fbpx

মুজিবনগর দিবস এর ইতিহাস

মুজিবনগর দিবস এর ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী সরকার, যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত।

১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান উপজেলা মুজিবনগর) গ্রামের আমবাগানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিপ্লবী সরকার শপথ গ্রহণ করেছিলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সরকারের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি তখন পশ্চিম পাকিস্তানে কারাগারে বন্দী। তাঁর অনুপস্থিতিতে উপ-রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং দেশে ও বিদেশে এই যুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্রে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সরকার গঠনের পর থেকে অগণিত মানুষ দেশকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

১৭ এপ্রিল ভোরবেলা ছিল বৃষ্টিতে ভেজা। প্রকৃতি যেন একপশলা বৃষ্টিতে ধুয়ে দিয়ে যায় নতুন বাংলাদেশকে। হাজারো এলাকাবাসী এবং দেশি-বিদেশি শতাধিক সাংবাদিক প্রত্যক্ষ করেন সেই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠান। ভাষণ দেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জন্মলাভের যৌক্তিক ও অনিবার্য চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তাঁর ভাষণে।

প্রথমেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিক বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান এ জন্য যে তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে স্বাধীন বাংলার মাটি দেখে যাওয়ার জন্য বহু কষ্ট করে, বহু দূরদূরান্ত থেকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। এরপর তিনি মূল বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন যুদ্ধে লিপ্ত। পাকিস্তানের ঔপনিবেশবাদী নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের অর্জন ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।’

মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিত, পূর্বাপর সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন তাজউদ্দীন আহমদ। ভাষণের একপর্যায়ে বলেন, ‘পাকিস্তান আজ মৃত এবং ইয়াহিয়া নিজেই পাকিস্তানের হত্যাকারী। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য।…প্রতিদিন হাজার হাজার বাঙালি সন্তান রক্ত দিয়ে এই নতুন শিশু রাষ্ট্রটিকে লালিত-পালিত করছেন। দুনিয়ার কোনো জাতি এই নতুন শক্তিকে ধ্বংস করতে পারবে না।’

ভাষণ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তাজউদ্দীন আহমদ। এক বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে এই এলাকার নাম ‘মুজিবনগর’।

আরও ভালো লাগে, সেদিনের অনুষ্ঠানে কাঠের চেয়ারগুলো দিয়েছিলেন সেই মিশনের ফাদার ফ্রান্সিস। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয়, তারই যেন অতুলনীয় নিদর্শন ছিল সেদিন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ন্যায়ের সংগ্রামে ভারত সরকার ও জনগণ যেভাবে দুর্দিনে প্রকৃত বন্ধুর মতো বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, তা-ও স্মরণীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *