fbpx

রাগ আভোগিতে শুরু হল শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব

উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের দিকপালদের নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার ধানমণ্ডির আবাহনী মাঠে শুরু হয় এবারের উৎসব।

বরাবর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে হলেও এবার স্থান পরিবর্তন করে ধানমণ্ডিতে হচ্ছে বার্ষিক এই আসর।

সন্ধ্যা ৭টায় উৎসব মঞ্চে আসেন আন্তর্জাতিক সংগীত পরিচালক এল সুব্রামনিয়াম, রাগ আভোগি পরিবেশনা নিয়ে। তার সঙ্গে মৃদঙ্গমে সঙ্গত করেন রামামূর্তি ধুলিপালা, তবলায় ছিলেন পণ্ডিত তন্ময় বোস এবং মোরসিং-এ ছিলেন সত্য সাই ঘণ্টশালা।

তারপর মঞ্চে আসে কাজাখস্তানের অর্কেস্ট্রা  দল আস্তানার স্টেট একাডেমিক ফিলারমানিক সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা।  অর্কেস্ট্রার পরিচালক বেরিক বাত্যরখানের পরিচালনায় মঞ্চ মাতান এরনার নুরতাজিন। মঞ্চ মাতান করেন কে পেন্ডারকি, ভি আশকেনাজি, আর গাটার, এ চাইকোভস্কি, আর কানেট্টি, ডি ব্রোসরা।

শুরুতে তারা পরিবেশন করেন কাজাখস্তানের সংগীত পরিচালক তিলেশ তাসগালিব ও চায়কোভস্কি রচিত দুটি শাস্ত্রীয় সংগীত। চেলো, ভায়োলিন, বাঁশি আর স্যাক্সোফোনে পরিবেশিত হল স্টাফ নোটেশন। উৎসব জুড়ে তখন ভিন্ন আবহ।

তারপর সুব্রামনিয়ামের সঙ্গে যুগলবন্দি হয়ে মঞ্চে আসে সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা।  পশ্চিমা  সংগীতের সঙ্গে ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যালের স্টাফ নোটেশনে তৈরি হল আবেগাসান্দ্রিত পরিবেশ। ভারতীয় ক্ল্যাসিকালের সঙ্গে ওয়েস্টার্নের ফিউশনে কখনও বিরহ ব্যথা, কখনও ছড়ালো উচ্ছ্বাসের বারতা।

তারপরই মঞ্চে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভারতীয় সরোদশিল্পী রাজরূপা চৌধুরী। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রসংগীতে স্নাতকোত্তরের পর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চার এক পর্যায়ে তিনি উত্তর-ভারতীয় ধারার সংগীতের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।

এরপর মঞ্চে আসেন ভারতীয় খেয়ালিয়া পদ্মা তালওয়ালকার। গোয়ালিয়র, কিরানা ও জয়পুর ঘরানার শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা করে যাওয়া এই শিল্পী বেড়ে উঠাও সংগীতের আবহে; পরে ঘর বেঁধেছেন তবলাবাদক সুরেশ তালওয়ালকরের সঙ্গে।

তারপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের সেতার বাদক ফিরোজ খান। কৈশোরে মামা খুরশিদ খানের সেতার বাদনে এতটাই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন তিনি যে পরে সরোদ বাদনেই মনোনিবেশন করেন। বেঙ্গল পরম্পরা সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এরপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের খেয়ালিয়া সুপ্রিয়া দাশ।

পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার পৌত্র বংশীবাদক রাকেশ চৌরাসিয়া আসেন এরপর।  একক পরিবেশনায় খ্যাতি কুড়ালেও প্রায়ই তিনি ওস্তাদ জাকির হোসেন, বেলা ব্ল্যাক, এডগার মায়ের, যশোয়া রেদমানের মতো খ্যাতিমান শিল্পীদের সঙ্গে পরিবেশনা করেছেন।

এবারের উৎসব উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর,  আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা ও আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। উৎসবে গান শুনতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও।

এবারের আয়োজনটি উৎসর্গ করা হয়েছে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে।

অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টের সবগুলোতে উপস্থিত থেকেছি, এটা আমার সৌভাগ্য। এ উৎসবে আমরা পাঁচ দিন নৃত্যগীতের মধ্যে অবগাহন করব। আমরা সবার আগে মানুষ হতে চাই, নিজেদের রুচিকে উন্নত করতে চাই। এ উৎসব সে পথেই প্রেরণা জোগাবে।”

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “সংগীত আমাদের মুক্তচিন্তার অধিকারী করে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার প্রেরণা জোগায়। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে সে মূল্যবোধ, চেতনাকে ধারণ করতে চাই। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সংগীত আমাদের শক্তি জোগাবে। উৎসবটি আমাদের মধ্যে সেই চেতনার বিকাশ ঘটায়।”

আয়োজকদের পক্ষে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আবুল খায়ের লিটু বলেন, “মানুষকে মানবিক হওয়ার জন্য আমাদের এই উৎসব আয়োজন। উচ্চাঙ্গ সংগীতকে মাস লেভেলে পপুলার করতে উৎসবের আয়োজন।”

আগামী বছর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এই উৎসবটি অর্থমন্ত্রী মুহিতকে উৎসর্গ করার ঘোষণা দেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের উৎসব ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদকে এবং ২০২০ সালের উৎসব ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনকে উৎসর্গ করা হবে।

বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ কামালের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবে এই আয়োজনের ক্ষণে তাকে স্মরণ করেন অঞ্জন চৌধুরী। শেখ কামালের শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চার কথা তুলে ধরেন তিনি।

উৎসবের স্থান পরিবর্তন হলেও শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুরাগীদের ভিড় ছিল আগের মতোই। নিরাপত্তার কড়াকড়ির মধ্যেই শ্রোতারা সন্ধ্যা হতেই তারা ভিড় করতে থাকেন উৎসব প্রাঙ্গণে।

উৎসব প্রাঙ্গণে আরও চলছে বাংলাদেশের সংগীত সাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে একটি সচিত্র প্রদর্শনী এবং বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটলমেন্ট এর ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক প্রদর্শনী।

উৎসবের প্রতিদিনের আসর শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়, শেষ হবে পরদিন ভোর ৫টায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *