fbpx

তুলে নেওয়া হচ্ছে বাজার থেকে ফরাসি শিশুখাদ্য

ফরাসি দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ল্যাকটালিসের শিশুখাদ্যে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর তা বাংলাদেশের বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। ল্যাকটালিসের বাংলাদেশি পরিবেশক প্রতিষ্ঠান জেস ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, তারা ল্যাকটালিসের উৎপাদিত বেবি কেয়ার-১ ও বেবি কেয়ার-২ নামের শিশুখাদ্যের কয়েকটি ব্যাচের পণ্য বাজারে ছাড়ার পর ফেরত নিচ্ছে। পাশাপাশি যেসব পণ্য ছাড়া হয়নি, তা আর বাজারে ছাড়া হবে না।

বাংলাদেশ হলো বিশ্বের ৮৩টি দেশের মধ্যে একটি, যেসব দেশে ল্যাকটালিসের ব্যাকটেরিয়াযুক্ত শিশুখাদ্য বিক্রি হয়েছে। এসব সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে শিশুর ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও ল্যাকটালিসের ব্যাকটেরিয়াযুক্ত শিশুখাদ্য তুলে নেওয়া হচ্ছে। ল্যাকটালিস জানিয়েছে, ফেরত নেওয়া শিশুখাদ্যের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাক্স।

এদিকে গতকাল রোববার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক খবরে বলা হয়, ফ্রান্সের সরকারি কর্মকর্তারা ল্যাকটালিসের শিশুখাদ্য খেয়ে ৩৫টি শিশুর সালমোনেলায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা পেয়েছেন। আরেকটি ঘটনা পাওয়া গেছে স্পেনে। গ্রিসে একটি শিশুর সালমোনেলায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি তদন্ত চলছে। অবশ্য আক্রান্তদের পরিবারগুলোর একটি সংগঠন দাবি করেছে, সংখ্যাটি কমিয়ে দেখানো হচ্ছে।

এএফপি বলছে, ল্যাকটালিস ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারীদের মধ্যে একটি। তাদের বিশ্বের ৪৭টি দেশে ২৪৬টি উৎপাদনকেন্দ্র আছে। প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রায় ২ হাজার ৬০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা।

এএফপির খবর অনুযায়ী, ল্যাকটালিসের শিশুখাদ্যে সালমোনেলা আক্রান্তের বিষয়টি ফ্রান্সের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করলে দেশজুড়ে হইচই পড়ে যায়।

এরপর ল্যাকটালিসের মালিকপক্ষ গণমাধ্যমের সামনে আসতে বাধ্য হয়। ল্যাকটালিসের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ইমানুয়েল বেসনিয়ার গতকাল একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অভিযোগ আসছে। তদন্ত হবে। আমরা তদন্তকারীদের সহায়তা করব। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’

বাংলাদেশ এ ঘটনা জানতে পারে গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। শুরুতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বরাত দিয়ে ল্যাকটালিসের উৎপাদিত কয়েকটি ব্র্যান্ডে সালমোনেলা
 এগোনা নামের ক্ষতিকর জীবাণু সংক্রমণ হয়েছে বলে জানায়। তারা বাংলাদেশের গ্রাহকদের এসব পণ্য ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পাশাপাশি পরিবেশককে এসব পণ্য তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় বিএফএসএ।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের কড়া নজরদারিতে আছে। ল্যাকটালিসের জীবাণুমুক্ত কোনো ব্যাচের শিশুখাদ্য যাতে বাজারে না থাকে এবং বন্দর দিয়ে দেশে ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ তিনি জানান, বাংলাদেশে এ শিশুখাদ্য খেয়ে কোনো শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এখনো ধরা পড়েনি।

জেস ইন্টারন্যাশনালের অংশীদার জাওয়াদুল হক গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করার পর তারা বাংলাদেশের বাজার থেকে পণ্য তুলে নেওয়া শুরু করে। ইতিমধ্যে প্রায় সব পণ্য তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে কয়েকটি ব্যাচে সালমোনেলার সংক্রমণ সন্দেহ করা হচ্ছে, তা গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পর উৎপাদিত। নিজেদের সন্তুষ্টির জন্য আমরা এসব পণ্য বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ থেকে পরীক্ষা করিয়েছি। সেখানে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়নি। তারপরও তুলে নেওয়া হচ্ছে।’

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বেবি কেয়ার-১ এর ১৭ সি ০০১২৩৮৮, ১৭ সি ০০১২৬৬৮, ১৭ সি ০০১২৯৯১,১৭ সি ০০১২৬৬৯, ১৭ সি ০০১২৯৯৩, ১৭ সি ০০১২৩৮০ ব্যাচের এবং বেবি কেয়ার-২ এর ১৭ সি ০০১২৪৩৫ ও ১৭ সি ০০১৩৫৭০ ব্যাচের শিশুখাদ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। জেস ইন্টারন্যাশনাল জানায়, তারা এর মধ্যে চারটি ব্যাচের শিশুখাদ্য বাজারে ছেড়েছিল, যা এখন প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বাকি চারটি ব্যাচের পণ্য গুদাম ও আমদানির প্রক্রিয়ায় ছিল, যা আর বাজারে ছাড়া হবে না।

জাওয়াদুল হক বলেন, ‘আমরা প্রায় ১ হাজার কার্টন (প্রতি কার্টনে ২৪টি) শিশুখাদ্য ফেরত নিয়েছি। এসব পণ্য জুলাইয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘এসব ব্যাচের বাইরে আমাদের সব পণ্য নিরাপদ।’

জেস ইন্টারন্যাশনাল ১৭ বছর ধরে ল্যাকটালিসের পণ্য আমদানি করছে। বাংলাদেশে তারাই একমাত্র পরিবেশক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *