fbpx

আজ পহেলা বৈশাখ ॥ বাংলা নববর্ষ বরণে নানা আয়োজন

মোঃ মহসিন হোসাইন,কচুয়া,চাঁদপুরঃ চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন আর দাবদাহের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার বিদায় নিয়েছে ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। আজ শনিবার পহেলা বৈশাখ। পঞ্জিকার শাসনে মাসের নামটি অপরিবর্তনীয় থাকলেও এসেছে বাংলা নববর্ষ। খোশ আমদেদ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ।কিন্তু সনাতন ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী শনিবার ১৪২৪ বিদায় নেয় আর রবিবার ১৪২৫ আগমন করে। পুরনো-জীর্ণ, হতাশা-ব্যর্থতা, তথা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের তাবৎ অমানিশা উতরে সহজাত সুন্দরের প্রয়াস সবার। নতুন দিন, নতুন বছরের সাথে নতুন স্বপ্ন-প্রত্যাশায় জাল বুনছে জাতি। আঁধার কেটে যাক, আসুক আলো, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি টুটে যাক বৈশাখের উৎসব মুখরতায়। গণপ্রার্থনা পেয়েছে কাব্যরূপও- “মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।”

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। অব্যাহত তাপ্রবাহের মধ্যেও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বর্ষবরণে বর্ণাঢ্য আয়োজনের ঘনঘটা। অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবারও পহেলা বৈশাখের মূল আকর্ষণ কড়ইয়া ৫নং ওয়ার্ডের অবস্থিত চাঁদপুর (কচুয়া) পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের পশ্চিম পাশ্বে কড়ইয়া বিশ্বরোডের উত্তর পাশে বটতলায় প্রায় ১৫০ বছর পূর্বে থেকে অনুষ্ঠিত এই বৈশাখী মেলা।মেলাটি উদযাপিত হবে ১৫ এপ্রিল রবিবার।

এদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কচুযা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলিমা আফরোজ,উপজেলা আওয়ামীগের সভাপতি আইয়ুব আলী পাটওয়ারী,সাধারন সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী সোহাগ, কচুয়া উপজেলা হিন্দু,বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রানধন দেব,সাধারন সম্পাদক ও কচুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রিয়তোষ পোদ্দার,উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক সনতোষ চন্দ্র সেন, উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ফনী ভূষন মজুমদার তাপু,সাধারন সম্পাদক বিকাশ সাহা,যুব হিন্দুজোটের সভাপতি ডাঃ মানিক মজুমদার সোহাগ,উপজেলা হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ও কচুয়া প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য সুজন পোদ্দার সহ কচুয়া প্রেসক্লাবের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন।

বরাবরের মতো এবারো কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া বিশ্বরোডের বটতলা ও আশপাশ এলাকা বর্ষবরণ উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। বর্ষবরণের সকল প্রস্তুুতি আজ শনিবার সম্পন্ন হয়েছে। পহেলা বৈশাখে যাতে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে কড়ইয়া বিশ্বরোডের চারপাশে পথে পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু হয়েছে কয়দিন আগে থেকেই। বিপুলসংখ্যক পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি বটমূলের চারপাশে থাকবে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা এবং বিস্ফোরক শনাক্ত করার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যৌথভাবে কাজ করছে সব সংস্থা।

নববর্ষে কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের জঞ্জাল সরাতে ঘোষণা করেছেন নতুনের মহত্তম আহ্বান ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে… তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ বাংলা নববর্ষকে আমন্ত্রণ জানান আরো প্রত্যয়মগ্ন হয়ে গভীর আকুলতায় ‘অগণ্য অসংখ্য বাধা ওড়ায়ে হয় প্রবল কণ্ঠে তুলি পুরুষ হুংকার, হে বৈশাখ এসো…।’
বাংলা সালের গণনা শুরু হয় ১৫৫৬ ঈসায়ী সালের ১১ এপ্রিল থেকে। তবে আমাদের দেশে সরকারিভাবে বাংলা সাল-তারিখ ব্যবহার হয় না বললেই চলে। যদিও পহেলা বৈশাখ উদযাপন জাতীয় উৎসবের মর্যাদা পেয়েছে।
বাংলা নববর্ষে ব্যবসায়ীদের ‘হালখাতা’ রীতি এখনও এদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির আমেজ নিয়ে উৎসবের পরিধির আরো বিস্তার ঘটিয়েছে। কৃষক সমাজ আজও অনুসরণ করছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। এককালে কেবল গ্রামাঞ্চলেই পয়লা বৈশাখের উৎসবে মেতে উঠতো মানুষ। নানা অনুষ্ঠান, মেলা আর হালখাতা খোলার মাধ্যমে তখন করানো হতো মিষ্টিমুখ। এখন আধুনিক বাঙালি তাদের বাংলা নববর্ষকে সাজিয়ে তুলছে মাতৃভূমির প্রতিটি আঙিনায় আরও বেশি উজ্জ্বলতায়।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করবে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে।

বৈশাখ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *