শিরোপা থেকে এক ম্যাচ দূরে রিয়াল মাদ্রিদ
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল। তাও আবার দ্বিতীয় লেগের খেলা।
উত্তেজনা না হলে কি চলে! হয়েছেও তেমন। মঙ্গলবার রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদ-বায়ার্ন মিউনিখের ম্যাচ ছিল উত্তেজনায় টইটম্বুর। বল দখলের লড়াইয়ে বায়ার্ন এগিয়ে থাকলেও পাল্টা আক্রমণে মূল কাজ সেরেছে স্বাগতিকেরা। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে বায়ার্ন হেরেছিল ২-১ গোলে। দ্বিতীয় লেগে রিয়ালের দুর্গে শুরুতে এগিয়ে থাকলেও ২-২ গোলে ড্র করেছে বায়ার্ন।
অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে ৪-৩ গোলে পিছিয়ে থেকে সেমিইনাল থেকেই বিদায় নিতে হলো বায়ার্ন মিউনিখকে। লিভারপুল-রোমার দ্বিতীয় লেগের খেলার পরই বোঝা যাবে ফাইনালে জিদান–শিষ্যরা কাদের মুখোমুখি হন। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে একমাত্র গোলটি করেছিলেন জশুয়া কিমিখ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এসেও রিয়ালের বুকে প্রথম ছুরি চালান ওই কিমিখই। ম্যাচের তৃতীয় মিনিট। নিজের আসনটিও হয়তো খুঁজে পাননি দর্শকদের কেউ কেউ।
তখনই ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন জশুয়া কিমিখ (১-০)। কোরিন্টিন তোলিসোর শট রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস ঠিকঠাক ক্লিয়ার করতে না পারলে সুযোগ কাজে লাগান কিমিখ। কিছু সময় আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা চলে। ষষ্ঠ মিনিটে ক্রসের ফ্রি কিক করিম বেনজেমা-রোনালদোরা কাজে লাগাতে পারলে তখনই সমতায় ফিরতে পারত রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সমতায় ফিরতে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি স্বাগতিকদের।
১১তম মিনিটে মার্সেলোর দুর্দান্ত ক্রস থেকে অসাধরণ হেডে গোল করেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা (১-১)। ২৯তম মিনিটে রিয়ালের কোনো খেলোয়াড় বায়ার্নের ডি-বক্সে থাকলে ব্যবধান ২-১ হতে পারত। ৩৪তম মিনিটে বায়ার্নের হয়ে সুযোগ নষ্ট করেন হামেস রদ্রিগেজ। প্রথমার্ধে নিজের ছায়া হয়ে ঘুরে বেড়ানো রোনালদো ৩৯তম মিনিটে একটা শট নিয়েছিলেন বটে। সেটা গোলপোস্টের পাশ ঘেঁষে চলে যায়। প্রথমার্ধের যোগ হওয়া সময়ে কিমিখের শট রিয়ালের ডি-বক্সে মার্সেলোর হাতে লাগলে পেনাল্টির জোরালো দাবি জানায় অতিথিরা।
রেফারি অবশ্য পেনাল্টি না দিয়েই প্রথমার্ধের খেলা শেষ করেন। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতে না হতেই ৪৬তম মিনিটেই গোল হজম করে বসে হেইঙ্কেস শিষ্যরা। কিক অফের পরপর তোলিসোর ব্যাকপাস ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন বায়ার্ন গোলরক্ষক। তক্কে তক্কে ছিলেন প্রথমার্ধে রিয়ালের স্কোরার বেনজমাও। সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো সমস্যা হয়নি করিম বেনজেমার (২-১)।
গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা রিয়াল তখন বায়ার্নকে চেপে ধরার চেষ্টা করে। তবে সুযোগ বেশি পায় বায়ার্ন মিউনিখের খেলোয়াড়েরাই।৫১তম মিনিটে রিয়াল গোলরক্ষক নাভাস স্বাগতিকদের রক্ষা করেন। ৫২তম মিনিটে পাল্টা-আক্রমণে উঠে আসে রিয়াল। তবে বেনজেমাকে গোল বঞ্চিত করেন বায়ার্ন গোলরক্ষক। ৬০তম মিনিটে হামেস রদ্রিগেজের শট আটকে দেন নাভাস। সেটা ফিরে রিবেরির কাছে আসলে তিনিও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন। ৬৩তম মিনিটে নিকোলাস সুলের ক্রস থেকে শট নেন হামেস রদ্রিগেজ।
প্রথম চেষ্টায় সেটা আটকে দেন নাভাস। তবে তৈরি ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ থেকেই ধারে খেলতে যাওয়া রদ্রিগেজ। রদ্রিগেজের শটে সমতায় ফেরে বায়ার্ন (২-২)। তখন বায়ার্ন সমর্থকদের মনের আকাশে জমাট বাঁধা হতাশার কালো মেঘের আড়ালে খানিকটা আশার আলো জ্বলে উঠেছিল হয়তো। কিন্তু খেলা শেষে সেই আলো যেন দমকা বাতাসে নিবে যায়। সমতা নিয়েই মাঠ ছাড়ে বায়ার্ন মিউনিখ। আর টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠে রিয়াল মাদ্রিদ।