fbpx

প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

৪ মার্চ বৈঠক

প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

৮ মাসের মাথায় আবারও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে এ বৈঠকের আয়োজন বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ২ জুলাই শেখ হাসিনা সচিবদের নিয়ে সর্বশেষ বৈঠক করেন।

উন্নয়ন কার্যক্রমের তালিকা তৈরির নির্দেশ

এ বৈঠক সামনে রেখে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জোর তৎপরতা চলছে। বিশেষ করে সরকারের বিগত দিনের উন্নয়ন চিত্র, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ও ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের অবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুর সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ চলছে। ইতিমধ্যে ২৬ দফার তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এ বিষয়সহ ২৬টি নির্দেশনা দেন তিনি। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২৩ জুলাই সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে চিঠি দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। চিঠিতে বলা হয়- ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি এসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রামাণ্যচিত্র আকারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ২৬টি বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চেয়ে ৮ ফেব্র“য়ারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের চিঠি দেয়া হয়েছে।

চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার

চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো একতরফা নির্বাচন করতে চায় না সরকার। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এমতাবস্থায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কাজ চলছে। জনগণের ভোট পেতে হলে দৃশ্যমান কিছু থাকতে হবে। পাশাপাশি যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। এসব বিষয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক সচিব যুগান্তরকে বলেন, সরকারের উন্নয়নমূলক দৃশ্যমান অনেক কার্যক্রম রয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মতে এসব কার্যক্রম গণমাধ্যমে তুলে ধরা হলে আগামীতে আবারও দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন তারা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকারের সময় বেশি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস। এ কারণে সচিব সভায় জনপ্রশাসনকে আরও বেশি জনবান্ধব ও সক্রিয় করাসহ সচিবদের উদ্দেশে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও তিনি ২৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

জানতে চাওয়া হয়েছে ২৬ নির্দেশনার অগ্রগতি :

গত সচিব সভায় ৭১ জন সচিব অংশ নেন। সেখানে ১৬ জন সচিব বক্তব্য রাখেন। তাদের ২৬ দফা নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে রয়েছে-

@ রফতানি আয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর পরিচালনার জন্য কাস্টমস ও ব্যাংকিং কার্যক্রম সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা;

@ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকাসহ পাহাড় ও টিলা-অধ্যুষিত এলাকার পরিবেশ রক্ষা করা;

@ ভূমিধস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালনে আরও আন্তরিক হওয়া এবং দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য পর্যাপ্ত জরুরি অর্থ বরাদ্দ রাখা;

@ রাস্তাঘাট নির্মাণের সময় প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ ও রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষ রোপণ,

@ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন, সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা;

@ অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসূচি গ্রহণ করা;

@ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ৩ মাস প্রকল্পের পেপারওয়ার্ক সম্পন্ন করে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু এবং একই সঙ্গে কাজের গুণগতমানের বিষয়টি নিশ্চিত করা;

@ বাজেট প্রাপ্তির পরপরই অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প বাছাইপূর্বক তা বাস্তবায়ন করা;

@ প্রকল্প প্রণয়নে ব্যাংক সুদের হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর’ নির্ধারণ করা;

@ পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রকল্পের মালামাল পরিবহনে আন্তঃদেশীয় সমস্যার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে দ্রুততার সঙ্গে অবহিত করা;

@ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার আরও বাড়ানো; অর্থবছরের শেষ দিকে তাড়াহুড়া না করে বছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে ব্যবস্থা নেয়া;

@ সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া;

@ সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের সেবা ও শুদ্ধাচার ব্যবস্থা জোরদার করা;

@ ভালো কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কার ব্যবস্থা কার্যকর করা;

@ সেবাদাতা সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি কমানো;

@ আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে সবার ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা;

@ অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়া;

@ সংবিধান, জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি এবং সংসদ পরিচালনা-সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিষয়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া;

@ জঙ্গিবাদ দমন ও মাদক নিয়ন্ত্রণেও মাঠপর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এসব ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও এসডিজির সফল বাস্তবায়নে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষিজমি নষ্ট না করে এলাকাভিত্তিক ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ে তোলারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

এছাড়া বিচারাধীন সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনার জন্য বর্তমান ব্যবস্থার পাশাপাশি অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে ও মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যেসব জেলা নিজ উদ্যোগে তহবিল গঠন করে ভিক্ষুকমুক্ত করার পদক্ষেপ নেবে, সেই তহবিলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *