মুরাদনগর হাত বাড়ালেই মিলছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল।
মাদকের হাট কুমিল্লার মুরাদনগর
মুরাদনগর অনেকটা মাদকের হাটে পরিণত
কুমিল্লার মুরাদনগর অনেকটা মাদকের হাটে পরিণত হয়েছে। এ এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল। অনেকটা প্রকাশ্যে খুচরা ও পাইকারি দরে এসব মাদক বিক্রি হচ্ছে। স্কুল-কলেজপড়ুয়া তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সবার চোখের সামনেই মাদক সেবন করছে। পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে মাদকসেবী ও দু-একজন কারবারিকে গ্রেপ্তার করলেও মূল হোতাদের অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।তবে গত বৃহস্পতিবার বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ওই এলাকার এক মাদক সম্রাটকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। তার নাম মোমেন মিয়া (৬৫)। সে বাঙ্গরা বাজার থানার রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের মৃত আবদু মিয়ার ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২৪০ বোতল ফেনসিডিল, ২৬ কেজি গাঁজা, তিন হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা ও মাদক বিক্রির দুই লাখ টাকাসহ তাকে গ্রেপ্তার করে বিজিবি।
গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। মাদক সম্রাট মোমেন কুমিল্লার পাঁচ থানায় ২০টি মামলার আসামি হয়েও মাদক বিক্রি করে এরই মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। তার ছেলে সজলও এ কারবারের সঙ্গে জড়িত। বাবা-ছেলে মিলে মুরাদনগর সদর, বাঙ্গরা বাজার, নবীনগর, হোমনা, বাঞ্ছারামপুর ও দেবিদ্বারে মাদক কারবার করে আসছিল।স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারে বেশ কয়েকটি মাদকের স্পট রয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করত মোমেন মিয়া। মুরাদনগর সদরে মুচিবাড়িতে ৩০ বছর ধরে প্রকাশ্যে বাংলা মদ বিক্রি হচ্ছে। অথচ এ বাড়িটি থানা থেকে মাত্র আড়াই শ গজ দূরে। এ স্পট থেকে মুরাদনগরের সদরসহ উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চলের সাত ইউনিয়নে মাদক পাচার করা হয়। অন্যদিকে রামচন্দ্রপুর বাজারে রয়েছে বিশাল দুটি স্পট। একটি স্পটের মালিক হচ্ছে সুকলা। তার বাড়ি ছাগল বাজারের সঙ্গে। আরেকটি স্পট জাপানি বাড়ি নামে পরিচিত। এটি রামচন্দ্রপুর বাজারের পাশে। এ দুই স্পট থেকে হোমনা, বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগরে যাচ্ছে বাংলা মদ। এ ছাড়া নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শিবানীপুর গ্রামে রয়েছে আরেকটি বড় স্পট। মুরাদনগরের উত্তর পূর্ব অঞ্চলসহ দেবিদ্বার থানার মাদকসেবীরা এখান থেকে মাদক কিনে নিচ্ছে।
নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জঃএদিকে নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ রোডে স্পট তৈরি করে শাহীন নামের এক মাদক কারবারি ফেনসিডিল বিক্রি করছে। বিকেল হলেই তরুণরা ঝাঁকে ঝাঁকে মোটরসাইকেলযোগে এসে এখান থেকে ফেনসিডিল কিনছে। শাহীন একাধিকবার ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও ছাড়া পেয়ে আবারও চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ বাসস্টেশনের পেছনেও একটি মাদক বিক্রির স্পট রয়েছে।মুরাদনগরে ইয়াবারও রমরমা বাণিজ্য রয়েছে। দারোরার নয়াকান্দির জালাল ও রামচন্দ্রপুর বাজারের সায়েম বাঙ্গরা বাজার, হোমনা, বাঞ্ছারামপুর, নবীনগর ও দেবিদ্বারে ইয়াবা পাইকারি দরে বিক্রি করছে। একই সঙ্গে তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ইয়াবা হোম ডেলিভারিও দিয়ে থাকে। তা ছাড়া উপজেলার নবীপুর, বাঙ্গরা, মেটংঘর, আন্দিকোর্ট, শ্রীকাইল, জাহাপুর, ছালিয়াকান্দি, পাহাড়পুর, পূর্বধইর, আকবপুর এলাকায়ও হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১৩০-১৪০ জন কারবারি মরণ নেশা মাদক বিক্রি করছে। সাধারণত মোটরসাইকেল নিয়ে মাদকাসক্তরা হাজির হয় এসব স্থানে। এলাকাটি ভারত সীমান্তের কাছে হওয়ায় মাদক কারবারিরা চোরাই পথে সহজেই মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল সংগ্রহ করে বাণিজ্য করে চলছে।স্থানীয়রা বলছে, এলাকার কিছু বখে যাওয়া তরুণ নিয়মিত মাদক সেবন করছে। তা ছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় অনেকেই দাপটের সঙ্গে এ মরণ নেশার বাণিজ্য করছে। ফলে এখানে মাদকসেবীর সংখ্যা ও সামাজিক অবক্ষয় দিন দিন বাড়ছে। মাদকসেবীরা মাদক কেনার জন্য চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাদকের বিষয়ে কোনো আপস নেই। প্রতিদিনই মাদকসহ কেউ না কেউ আটক হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’