fbpx

ভাইরাল করে দেব, তখন কী হবে, মুখ দেখাতে পারবে?

‘ধর্ষণের কথা কাউকে জানালে তোমার ধর্ষণের যেসব ভিডিও আমার কাছে আছে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে ভাইরাল করে দেব। তখন কী হবে? মুখ দেখাতে পারবে? এসব বলে বলে বিএসএমএমইউর চিকিৎসক রিয়াদ সিদ্দিকী বারবার আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন।’

ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীর বাবা এনটিভি অনলাইনকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব কথা বলেন।

ধর্ষণের অভিযোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রিয়াদ সিদ্দিকী প্রাণের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩, ৯-এর ক ধারায় শাহবাগ থানায় গতকাল মামলা করেছেন।

কলেজছাত্রীর বাবা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সে (চিকিৎসক রিয়াদ সিদ্দিকী) বারবারই আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়েছে। বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে, ইন্টারনেটে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়েছে, ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে এবং শেষমেশ মেয়ের মরণব্যাধি ক্যানসার হয়েছে বলেও হুমকি দিয়ে মেয়েকে বলেছে, ‘বেঁচে থাকতে হলে তো আমার কাছেই আসতে হবে। সুতরাং কাউকে বললে ফল ভালো হবে না।’

আপনারা কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন এসব ঘটনা? এমন প্রশ্নের জবাবে কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমি গ্রামের মুর্খ লোক। হাসপাতালের কাউকেই চিনি না। এসব ঘটনা মেয়ের মুখ থেকে শোনার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করি। ওখানে চারদিন ছিলাম। ওখান থেকে রিলিজ নিয়ে তারপরে লোকজনের সাথে আলোচনা করে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিই।’

দেরিতে মামলা করার কারণ জানতে চাইলে বাবা বলেন, ‘মেয়ে তো আমাদের পরে বলেছে। আমরা কিছুই জানতাম না। ডাক্তার আমার মেয়েকে বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে এসব কথা কারো সাথে বলতে নিষেধ করেছে। কিন্তু মেয়ে সব সময় মন খারাপ করে থাকত। কারণ জানতে চাইলেও কিছু বলত না। অনেক জোর করে করে পরে মেয়ে এসব ঘটনা খুলে বলেছে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমানের কাছে হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে লিখিত বা মৌখিকভাবে থানা পুলিশ বা ভিক্টিমদের কেউ এই ঘটনা সম্পর্কে জানায়নি। সুতরাং এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ-আল-হারুন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘৮ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ থানা থেকে পুলিশ এসে আমাকে জানায়, মেডিকেল অফিসার রিয়াদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে চাই।’

আপনি কি প্রক্টর বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাউকে জানিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘আমি সারাদিন হাসপাতালের কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম। তাই আর জানানো হয়নি। আর এটা প্রক্টর স্যার দেখবেন বলে আমি সেভাবে মাথা ঘামাইনি।’

এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক রিয়াদ সিদ্দিকীর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসক বর্তমানে পলাতক আছেন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় (জিআর) এই মামলার এজাহার আসে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কিশোরী ওই ছাত্রীর বাড়ি ভোলা জেলায়। সে চর্মরোগে আক্রান্ত ছিল। গত বছরের ৬ অক্টোবর ভোলার যমুনা মেডিকেল সার্ভিসেসে ডাক্তার রিয়াদ সিদ্দিকীর কাছে ওই ছাত্রী তার চর্মরোগের সমস্যা নিয়ে পরামর্শ নিতে যায়। বিএসএমএমইউর ডাক্তার হলেও রিয়াদ সিদ্দিকী প্রতি শুক্রবার ভোলায় রোগী দেখতেন। ডাক্তার রিয়াদ প্রথম সাক্ষাতের সময় ওই কিশোরীকে বিবস্ত্র করে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে মলম লাগিয়ে দেন। এ বিষয়ে কিশোরী প্রতিবাদ করলে ডাক্তার রিয়াদ বলেন, ‘আমি তোমার ডাক্তার। আমার কাজ এগুলা করা, আমি এগুলো করব।’ এ বলে ওই চিকিৎসক ছাত্রীর সব স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন এবং কাউকে কিছু বলতে বারণ করেন। এরপর ছাত্রী লজ্জায় কাউকে কিছু বলেনি।

এরপর গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ওই ছাত্রী পুনরায় চিকিৎসা করাতে ডাক্তার রিয়াদের কাছে যায়। ওই দিন ডাক্তার রিয়াদ আবার জোর করে বিবস্ত্র করেন এবং যৌন কাজে লিপ্ত হন। ওই ছাত্রী তখন চিৎকার করলে ডাক্তার ওড়না দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলেন। ছাত্রীকে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর ডাক্তার রিয়াদ ওই ছাত্রীর কিছু গোপনীয় ছবি তুলেন এবং তা ইন্টারনেটে তুলে দেওয়ার হুমকি দেন। সেই সঙ্গে ছাত্রীকে নিয়মিত তার কাছে আসতে বলেন। এরপর ডাক্তার বিভিন্ন সময়ে ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে ফোন করে জানান, আপনার মেয়ের মরণব্যাধি রোগ হয়েছে। তাকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে। এ ছাড়া ডাক্তার রিয়াদ সিদ্দিকী ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে তাদের মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে ফোন দিয়ে ডাক্তার রিয়াদ বলেন, আপনার মেয়ের চিকিৎসার জন্য বোর্ড বসানো হবে। পরের দিন ৩১ ডিসেম্বর ছাত্রীর মা-বাবা মেয়েকে নিয়ে সকালে ঢাকায় আসেন এবং বিএসএমএমইউ হাসপাতালে এসে পৌঁছান।

এরপর ডাক্তার রিয়াদকে ফোন দিলে ওইদিন সকাল ১০টায় মা-বাবা হাসপাতালের বটগাছের সামনে দেখা করেন এবং বোর্ড বসিয়ে ডাক্তার দেখানো হবে বলে ক্যান্টিনে অপেক্ষা করতে বলেন। ডাক্তার রিয়াদ ওই ছাত্রীকে হাসপাতালের বি ব্লকে এক নির্জন স্থানে নিয়ে যান এবং ধর্ষণ করার চেষ্টা করেন। ওই ছাত্রী কান্নাকাটি করে এবং একপর্যায়ে পালিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *