সিসিটিভি ফুটেজে যৌন নিপীড়নের প্রমাণ শনাক্ত
সিসিটিভি ফুটেজে যৌন নিপীড়নের প্রমাণ শনাক্ত ৫ যুবক
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে অংশ নিতে যাওয়া মিছিল থেকে কলেজছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় দুটি ভিডিও ক্লিপ হাতে পেয়েছে পুলিশ। এসব ভিডিওতে যৌন নিপীড়নের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পর্যালোচনা করে পুলিশ ৫ যুবককেও শনাক্ত করেছে। এখন পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদের গ্রেফতারে তৎপরতা চলছে। এছাড়া ওই ছাত্রীকে উদ্ধারকারী পুলিশ সদস্যের ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে। তাকেও শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। শুক্রবার আলামত হিসেবে ওই ছাত্রীর একটি ছেঁড়া জামা জব্দ করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এখনই এসব বিষয়ে কথা বলছে না। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ৭ মার্চ রাজধানীর বাংলামোটরে ওই যৌন হয়রানির ঘটনায় বৃহস্পতিবার কলেজছাত্রীর বাবা রমনা থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনা ছাড়াও ওই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে আসা মিছিল থেকে বিভিন্ন স্থানে নারীদের হেনস্থা ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। নগরীর বাংলামোটর, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, কাকরাইল, খামারবাড়ি ও কলাবাগানে এসব ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। হেনস্থার শিকার কয়েকজন নারীর স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। পুলিশ বাংলামোটরের ঘটনার দুটিসহ অন্তত ৬টি স্থানের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। ভিডিও ফুটেজগুলো পর্যালোচনা চলছে।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, রমনা থানায় ওই কলেজ ছাত্রীর বাবার দায়ের করা মামলাটির নথিপত্র শুক্রবার আদালতে পৌঁছেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার নথিপত্র দেখে আগামী ১ এপ্রিল মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন।
রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন-
রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শফিকুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত করছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় মামলাটি (নম্বর ২৪) দায়ের করেন যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রীর বাবা। মামলার এজাহারে তিনি সমাবেশের টি শার্ট-ক্যাপ পরিহিত অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করেছেন। বাদীর অভিযোগ, তিনি ঘটনার দিন রাত ৯টায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে জানতে পারেন তার মেয়ে কলেজ থেকে ফেরার সময় শান্তিনগর মোড়ে বাস না পেয়ে কাকরাইল মোড়ে হেঁটে যান। সেখানেও সে বাস না পেয়ে অফিসার্স ক্লাবের আগের সিগন্যালে এসে ফার্মগেটগামী একটি বাসে ওঠেন। বাসটি মগবাজার হয়ে বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার সময় তীব্র যানজটে পড়ে। তখন তার মেয়ে বাস থেকে নেমে হেঁটে বাংলামোটরের দিকে যেতে থাকে। আনুমানিক আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে ৮৯ নম্বর নিউ ইস্কাটন বাসার সামনের ফুটপাতে সাদা টি-শার্ট পরা আনুমানিক ২৫-৩০ বছর বয়সী ১৫-২০ জন ছেলে তাকে ঘিরে ধরে যৌন হয়রানি করে। তাকে টানাহেঁচড়া করে পরিহিত ড্রেসের জামার শোল্ডার ও দুটি বোতাম ছিঁড়ে ফেলে। একজন ট্রাফিক পুলিশ তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দিলে সে বাসায় আসে।
রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করা যায়নি। তিনি বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তার বক্তব্য রেকর্ড করেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (রমনা) মারুফ হোসেন সরদার জানান
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (রমনা) মারুফ হোসেন সরদার জানান, ট্রাফিক পুলিশের যে কনস্টেবল ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বাসে তুলে দিয়েছিলেন, ভিডিও ফুটেজ থেকে তার ছবিও সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মুখে মেহেদি দেয়া লাল দাড়ি থাকার বিষয়টি বোঝা গেলেও এখনও তাকে শনাক্ত করা যায়নি। সেখানে যাদের ডিউটি ছিল তাদের মধ্যে কেউ কি-না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি বাইরের কোনো পুলিশ সদস্য কি-না, সেটিও দেখা হচ্ছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে তার ডিউটি ছিল না।
জানা গেছে, ঢাকার অন্যান্য স্থানের যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্তও শুরু করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুক্তভোগীদের ফেসবুক পোস্ট যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি ঘটনাস্থলের বেশকিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএমপির একজন সহকারী কমিশনার জানান, যৌন হয়রানির সব অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থেই এ সম্পর্কে আপাতত জানানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, পুলিশ ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলছে, তাদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। তাদের অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভুক্তভোগীরা মামলা করবেন, পুলিশ তাতে সহযোগিতা করবে।
যুগান্তরকে/ ১০ মার্চ ২০১৮, ০০:০০