fbpx

ইসলামী দলগুলোকে

নির্বাচনকে সামনে রেখে চাপ ও নানা প্রলোভন দেয়া হচ্ছে

ইসলামী দলে ভাঙনের শঙ্কা বিএনপির

২০ দলীয় জোটে থাকা ইসলামী দলগুলোতে ভাঙনের আশঙ্কা করছে বিএনপি। জোট থেকে বেরিয়ে যেতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার পাশাপাশি দেখানো হচ্ছে নানা প্রলোভন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এসব তৎপরতা চলছে। এজন্য জোটে থাকা পাঁচটি ইসলামী দলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। ইসলামী দলগুলোকে কৌশলে চলার পরামর্শও দিয়েছে। বিএনপি ও ইসলামী দলগুলোর নীতিনির্ধারক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

‘জোট ভাঙতে দলগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘জোট ভাঙতে দলগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভক্তি, ছোট ছোট দলকে জোট থেকে বের করা এসব কাজ যদি রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে হতো তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু এখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নানা শক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে একতরফাভাবে নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য যে নীলনকশা তা বাস্তবায়নে এ শক্তিগুলো কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এ ধরনের অপচেষ্টা দেশের ও রাজনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। রাজনীতিতে যখন দেউলিয়াপনা হয় তখন এমন চক্রান্তমূলক কর্মকাণ্ড হয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এসব ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না। তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে পাঁচটি ইসলামী দল রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বৃহত্তম হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। অন্যগুলো হল- ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল

২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দণ্ড পাওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার কারণে জামায়াতকে জোটে রাখতে গিয়ে বিএনপি বিভিন্ন সময় চাপের মুখে পড়েছে। তারপরও বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে ফাটল ধরেনি। তবে নতুন করে জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপির সন্দেহ তৈরি হয়েছে। দলটির ধারণা- জামায়াতের একটি অংশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক রয়েছে। ২১ মার্চ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান কারাগার থেকে মুক্তি পেলে সন্দেহ আরও বাড়ে। এ ব্যাপারে বিএনপির কোনো নেতা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ৯ অক্টোবর জামায়াতের আমীর মকবুল আহমদ, নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পারওয়ার, সেক্রেটারি জেনারেল ডা.শফিকুর রহমানসহ ৬ জনকে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে একই মামলায় তাদেরকে আটক দেখানো হয়। অথচ জামায়াতের সেক্রেটারি একা মুক্তি পেয়েছেন, কিন্তু অন্যরা পাননি। জামায়াতের একাধিক নেতা তাদের জানিয়েছেন দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেক্রেটারি জেনারেলের মুক্তি পাওয়া নিয়ে তারাও অস্বস্তিতে আছেন। এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তারা জানতে পেরেছেন জামায়াতে দুই অংশ রয়েছে। একটি অংশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। অন্য অংশটি সরকারবিরোধী। তারা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থাকার পক্ষে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র এক নেতা জানান, জামায়াতের বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের কাছে তথ্য আছে খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে জামায়াতকে নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। জামায়াতের একটি অংশকে সেই নির্বাচনে নিতে চাচ্ছে।

নির্বাচনবিষয়ক সাংগঠনিক বৈঠক

এদিকে নির্বাচনবিষয়ক সাংগঠনিক বৈঠক থেকে ১২ মার্চ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মুজিবুর রহমানসহ রাজশাহী অঞ্চলের ১০ জন নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ বলছেন জামায়াতেরই একটি অংশ তাদের বৈঠকের বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার আগে সর্বশেষ ২৮ জানুয়ারি জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। জোটের এক নেতা যুগান্তরকে জানান, ওই বৈঠকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম নিজ থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে বলেন, ‘জামায়াত নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, জোটের সঙ্গেই আছি। বর্তমান সরকারের আমলে জামায়াত-শিবিরই সবচেয়ে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। সরকারের সঙ্গে আঁতাত করলে তা হবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেইমানি।’

জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের যুগান্তরকে বলেন, ‘জামায়াতের মধ্যে দুটি অংশ আছে এটা মোটেও সত্য নয়। জামায়াত ঐক্যবদ্ধ আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। অন্য দলে দলীয় কোন্দল আছে। কিন্তু জামায়াত সম্পূর্ণ কোন্দলমুক্ত।’

আরেক ইসলামী দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সম্প্রতি ভেঙে গেছে। তবে দুটি অংশই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে। শায়খ আবদুল মোবিন একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আরেক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস। দুটি অংশের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা খুব চাপে আছেন। একটু কৌশলে চলার চেষ্টা করছেন। মুফতি মুহম্মদ ওয়াক্কাস নেতৃত্বাধীন অংশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন ইকরাম যুগান্তরকে বলেন, ‘জোট ছাড়ার জন্য আমাদেরকে নানা রকমের হয়রানি করা হচ্ছে। বাইরে দলের কোনো প্রোগ্রাম করতে গেলে বাধা দেয়া হয়। তাই আমাদের এখন ঘরোয়া সভা করতে হচ্ছে।’

২০ জোট ছেড়ে যাওয়া দল

২০ দলে থাকা ইসলামী ঐক্যজোটের মূল অংশটি (প্রয়াত মুফতি আমিনীর দল) ২০১৬ সালে মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ও মুফতি ফয়জুল্লাহর নেতৃত্বে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ছেড়ে যায়। তবে মূল অংশটি ছেড়ে গেলেও অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বে খণ্ডিত একটি অংশ ২০ দলে থেকে গেছে। এ অংশের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা যুগান্তরকে জানান, জোট ছাড়তে তাদের ওপর চাপ আছে। এমনকি তাদেরকে নানা প্রলোভনও দেখানো হচ্ছে।’

আরেকটি ইসলামী দল খেলাফত মজলিশ। দলটি আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মুহম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, এখনও পর্যন্ত আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি।’ তবে দলটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতা যুগান্তর বলেন, ‘আমাদের ওপর অনেক চাপ আছে। যে কারণে মাঝেমধ্যে জোটের বৈঠকে শীর্ষ নেতারা অংশ নিতে পারেন না। তাদের প্রতিনিধি পাঠানো হয়।’

২০ দলীয় জোটে থাকা আরেক ইসলামী দল বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টিও ২০১৫ সালে ভেঙে যায়। সে সময় দলটির মহাসচিব এমএ রশিদ প্রধানের নেতৃত্বে কয়েকজন বাংলাদেশ ন্যাশনাল পিপলস পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলুর সঙ্গে জোট থেকে বেরিয়ে যান। এখন দলটির চেয়ারম্যান আবু তাহের চৌধুরী ও মহাসচিব মো. আবুল কাশেম। তবে দলটি এখন অনেকটা নিষ্ক্রিয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির এক কেন্দ্রীয় নেতা যুগান্তরকে বলেন, ‘জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ওপরও চাপ রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলোচনাও করেছি।’ তবে জোট ছেড়ে তারা যাবেন না বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *