রোবট নারী সোফিয়া এবার বাংলাদেশে
হংকং এর একটি কোম্পানি ‘হ্যান্সন রোবোটিক্স’ ‘সোফিয়া’ নামের যে রোবটটি তৈরি করেছে সেই নারী রোবট ‘সোফিয়া’ এবার বাংলাদেশে আসছে।
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৫ ডিসেম্বর রাত ১২টায় বাংলাদেশে পৌঁছার কথা রয়েছে সোফিয়ার।
পরদিন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর স্থানীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবে সোফিয়া। ‘সোফিয়া’ ইংরেজীতে কথা বলে।
প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, সোফিয়া আগামী ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় শুরু হতে যাওয়া দেশের বৃহত্তম তথ্য-প্রযুক্তি সম্মেলন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী দিনেই উপস্থিত থাকবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সঙ্গে থাকবেন তার নির্মাতা ড. ডেভিড হ্যানসন।
এর আগে ‘সোফিয়া’কে সৌদি আরব নাগরিকত্ব দেয়ার পর সেখানে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
এই রোবট একজন সৌদি নারীর চেয়েও বেশি অধিকার ভোগ করছে কিনা সেটা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে।
সৌদি আরবের রিয়াদ নগরীতে গত অক্টোবর মাসে এক অনুষ্ঠানে এই রোবটটি প্রদর্শন করা হয়েছিল।
প্রদর্শনীতে উপস্থিত শত শত প্রতিনিধি রোবটটি দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে সেখানে সাথে সাথেই এটিকে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন একজন সৌদি নারীর তুলনায় কিভাবে ‘সোফিয়া’ এত বেশি অধিকার ভোগ করছে।
রোবট নারী ‘সোফিয়া’র ছবি এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়।
বাংলাদেশের প্রতিমন্ত্রী বলছেন, সোফিয়াকে নিয়ে তাদের দুইটি সেশন হবে।
তিনি বলছিলেন “প্রথম সেশনে আমাদের পলিসি মেকার যারা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তাঁরা এবং সাংবাদিকদের সাথে তার একটা ইন্টার্যাকশন (মিথস্ক্রিয়া) করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। দ্বিতীয় সেশনে আমাদের যারা তরুণ অ্যাপ ডেভেলপার, গেম ডেভেলপার, সফটওয়্যার ডেভেলপার, উদ্ভাবক এদের সাথে আলাপ হবে। এছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে ড. ডেভিড হ্যানসন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন”।
এই রোবট সোফিয়া – সৌদি আরবের ‘নাগরিকত্ব’ পাওয়া সোফিয়া নামের রোবটটি চেহারায় মানুষের মতো অভিব্যক্তি যেমন প্রকাশ করতে পারে, তেমনি মানুষের মতোই মানুষকে ভালোবাসতে শিখে গেছে। হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের চেহারার আদলে তৈরি সোফিয়া এখন সন্তান গ্রহণ করতে চায়। পরিবারও গঠন করতে চায়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে সে বলে, পরিবার খুবই প্রয়োজনীয়।
হংকংয়ের রোবট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হ্যানসন রোবটিকস তৈরি করে রোবট সোফিয়াকে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সোফিয়া প্রায় মানুষের মতোই মুখভঙ্গি করতে পারে।
তবে তার এমন প্রতিক্রিয়া আগে থেকেই নির্ধারিত নয়। আলাপচারিতার সময় ‘মেশিন লার্নিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে শেখা ও সংরক্ষিত তথ্য থেকেই প্রতিক্রিয়া জানায় রোবটটি।
সন্তান প্রত্যাশার কথা প্রসঙ্গে সোফিয়া জানায়, ‘আমি মনে করি, আপনার যদি একটি প্রেমময় পরিবার থাকে, তবে আপনি সৌভাগ্যবান…সেটা আমি রোবট এবং মানুষের জন্য একই মনে করি।’ সন্তান হিসেবে কন্যাসন্তানই পেতে চায় সোফিয়া। আর তার নাম কী রাখা হবে, এমন প্রশ্নে সোফিয়া বলে, ‘সোফিয়া’।
তবে সোফিয়ার এমন চমৎকার আলাপচারিতার ক্ষমতা থাকলেও রোবটটির এখনো কোনো চেতনাবোধ নেই।
আগামী বছরগুলোতে সোফিয়ার আরও উন্নয়ন ঘটবে বলেই আশাবাদী রোবটটির নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন।
প্রসঙ্গত, ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭’ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসছে সোফিয়া। সঙ্গে থাকবেন তার নির্মাতা ড. ডেভিড হ্যানসন।
এর আগে ‘সোফিয়া’কে সৌদি আরব নাগরিকত্ব দেয়ার পর সেখানে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
এই রোবট একজন সৌদি নারীর চেয়েও বেশি অধিকার ভোগ করছে কিনা সেটা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে।
সৌদি আরবের রিয়াদ নগরীতে গত অক্টোবর মাসে এক অনুষ্ঠানে এই রোবটটি প্রদর্শন করা হয়েছিল।
প্রদর্শনীতে উপস্থিত শত শত প্রতিনিধি রোবটটি দেখে এতটাই মুগ্ধ হন যে সেখানে সাথে সাথেই এটিকে সৌদি নাগরিকত্ব দেয়া হয়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স কি?
এলান টিউরিংকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক। ১৯৫০ সালের দিকে এলান টিউরিং একটি মেশিন বুদ্ধিমান কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য
একটি টেস্ট এর কথা উল্যেখ করে গিয়েছেন, যা টিউরিং টেস্ট নামে পরিচিত। ঐ সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অনেক রিসার্চ হলেও এর পর অনেক দিন AI নিয়ে রিসার্চ বন্ধ থাকে। প্রধান একটা কারণ হিসেবে ধরা হয় কম্পিউটেশনাল পাওয়ার। ঐ সময়কার কম্পিউটার গুলো এত পাওয়ারফুল ছিল না।
কম্পিউটারের প্রসেসিং পাওয়ার বাড়ার সাথে সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আবার রিসার্চ শুরু হয়েছে।
কিছুদিন আগে Facebook, Google, Amazon মিলে AI এর উপর রিসার্চ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। Elon Musk গঠন করেছেন OpenAI নামক প্লাটফরম।
বুদ্ধিমান প্রোগ্রাম তৈরি করার জন্য প্রধান যে বিষয়টা দরকার তা হচ্ছে Knowledge Representation & Reasoning।
আর সুন্দর ভাবে Knowledge Representation & Reasoning এর জন্য মানুষের ব্রেইন কিভাবে কাজ করে, বিজ্ঞানীরা তার অনুকরণ করার চেষ্টা করছে।
আমরা মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করি।
মঙ্গলে মানুষের কলোনি তৈরি করার স্বপ্ন দেখি।
সবই করি এই মস্তিষ্কটাকে কাজে লাগিয়ে।
মহাকাশ অনেক দূরে হয়েও আমরা অনেক কিছু জানতে পারি। কিন্তু মস্তিষ্কটা কিভাবে কাজ করে, এখনো ঠিক মত আমরা বুঝে উঠতে পারি নি। যতটুকু বুঝে উঠেছি আমরা, তত টুকু ব্যবহার করেই আমরা বুদ্ধিমান সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করছি।
মানুষের মস্তিক নিউরন দ্বারা গঠিত। আমাদের মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে। এগুলো একটা একটার সাথে কানেক্টেড, একটা নেটওয়ার্ক এর মত। এই জৈবিক নিউরাল নেটওয়ার্ক এর অনুকরণ করেই আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে।
আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটোওয়ার্ক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটা অংশ মাত্র। মূলত এটি হচ্ছে মেশিন লার্নিং এর একটা শাখা।
আর মেশিন লার্নিং হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর একটি শাখা। মেশিন লার্নিং ছাড়া AI এর অন্যান্য বিষয় গুলো হচ্ছে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং, অবজেক্ট রিকগনিশন, প্যাটার্ন রিকগনিশন, রোবটিক্স, ইভোলিউশনারি কম্পিউটেশন যেমন জেনেটিক অ্যালগরিদম, ফাজি সিস্টেম, প্রবাবিলিটি, প্রিডিকশন, Knowledge management সহ অন্যান্য।
কম্পিউটার বা যে কোন মেশিন হচ্ছে বোকা বাক্স। এগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য ইন্ট্রাকশনের দরকার হয়। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে আমরা কম্পিউটার বা যে কোন মেশিনকে কিছু ইন্সট্রাকশন দেই, কম্পিউটার বা মেশিন গুলো সে অনুযায়ী কাজ করে।
এই মেশিনকে আমরা যে ইন্সট্রাকশনই দিব, মেশিন সে অনুযায়ীই কাজ করবে। এর বাহিরে নিজ থেকে কিছু করতে পারবে না।
মেশিন যেন নিজ থেকে কিছু করতে হলে তার কিছু বুদ্ধি শুদ্ধি লাগবে। মেশিনের বুদ্ধি শুদ্ধিকে আমরা বলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
একটা রোবটের কথা যদি চিন্তা করি, রোবটের বুদ্ধি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
বুদ্ধি জিনিসটা কি?
বুদ্ধি হচ্ছে জ্ঞান আহরণ করা এবং তা প্রয়োগ করার ক্ষমতা। সাধারণ প্রোগ্রাম গুলো জ্ঞান আহরণ করতে পারে না।
কিন্তু যে সব মেশিন বা প্রোগ্রাম এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যেন নিজে নিজে কিছু শিখে নিতে পারে, সেগুলোকে আমরা বলি বুদ্ধিমান প্রোগ্রাম বা বুদ্ধিমান মেশিন।
যেমন গুগল সার্চ প্রোগ্রামটা একটা বুদ্ধিমান প্রোগ্রাম।
আমরা কিছু সার্চ করলে এটি আমাদের আগের সার্চ হিস্টোরি, বয়স, লোকেশন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে আমাদের সার্চ রেজাল্ট দেখায়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যদি আমরা খুব উন্নত করতে পারি, হয় এটি হবে সবচেয়ে দারুণ একটা পরিবর্তন অথবা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিবর্তন।
এমনকি আমাদের অস্তিত্বও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আমরা মানুষেরা বুদ্ধিমান, কিউরিয়াস।
আমরা দেখতে চাই কি হবে ফিউচারে।এটাই হচ্ছে বুদ্ধি।
আর এ জন্যই আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ডেভেলপ করে যাবো।
আমরা চেষ্টা করে যাবো কম্পিউটারকে মানুষের মত বুদ্ধিমান করে তোলার।