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছি। মাসে সেখান থেকে যেটুকু পাই, তাতেই সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে আমার পরিবারের চলে যায়। এতো মানুষ যে আমার জন্য দোয়া করেন, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

শ্রীদেবীর মৃত্যুর পর আশরাফের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল সেখানকার ভারতীয় দূতাবাস।

তিনি বলেন, খবর পাওয়ার পর থেকে আমি টানা তিনদিন দুবাইয়ে ছিলাম। সেদিন তাকে নিয়ে মোট পাঁচজন মারা গিয়েছিলেন।

একজন চেন্নাইয়ের বাসিন্দা, একজন আহমেদাবাদের আর দু’জন কেরালার। সবার শবদেহের ব্যবস্থাই আমি করেছি।

শ্রীদেবী সম্পর্কে আশরাফ বললেন, তার মুখ দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না যে তিনি আর নেই। জীবিত অবস্থায় ঠিক যেরকমটা দেখতে ছিলেন, সেই একই রকম মুখটা ছিল বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টারের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *