fbpx

বার্সেলোনা ক্লাবে ২২ বছর খেলার পর ক্লাব ছাড়ছেন এই ফুটবলার

১২ বছরের ছোট শিশুটি এখন ৩৩ বছর বয়সে পরিপূর্ণ যুবক। তার পায়ের যাদুতে মোহিত পুরো ফুটবল বিশ্ব।

যার বিদায়ে কান্নার রোল উঠেছে পুরো বিশ্বে। যার হাতে ব্যালন ডি’অর ট্রফি দিতে না পারার আক্ষেপও শুনা গেল কর্তৃপক্ষে কথায়। কোপা দেল রের ফাইনালে অ্যাথলেটিকোর ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানো যেনো পরিণত হয়েছিল শোকাবহ আবহ। মাঠ থেকে যখন তিনি ওঠে যান পুরো গ্যালারি তার সম্মানে দাঁড়িয়ে বিদায় জানিয়েছিল।

একজন খেলোয়াড়ের বিদায় বেলায় এর চেয়ে আবেগপূর্ণ পরিবেশ আর কি হতে পারে?পাঠকরা এতক্ষণ হয়ত চিনে ফেলেছেন সেই তারকা খেলোয়াড়টি হলেন স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী তারকা ও ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। এই মৌসুম শেষে তিনি আর বার্সেলোনার হয়ে খেলবেন না এটা আগেই জেনেছিল ফুটবল ভক্তরা।

তবে তার কাছ থেকে শোনার অপেক্ষায় ছিল ভক্তরা। অবশেষে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই ঘোষণা দিলেন তিনি। বার্সেলোনা ক্লাবে ২২ বছর খেলার পর ক্লাব ছাড়ছেন এই ফুটবলার।সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ৩৩ বছর বয়সি ইনিয়েস্তা।

তাই সংবাদ সম্মেলনে বার বার চোখের জল মুছতে দেখা যায় তাকে। ২০১০ সালে স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন ইনিয়েস্তা। বার্সেলোনার হয়ে তিনি এখন পর্যন্ত আটটি লা লিগা শিরোপা, চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ও ছয়টি কোপা দেল রে শিরোপা জিতেছেন। এই মৌসুমেও লা লিগা শিরোপা জয়ের কাছাকাছি রয়েছে বার্সেলোনা।

মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তা বার্সার সোনালী সময়ের সবচেয়ে দ্যুাতি ছড়ানো তিন তারকা। লা ম্যাসিয়া একাডেমি থেকে উঠা আসা এই তিন তারকার পারফরম্যান্স এক সময় মন্ত্রমুগ্ধের মতো আটকে রাখতো দর্শকদের। তাদের সেরা সময়টাতে ট্রেবলের মতো শিরোপা ঘরে তুলে বার্সা।

প্রায় পুরো ক্যারিয়ার শেষে জাভি হার্নান্দেজের পর এবার ন্যু কাম্প ছাড়ছেন ইনিয়েস্তা। আক্রমণে মেসির মুড়ি মুড়কির মতো গোল করার পেছনে বলের যোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এ তারকার।বার্সেলোনা ছেড়ে চাইনিজ ক্লাব চংকিং দাংদাই লিফানে যোগ দিতে পারেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। সম্প্রতি ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট গং দাক্সিং স্বীকার করেছিলেন যে, ইনিয়স্তার সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে।

শুক্রবার ইনিয়েস্তা বলেন, বার্সেলোনায় এটি আমার শেষ মৌসুম। আমি দীর্ঘদিন ধরে চিন্তাভাবনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মতে, বার্সেলোনা বিশ্বের সেরা ক্লাব। এই ক্লাব আমাকে সবকিছু দিয়েছে। বার্সেলোনার হয়ে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। বার্সেলোনাকে বিদায় বলার সঙ্গে আগামী মৌসুমে ইউরোপেও না খেলার কথা জানিয়েছেন ইনিয়েস্তা।ক্লাব থেকে শুরু করে সতীর্থ এবং যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন সবার প্রতি বিদায়বেলায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন ইনিয়েস্তা।

আলাদা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সমর্থক এবং পরিবারের আপনজনদের, ক্লাব, সতীর্থ, যাদের সঙ্গে ছিলাম-সবাই আমাকে ভালো থাকতে সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ সমর্থকদের, যারা এত ভালোবাসা দিয়েছেন। আমার বাবা-মা, বোন…২২ বছর আগে আমরা একটি গাড়িতে করে এখানে এসেছিলাম, আজ তারা আবারও আমার সঙ্গে।

এখানে আমি জীবনের সেরা মানুষটার সঙ্গে, যে আমাকে প্রতি মুহূর্তেই আনন্দিত রাখে, আমার স্ত্রী। সঙ্গে আমাদের তিন সন্তান। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।১৬ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ৩১টি শিরোপা জেতা ইনিয়েস্তা সফল জাতীয় দলের হয়েও। ২০১০ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি ২০০৮ ও ২০১২ সালে জিতেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এখন পর্যন্ত ১২৫টি ম্যাচ খেলা মাঝমাঠের এই খেলোয়াড়কে দেখা যেতে পারে রাশিয়া বিশ্বকাপেও।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ইনিয়েস্তার বলার মতো অনেক স্মৃতিই আছে। তবে বার্সেলোনার জার্সি গায়ে ২০০২ সালের অক্টোবরে বেলজিয়ান ক্লাব ব্রুগের বিপক্ষে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচটি একটু বেশিই স্মরণীয় বলে জানালেন ইনিয়েস্তা।এই বার্সা লিজেন্ড বলেন, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়েছি।

একজন ব্যক্তি হিসেবে এই ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছি। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। এটা দারুণ ব্যাপার। এখানে অনেক স্মৃতি আছে। কোনো একটাকে বেছে নেওয়াটা কঠিন। তবে প্রথম ম্যাচটাই আমি বেছে নেবো। এতে স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। আমার ক্যারিয়ার জুড়ে আছে অনেক শিরোপা; আছে গর্ব করার মতো অনেক মুহূর্ত।

তবে মূল দলের হয়ে অভিষেক আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।লিগে আর ৫টি ম্যাচ আছে বার্সেলোনার। সেই ৫টি ম্যাচই হবে বার্সেলোনার জার্সি তার শেষ। এরপরই বার্সেলোনা পরিচয়ের পাশে লেখা হয়ে যাবে ‘সাবেক’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *