পিতার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছি: রাহুল গান্ধী
আমি ও প্রিয়াঙ্কা পিতা রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছি
ভারতে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, তিনি ও তার বোন প্রিয়াঙ্কা তাদের পিতা রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদের ‘সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা’ করে দিয়েছেন।
সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৯৯১ সালের মে মাসে চেন্নাইয়ের কাছে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন – আর সেই হত্যাকাণ্ডের পেছনে শ্রীলঙ্কার তামিল জঙ্গি সংগঠন এলটিটিই-র হাত ছিল বলেই ধারণা করা হয়।
সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অনেকেই এখনও তামিলনাডুর জেলে বন্দী, কিন্তু সিঙ্গাপুরের এক সভাতে রাহুল গান্ধী বলেছেন, তাদের প্রতি তার আর বিন্দুমাত্র বিদ্বেষও অবশিষ্ট নেই।
বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলেছেন
বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, রাহুল গান্ধীর এই অনুভূতিতে কিছু যায় আসে না, কারণ দেশের আইন আইনের পথেই চলবে।
সাতাশ বছর আগের ঘটনা
প্রায় সাতাশ বছর আগে চেন্নাইয়ের কাছে শ্রীপেরুমপুদুরে ভোটের প্রচার চালাতে গিয়ে রাজীব গান্ধী যখন এলটিটিই জঙ্গীদের হাতে মারা যান, তার ছেলে রাহুলের বয়স তখন একুশও হয়নি। বোন প্রিয়াঙ্কা আরও ছোট।
সেই রাহুল গান্ধী আজ যখন কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট, তাকে সিঙ্গাপুরের একটি প্রকাশ্য সভায় সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছিল পিতার হত্যাকারীদের তিনি কি ক্ষমা করতে পেরেছেন?
জবাবে রাহুল বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে বলেন, “প্রথম দিকে বেশ কয়েক বছর আমরা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ছিলাম – ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম, আঘাত পেয়েছিলাম। কিন্তু কীভাবে যেন … আজ পুরোপুরি ক্ষমা করে দিয়েছি।”
রাহুল গান্ধীর উপলব্ধিটা
“আসলে একদিন এই উপলব্ধিটা হয়, যে যখনই এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে – সেটা আসলে নানা ধরনের ভাবনা, শক্তি, বিভ্রান্তির সংঘাতের ফলেই ঘটে।” রাজনীতিতে কিছুটা আচম্বিতেই আসা তার বাবা-কে যে একদিন মৃত্যুবরণ করতেই হবে, সেটাও রাহুল অনেক আগে থেকেই জানতেন বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু যে এলটিটিই নেতা ভি প্রভাকরণ তার পিতার মৃত্যুর জন্য দায়ী, ২০০৯তে তার মৃতদেহ টিভিতে দেখে তিনি এতটুকুও খুশি হতে পারেননি।
মি গান্ধীর কথায়, “তার দেহটা ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে আমার দুটো জিনিস মাথায় এসেছিল। এক, এভাবে ওরা ওকে অপমান করছে কেন? আর দুই, সত্যিই ওর জন্য, ওর সন্তানদের জন্য আমার খারাপ লাগছিল।”
“আমি নিজে তো মুদ্রার অন্য পিঠটাও দেখেছি, তাই বুঝতে পেরেছিলাম এই দেহটার আড়ালেও একটা মানুষ আছে, তার পরিবার আছে, কাঁদতে থাকা ছেলেমেয়েরা আছে।”
বোন প্রিয়াঙ্কাকে ফোন
টিভিতে প্রভাকরনের দেহটা দেখার পরই তিনি ফোন করেছিলেন বোন প্রিয়াঙ্কাকে। ফোনে রাহুল বলেন, “আমাদের পাপা-কে যে হত্যা করেছে তার মৃতদেহ দেখলে বোধহয় আমার খুশি হওয়ার কথা, কিন্তু আমি খুশি হতে পারছি কই? প্রিয়াঙ্কাও তখন বলল ওরও ঠিক একই ধরনের অনুভূতি হয়েছে।”
এর আগে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মা সোনিয়া গান্ধীর হস্তক্ষেপেই আদালত তার স্বামীর হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করেছে। প্রিয়াঙ্কা নিজে একাধিকবার তামিল নাডুর জেলে গিয়ে তার বাবার অন্যতম হত্যাকারী নলিনী মুরুগনের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কথাবার্তা বলেছেন।
কিন্তু এত বছর বাদে তামিলনাডুর প্রায় সব রাজনৈতিক দল ওই হত্যাকারীদের মুক্তি চাইলেও তা এখনও সম্ভব হয়নি। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী অবশ্য মনে করছেন, রাহুলের ব্যক্তিগত অনুভূতিরও এখানে কোনও দাম নেই।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, “রাহুল তাদের ক্ষমা করলেন কি না-করলেন রাষ্ট্র তার পরোয়া করে না। মনে রাখতে হবে, তারা একটা অপরাধ করেছেন বলেই সুপ্রিম কোর্ট তাদের ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। পরে সোনিয়া রাষ্ট্রপতিকে চিঠি লিখে সেটা লাঘব করান।”
“এখন আবার তাদের মুক্তির দাবিতে হইচই হচ্ছে। আরে, রাজীব গান্ধীর দোষটা কি ছিল? দেশের পার্লামেন্টে গৃহীত নীতি মেনে তিনি শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় সেনা পাঠিয়েছিলেন – যার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছিল। তো তার কোনও বিচার হবে না?”
তবে আইনের দৃষ্টিতে রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের যতটুকুই মূল্য থাক – পিতার হত্যাকারীদের নি:শর্তে ক্ষমা করার কথা ঘোষণা করে তিনি এই উদারতার ভাল রাজনৈতিক মূল্য পেতে পারেন বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা।