fbpx

কিমের অসুস্থতা নাকি ভান?

উত্তর কোরিয়ার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা কিম জং উন এক রহস্যময় চরিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচক ও ঠোঁটকাটা স্বভাবের এই নেতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তাকে ঘিরে সবসময়ই একটি রহস্য বিরাজ করে।

৩৬ বছর বয়সী কিমের চুলের ছাঁটের মতো রাষ্ট্রপরিচালনার নীতির পরতে পরতে রয়েছে ভিন্নতা। কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়ায় তার কথাই শেষ কথা। সেখানে মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই, বাকস্বাধীনতাও নেই।

কিম জং উনকে নিয়ে সম্প্রতি একের পর এক গুজব বের হচ্ছে– এবং তা আসছে একাধিক সূত্র থেকে। এ থেকে মনে হচ্ছে যে, উত্তর কোরিয়ায় হয়তো সত্যি কিছু একটা ঘটেছে। দেশটির নেতার অবস্থান কেউ স্পষ্ট করছে না। তার অন্তর্ধান নিয়ে নানামুনির নানা প্রশ্ন।

শনিবার ছিল কোরিয়ান পিপলস রেভোলুশনারি আর্মির ৮৮তম বার্ষিকী। প্রতি বছর উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী দিনটি উদযাপন করে থাকে। এবার এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি কিম জং উনকে।

গত ১৫ এপ্রিল ছিল উত্তর কোরিয়ার সূর্য দিবস বা ডে অব দ্য সান, যা কিম জং উনের পিতামহ এবং উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের জন্মদিন। সেদিনের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন না কিম জং উন।

ফলে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান নেতার কী হয়েছে তা নিয়ে গুজবের ডালপালা ছড়াচ্ছে চারদিকে।

দুদিন আগে খবর পাওয়া গেছে যে, চীন থেকে ডাক্তার পাঠানো হয়েছে কিমের চিকিৎসার জন্য। এ বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের বেইজিং ব্যুরোর প্রধান অ্যানা ফিফিল্ড বিবিসিকে বলেন, উত্তর কোরিয়া এমন একটি দেশ যেখান থেকে সবসময় গুজব আসছে। সেখানকার কোনো সামরিক কর্মকর্তা মারা গেছেন বলে হয়তো দক্ষিণ কোরিয়ায় খবর বের হলো– আর তার পরই দেখা গেল সেই কর্মকর্তা দিব্যি জীবিত হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছেন। তাই এসব গুজব নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। উত্তর কোরিয়া এ ক্ষেত্রে একটা ব্ল্যাক হোলের মতো।

কিম জং উনকে নিয়ে বই লেখা অ্যানা ফিফিল্ড বলছেন, তবে এটা বলতেই হবে যে, কিম জং উনকে নিয়ে সম্প্রতি একের পর এক গুজব বের হচ্ছে – এবং তা আসছে একাধিক সূত্র থেকে। এ থেকে মনে হচ্ছে যে উত্তর কোরিয়ায় হয়তো সত্যি কিছু একটা ঘটেছে।

অ্যানা ফিফিল্ড বলছেন, এমন মনে করার কারণ- উপরোক্ত দুটি অনুষ্ঠানে কিম জং উনের অনুপস্থিতি। কারণ এটি খুবই অস্বাভাবিক। তবে ঠিক কী ঘটেছে তা এখনও অজানা।

অসুস্থতা নাকি স্রেফ ছুটি

সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদনে বলেছে, কিম পরিবারের একটি অবকাশযাপন কেন্দ্রে কিছু দিন আগে এমন একটি ট্রেন দেখা গেছে, যা ওই পরিবার ব্যবহার করে থাকে। উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের ওই অবকাশযাপন কেন্দ্রটি কিম জং উনের খুবই প্রিয়। ফলে এর অর্থ হতে পারে তিনি হয়তো সেখানে কোনো অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, অবশ্য এমনও হতে পারে যে, কিম সেখানে সি-বিচে ছুটি কাটাচ্ছেন। অথবা হয়তো সেখানে কোনো উপগ্রহ ব্যবস্থা স্থানান্তর করা হচ্ছে, যা তারা প্রায়ই করে থাকে। ফলে আসলেই ঠিক কি হচ্ছে, তা বলা কঠিন।

কিম জংকে সবশেষ প্রকাশ্যে দেখা যায় গত ১১ এপ্রিল। যারা সেই ছবি দেখেছেন, তারা বলেন, তাকে দেখে তিনি ঠিক সুস্থ আছেন বলে মনে হচ্ছে না। কিম জং উন এখন অনেক মোটা হয়ে গেছেন। তার জীবনযাপনও ঠিক স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করা হয় না।

মৃত্যু গুজব নাকি সত্যি

হার্টে জটিল অস্ত্রোপচারের পর সম্প্রতি গুঞ্জন রটে যায় যে, উত্তর কোরিয়ার এই একনায়ক আর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমও কিমের বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। কিম জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এমন সংবাদ ছেপেছে তারা।

দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি এনকে গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন গত ১২ এপ্রিল কার্ডিওভাসকুলারের অস্ত্রোপচার করেছেন বলে খবর দেয়। উত্তর কোরিয়ার অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে কিমের অসুস্থতার এই খবর দেয় ডেইলি এনকে। তবে পরে অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিমের আশঙ্কাজনক অবস্থার খবর প্রকাশ পায়।

স্নপস ডট কমের খবরে বলা হয়েছে, উনের অস্ত্রোপচার সফল হয়নি। এমনকি তাকে অচেতন করেই অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ কারণে তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি।

জাপানি সংবাদমাধ্যম সুখান গেন্দাই, কিমের হার্ট অপারেশনের বিস্তারিত জানিয়ে বলছে, অপারেশনের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা কিম জং উনকে অজ্ঞান করেননি। আর অপারেশনের সময় তিনি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই অস্ত্রোপচার বিলম্বিত হওয়ার একপর্যায়ে অচেতন অবস্থায় চলে যান কিম।

এসব কারণে মনে করা হচ্ছে, এসব গুজব হয়তো কিছুটা সত্যি আছে। যেমন এক খবরে বলা হয় যে, কিমের রক্তনালিতে স্টেন্ট বা রিং পরানো হয়েছে।

এখন বিশ্বব্যাপী যে করোনাভাইরাস মহামারী চলছে, তা নিয়ে উত্তর কোরিয়া বলেছে- সেখানে কেউ আক্রান্ত হয়নি। তবে সংখ্যায় কম হলেও কিছু লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। উত্তর কোরিয়ার কিছু জেনারেলকে কিমের আশপাশে থাকার সময় মাস্ক পরতে দেখা গেছে। ফলে তার অসুস্থতার গুজবের পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে বলে মনে করেন অ্যানা ফিফিল্ড।

এর আগেও শারীরিক সমস্যার কারণে জনসমক্ষে না আসার ইতিহাস কিমের রয়েছে। তবে এবার জল্পনার ডালপালা এতটাই ছড়িয়েছে যে, ধারণা করা হচ্ছে– তিনি মারা গেছেন কিংবা মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

তার আবার এমন উধাও হয়ে যাওয়ারও ইতিহাস আছে। এর আগে ২০১৪ সালে প্রায় এক মাস কোনো খবর ছিল না। হঠাৎ একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সৈকতে হাঁটছেন।

বিবিসির বিশ্লেষণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *