আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ এখন স্ট্রবেরি ভিলেজ
জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাট জেলা সদরের জামালপুর ও আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ এখন স্ট্রবেরি ভিলেজ হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলার প্রায় ১৩০ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করলে খরচ হয় ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। সেখানে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। ফলে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকছেন স্ট্রবেরি চাষের দিকে।
এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম ২০১০ সালে শেষের দিকে রুহুল আমিন ইংল্যান্ড থেকে ফেস্টিভ্যাল হাইব্রিড জাতের স্ট্রবেরি নিয়ে এসে পরীক্ষামূলকভাবে স্বল্প-পরিসরে চাষ শুরু করেন। তার পরের বছর ২০১২ সালে সেখান থেকে চারা সংগ্রহ করে বাণিজ্যিকভাবে জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক প্রথম তিন বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সর্বপ্রথম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হন।
কৃষক আব্দুল খালেকের সফলতা দেখে পরের বছর একই এলাকার চার শিক্ষিত বেকার যুবক হামিদ, ওয়াদুদ, বাবু, রবিউল কোন প্রকার ব্যাংক ঋণ বা সরকারি কোন সহযোগিতা ছাড়াই শুধু নিজেদের উদ্যোগে প্রায় ১০ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চারা সংগ্রহ করে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। সে বছর খরচসহ স্ট্রবেরি চাষে তাদের ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং তারা লাভও করেন ১৭ লাখ টাকা। সেই থেকে এ এলাকায় স্ট্রবেরি চাষের বিপ্লব শুরু হয়।
নভেম্বর মাস স্ট্রবেরি চাষের উপযুক্ত সময়, জানুয়ারিতে ফল ধরে এবং ফল তোলার কাজ চলতে থাকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। প্রতিদিন এ অঞ্চলের বিভিন্ন জমি থেকে ৫ হাজার ২০০ কেজি ও ৫ হাজার ৫০০ কেজি স্ট্রবেরি ৬০-৭০ টাকা দরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। স্ট্রবেরি চাষ বৃদ্ধির ফলে এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঈর্ষণীয় সাফল্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে এই ফল চাষ ছড়িয়ে পড়ছে।
জামালগঞ্জ এলাকার স্ট্রবেরি চাষী আহসান কবীর এ্যাপ্লব ও রাজেশ কুমার জানান, ফলনের প্রথম দিকে স্ট্রবেরি কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পাইকারী বিক্রি হলেও ফলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার না থাকায় স্ট্রবেরি কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়। এতে লোকসান না হলেও বেশী লাভ থাকছে না।
জামালপুরের স্ট্রবেরি চাষী কৃষক হামিদ, বাবুসহ অনেকে জানান, সঠিক বাজার সৃষ্টি করা গেলে স্ট্রবেরি চাষে কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব। জামালগঞ্জের ৬ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করা কৃষক বাবু জানান, সম্ভাবনাময় এই ফল শুধু দেশের ছোট বাজারের কারণে ব্যাপকতা পাচ্ছে না। যদি জুস কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসেন তবে স্ট্রবেরি চাষে জেলার আরও কৃষকরা এগিয়ে আসবেন।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, আবহাওয়া স্ট্রবেরি চাষের বেশ উপযোগী। তাছাড়া অধিক লাভজনক আর দেশ বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকায় এর চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও দাবি কৃষি বিভাগের।