fbpx

৪৩ রানে অলআউট, এই বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা কী?

প্রথম ইনিংসে সাকিবরা অলআউট ৪৩ রানে। কী ব্যাখ্যা থাকতে পারে এই ভয়াবহ ব্যাটিংয়ের?

একটু আর্দ্র উইকেট, ঘাস আছে, ফাস্ট বোলারদের সহায়তা করবে। কেন টস জিতে বোলিং নিয়েছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের ব্যাখ্যা শোনার কথা সাকিব আল হাসানের। না শুনলেই বা কী। উইকেট কেমন হবে, সেটি তো বাংলাদেশ আগেই ধারণা পেয়েছে। আগে ধারণা যদি পেয়ে থাকে, সে অনুযায়ী নিশ্চয়ই পরিকল্পনাও হয়েছে।

এই উইকেটে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলারদের তোপ কীভাবে সামলাবে—সব পরিকল্পনা জানা-বোঝার পর অ্যান্টিগায় এটা কী করল বাংলাদেশ! বাংলাদেশ এই টেস্টে এখনো হেরে যায়নি। মাত্রই প্রথম দিন। আরও নির্দিষ্ট করে বললে মাত্রই এক সেশন শেষ হয়েছে। কিন্তু যখন সব লজ্জার রেকর্ডকে সঙ্গী করে একটা দলের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১১২ বলে, ৯৯ মিনিটে, এই টেস্টের গতিপথ বুঝতে আর কী বাকি থাকে! ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, ব্যবহারে ক্লিশে বাক্যটার ওপর আস্থা রেখে তবু চোখ রাখতে পারেন অ্যান্টিগা টেস্টে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আজ যা করলেন, এর ব্যাখ্যা কী?

ভালো শুরু না এনে দিতেই কেমার রোচের ছোবলে তামিম ইকবাল আউট! গুড লেংথের বলটা বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে গেছে উইকেটকিপারের কাছে। তামিম রক্ষণ করতে গিয়েই আউট হয়েছেন। কিন্তু মুমিনুল হক কী করলেন? রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গেলেন। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে গালিতে হোপের ক্যাচ। মুশফিকুর রহিম চালাতে নয়, রোচের ভেতরে ঢোকা বলটা রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়েছিলেন। ব্যাট আর বলের এতটাই দূরত্ব থাকল, বলটা সরাসরি লাগল প্যাডে। রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লু  থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি। এক বল পরই রোচের অফ স্টাম্পের বাইরে করা গুড লেংথের বলটা দ্বিতীয় স্লিপে হোল্ডারকে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে ফিরে গেলেন সাকিব। রোচের পরের বলটার লাইন-লেন্থ কিছুই যেন বুঝতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ! ব্যাটের বাইরের কানায় লাগিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটকিপারকে।

রোচের তোপে ১৮ রানে যে ৫ উইকেট হারাল বাংলাদেশ, এর মধ্যে শুধু মুমিনুলকেই বলতে পারবেন, ওভাবে চালানোর কী দরকার ছিল? বাকি চারজনই তো রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে আউট। সবারই ব্যাটের বাইরের কানায় লেগেছে বল। তাহলে কি তাঁরা রোচের লাইন-লেংথ, গতি, হালকা মুভমেন্ট, একটু লাফিয়ে ওঠা—এসব কিছুই বোঝেননি? এতটাই ‘আনপ্লেয়েবল’ ছিলেন রোচ? প্রশ্নটা করা হচ্ছে দেশের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানকে।

এই দুঃসময়ে লিটন দাসের ব্যাটে একটু প্রতিরোধের আভাস মিলল। নতুন বলে প্রায় টিকে গেছেন। আরও আশার খবর, ভয়ংকর হয়ে ওঠা রোচ মাঠের বাইরে চলে গেছেন চোটে পড়ে। তবু সুযোগটা নিতে পারলেন না লিটন। দলকে টেনে তুলে বীরত্ব দেখানোর সুযোগটা হেলায় হারিয়ে তিনি যে ততক্ষণে আত্মহত্যার দিকে ছুটেছেন! কামিন্সকে অহেতুক চালাতে গিয়ে ফিরলেন ২৫ রান করে, যেটি কিনা দলীয় সর্বোচ্চ! তিন বল পরই কামিন্সকে ফ্লিক করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে হোল্ডারের ক্যাচ নুরুল হাসান। ৩৪ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশের বাকি তিন ব্যাটসম্যান কীভাবে আউট হয়েছেন, সে ব্যাখ্যা আর দেওয়ার দরকার আছে?

অন্যদের কথা কী বলবেন, সাকিবের নিজেরই বোধ হয় নিজেদের ব্যাটিং দেখতে ভালো লাগছিল না। ইনিংসটা যখন ফুরিয়ে যাবে যাবে করছে, ড্রেসিংরুমের বারান্দায় বাংলাদেশ অধিনায়ক কখনো সতীর্থ বোলারদের সঙ্গে বল নিয়ে আলোচনা করছেন, কখনোবা মিডিয়া ম্যানেজারের কাছে কিছু একটা জানতে চাইছেন। সাত বছর পর তাঁর টেস্ট অধিনায়কত্ব শুরুটা কী ভয়াবহ!

স্টিভ রোডসের শুরুটা তো আরও বাজে! প্রথমবারের মতো একটা জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। ম্যাচের আগেও ধারাভাষ্যকারদের বলেছেন, ‘আমার একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’ অথচ শুরুটা হলো দুঃস্বপ্নের মতো। ড্রেসিংরুমের বারান্দায় বারবার ঘড়ি দেখছেন। হয়তো ভাবছেন, বাংলাদেশ মধ্যাহ্নবিরতির আগেই গুটিয়ে গেলে কী লজ্জায় যে পড়তে হবে! শেষরক্ষা হয়নি। লজ্জার সব রেকর্ড সঙ্গী করে বাংলাদেশ অলআউট ৪৩ রানে।

টেস্ট শুরুর প্রায় ১০ দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গেছে বাংলাদেশ। একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। ওই ম্যাচে নিজেদের ভালোই ঝালিয়ে নিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। অ্যান্টিগার উইকেটে ঘাস থাকবে, সেটিও জানতেন। কদিন আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অসাধারণ বোলিং করেছেন ক্যারিবীয় পেসাররা। সেটিও অজানা ছিল না। সব জানা-বোঝার পরও কেন এই হতশ্রী ব্যাটিং? এই বিপর্যয়ের ব্যাখ্যাটা কী?

উত্তর যা–ই হোক, এটা তো সত্য, শুরুর এ ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসাটা হয়তো খুব কঠিন হবে বাংলাদেশের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *