fbpx

দ্রুত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধির উপায়

World Health Organization এর মতে সারা বিশ্বে শতকরা ৩০ ভাগ মানুষ অ্যানিমিয়া অথবা রক্তস্বল্পতা সমস্যায় ভুগে থাকেন।

আর এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে আয়রনের অভাবের কারণে। রক্ত কোষে আয়রন সমৃদ্ধ প্রোটিন হল হিমোগ্লোবিন। এর প্রধান কাজ হল ফুসফুস থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন পরিবাহিত করা।রক্তে লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন কম থাকাকে রক্তস্বল্পতা বলা হয়।

সাধারণত ১৪-১৮ মিলিগ্রাম একজন পুরুষের এবং ১২-১৬ মিলিগ্রাম একজন নারীর শরীরে হিমোগ্লোবিন থাকা উচিত।

উপসর্গঃ
১) শরীর ও চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
২) দুর্বলতা।

৩) বুক ধড়ফড় করা।৪) সামান্য পরিশ্রমে হাপিয়ে যাওয়া ও ব্যয়ামের পর শ্বাসকষ্ট হওয়া।
৫) কানে ঝিঁঝিঁ শব্দ শোনা।
৬) খাবারে অরুচি ও ক্ষুধামন্দা।
৭) নখ ভঙ্গুর হওয়া বা নখের আকৃতি চামচের মত হওয়া।
৮) কাজকর্ম পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়া।

আয়রন স্বল্পতা হলে দ্রুত চুল পড়ে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, গায়ের বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, নখের আকার চামচের আকৃতি ধারণ করা, হতাশায় ভোগা, দীর্ঘমেয়াদি ক্লানত্মি অনুভব, চুলের রং লালচে হয়ে যাওয়া কিংবা শুষ্ক হয়ে যায়।

কারণসমূহঃ

১) খাদ্যতালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমানে না থাকা।
২) কোন কারণে আতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।

রক্তক্ষরণের কারনগুল হলঃ

ক)কোন কারণে মাসিকে আতিরিক্ত রক্তস্রাব।
খ) শরীরে কৃমির সংক্রমণ।
গ) পরিপাকতন্ত্রে আলসার।
ঘ) অপারেশনের সময়/জখম পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তপাত।
ঙ) আতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ/স্টেরয়ড ব্যবহারে পাকস্থলী থেকে রক্তক্ষরণ। চ) পাইলস।

৩) শরীরের আয়রনের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া (গর্ভকালীন সময় নবজাতক কে স্তন্নদানের সময় শিশুর সারিকির বৃদ্ধির সময় আয়রনের চাহিদা বাড়ে।)

এছাড়াও আয়রনের অভাব, ভিটামিন বি-১২ এর অভাব, ফলিক অ্যাসিডের অভাব, পাকস্থলিতে ইনফেকশন, ধূমপান ও উচ্চ বিএমআইর কারণে এ রোগ দেখা দেয়।

রক্তস্বল্পতা দূর করতে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে খাবারের দিকে। প্রতিদিনের খাবারের তাালিকায় পরিবর্তন এনে দূর করা যায় রক্তস্বল্পতা।

আসুন জেনে নিই কী কী খাবারে রক্ত স্বল্পতা রোগ সেরে যাবে।

পালং শাক : ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি ৯, ই, সি, বিটা কারটিন এবং আয়রন রয়েছে পালং শাকে, যা রক্ত তৈরি করে থাকে। আধা কাপ পালং শাক সিদ্ধতে ৩.২ মিলিগ্রাম আয়রন আছে যা নারীদের দেহে ২০% আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। এক কথায় এ শাককে সুপার ফুট বলা হয়।

মাছ ও ডিম : মাছ সব চাইতে ভালো আয়রনের উৎস বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ। শিং মাছ, ইলিশ মাছ, ভেটকি মাছ, টেংরা মাছ ইত্যাদি সব মাছেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সর্বনিম্ন ৬০ গ্রাম মাছ রাখুন রক্তস্বল্পতা রোগ থেকে দেহকে মুক্ত রাখে। আর ডিম প্রোটিনে ভরপুর এ খাদ্যটি দেহে পুষ্টি যোগায়। অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন একটি ডিম খেলে রক্তস্বল্পতা দ্রুত দূর হবে।

বিট : বিটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। এটি অল্প সময়ের মধ্যে রক্তস্বল্পতা দূর করে দেয়। শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে এবং দেহে অক্সিজেন সরবারহ করতে সাহায্য করে।

টমেটো : টমেটো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সবজি। টমেটোতে বিটা ক্যারটিন, ফাইবার, এবং ভিটামিন ই আছে। এ সবজি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।

পিনাট বাটার : দুই টেবিল চামচ পিনাট বাটারে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায়। আপানি যদি পিনাট বাটারের স্বাদ পছন্দ না করেন চিনাবাদাম খেতে পারেন। এটিও শরীরে আয়রন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

ডালিম : ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল ডালিম। এতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন আছে, যা দেহে রক্ত প্রবাহ সচল রেখে দুর্বলতা, ক্লান্ত ভাব দূর করে থাকে। নিয়মিত ডালিম খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

দুধ: প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগায়। দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন বি আছে। এছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদান গুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্ত শূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্ত শূন্যতা রোগীদের জন্য নিয়মিত অন্তত এক গ্লাস করে দুধ খাওয়া উপকারী।

কলিজা: অনেকেই কলিজা খেতে পছন্দ করেন। আবার এমনও অনেকে আছে যারা একেবারেই কলিজা খেতে পারেন না। কিন্তু রক্তশূন্যতায় ভুগছেন যারা তাদের নিয়মিত খাবার তালিকায় কলিজা রাখা উচিত। কলিজায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন বি এর শাখাগুলো আছে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীরা সম্ভব হলে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কলিজা রাখা উচিত।

মধু: মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই উপকরন গুলো শরীরে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতা কমাতে মধু একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।

শাক সবজি: বিভিন্ন রকম সবজি যেমন কচু শাক, কচুর লতি, কচু, পালং শাক, বিট, লেটুস, ব্রকোলি, ধনিয়া পাতা এবং পুদিনা পাতা নিয়মিত বেশি করে খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি মেলা সম্ভব। এই শাক সবজিগুলোতে আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন বি-১২, ফলিক এসিড ও অন্যান্য শক্তিবর্ধক খাদ্য উপাদান আছে যেগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে বিটের জুস রক্তশূন্যতায় অত্যন্ত উপকারী।

ফল: প্রতিদিন আয়রন যুক্ত ফল যেমন আপেল, টমেটো ইত্যাদি খেয়ে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আপনি যদি ফল খেতে পছন্দ না করে থাকেন তাহলে আপেল কিংবা টমেটোর জুস করে খান। আরো যেসব ফল রক্তশূন্যতা দূর করে সেগুলো হলো কলা, আঙ্গুর, কমলা, গাজর ইত্যাদি।

তরমুজ ও ফুলকপির ডাটাতেও আয়রন আছে প্রচুর। তবে উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে আয়রন পেতে হলে শাক বা কপির সঙ্গে ভিটামিন সি’জাতীয় খাবারও খেতে হবে।

পুষ্টিবিজ্ঞানিরা বলে থাকেন, খাবারের আয়রনকে পুরোপুরি ব্যবহার করার জন্য ভিটামিন সি’জাতীয় খাবার যেমন- পেয়ারা, আমলকি, বাতাবিলেবু, কমলা ইত্যাদি খেতে হবে। কারণ ভিটামিন সি’জাতীয় খাবার উদ্ভিজ্জ উৎসের আয়রনকে খুব ভালোভাবে শরীরে শোষণ করতে সাহায্য করে

বিশেষ সতর্কতা: শরীরে আয়রনের ঘাটতি যদি খুব মারাত্মক আকার ধারণ করে তবে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রক্তস্বল্পতার তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা ভিন্ন। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু খাবার ও পথ্য দিয়ে রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয় না। পথ্যের পাশাপাশি আয়রন, ফলিক এসিড ট্যাবলেট দিয়ে থাকেন চিকিৎসক। ক্ষেত্র বিশেষে তীব্র রক্তস্বল্পতায় রোগীকে রক্ত দেওয়া হয়ে থাকে। তাই অন্য সব অসুখের মতোই রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রেও প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই ভালো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *