fbpx

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অমান্য

এননটেক্স নামের স্বল্পপরিচিত এক প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ‘একক গ্রাহকের ঋণ সীমা’ অমান্য করে বিপুল অঙ্কের এ অর্থ দেওয়া হয়েছে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল সময়ে। এননটেক্সের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ আগ থেকে কয়েক দফায় বিভিন্ন নির্দেশনা দিলেও তা অমান্য করেছে জনতা ব্যাংক। সার্বিক বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে গত ৪ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি চিঠি দিলেও তার কোনো জবাব দেয়নি জনতা ব্যাংক। এদিকে অনিয়মের মাধ্যমে এননটেক্সকে বিপুল অঙ্কের এ ঋণ দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, এননটেক্স গ্রুপকে ২০১০ সালে ৮০ কোটি টাকার ঋণ দেয় জনতা ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ। পরের বছরই প্রতিষ্ঠানটির মোট দায় একক গ্রাহকের ঋণ সীমা অতিক্রম করে। নিয়ম অনুযায়ী, একক গ্রাহকের ঋণ সীমা অতিক্রম করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হয়। তা না নিয়ে বরং নতুন করে আরও ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। এর পর ২০১৪ সালে এননটেক্সের মালিকানাধীন মেসার্স গ্যালাক্সি সোয়েটার ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিশেষ বিবেচনায় নবায়নে অনাপত্তির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসে। তখন মোট দায় একক গ্রাহকের ঋণসীমার মধ্যে নামিয়ে আনার শর্তে অনাপত্তি দেওয়া হয়। তবে শর্ত না মেনে উল্টো ১৮০ কোটি টাকার সিসি এবং ১২০ কোটি টাকার এলসি সীমা অনুমোদন করে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের মোট মূলধন ছিল দুই হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। আর এননটেক্স গ্রুপের মালিকানাধীন মেসার্স গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্নসহ ২২টি প্রতিষ্ঠান তিন বছরে ৮১৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার পর বর্তমানে তার কাছে ব্যাংক পাবে পাঁচ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদ্যমান মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের বিপরীতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা এখন খেলাপি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলা হয়, গ্রাহকের ২২টি প্রতিষ্ঠানের নামে তিন হাজার ৫২৮ কোটি টাকার ফান্ডেড ও এক হাজার ১২০ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ১১টির অনুকূলে এখনও ‘প্রকল্প পরিপূরক প্রতিবেদন’ ইস্যু হয়নি। ফলে আদৌ এসব ঋণের সদ্ব্যবহার হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত নয়। একজন গ্রাহকের কাছে বিপুল অঙ্কের ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে কারা যুক্ত ছিল তা জানাতে বলা হয়েছে। আর এ ঋণ কেন্দ্রীভূত করার ফলে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় ব্যাংকের ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন ব্যবস্থা কার্যকর নয়। এ অবস্থায় চিঠি পাওয়ার সাত কর্মদিববসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালার আওতায় ২০১৫ সালে এননটেক্স গ্রুপের এক হাজার ৯৪ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন করে জনতা ব্যাংক। এই পুনর্গঠিত ঋণের কিস্তি না পেয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রুপটিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এরপর পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত না করেই বেলুনিং পদ্ধতিতে এসব ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রস্তাব যায়। এ সুবিধার মানে হলো, এখন শুধু আসলের অংশ হিসাবে কিস্তি পরিশোধ করা হবে। পরে সুদসহ বাকি কিস্তি দেওয়া হবে।

অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের পরে গত ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান। তার নেতৃত্বাধীন পর্ষদ বারবার এননটেক্সের সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করতে ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষকে বললেও বারবার সময় নেয় তারা। কয়েক দফা সময় নেওয়ার পর গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর পর্ষদের সভায় তা উত্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিস্থিতি সন্তোষজনক না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পর্ষদ। এর মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর গত ১৭ জানুয়ারি এননটেক্সের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণসহ অন্য ব্যাংকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *