মাত্র পাওয়া খবরঃ
১৯ ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়ে এখন দুই অঙ্কের
চলতি বছরের শুরু থেকেই বাড়ছে ঋণের সুদহার।
বিনিয়োগ খরার কারণে কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ঋণের সুদহারে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল। উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে এক অঙ্কে (১০ শতাংশের নিচে) নেমে আসে সুদহার। তবে দুই মাস ধরে ঋণের সুদহার আবার বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, ১৯ ব্যাংকের ঋণের সুদহার এখন দুই অঙ্কের ঘরে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ঋণ চাহিদা বৃদ্ধি, তারল্য সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) পরিপালনের কঠোরতা আরোপ করায় ঋণের সুদহার বাড়ছে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ঋণের সুদহার বাড়ায় ব্যাংকগুলো। ফেব্রুয়ারিতেও বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত সুদহার বাড়ানো হয়েছে। চলতি মাসে আরও বেশ কিছু ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়াবে বলে জানা গেছে। গত বছর আট থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ পাওয়া গেলেও চলতি বছরে ঋণ পেতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদহার কিছুটা কম হলেও অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে ১৬টি ব্যাংকের ঋণের সুদহার দুই অঙ্কে পৌঁছলেও জানুয়ারিতে এসে ১৯টি ব্যাংকের ঋণের সুদহার দুই অঙ্কে পৌঁছয়। মেয়াদি, চলতি, এসএমই, শিল্প এবং ভোক্তাসহ সব ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ সুদ নিচ্ছে এবি ব্যাংক; ১১ দশমিক সাত শতাংশ ন্যাশনাল ব্যাংক, ১০ দশমিক ২০ শতাংশ আইএফআইসি ব্যাংক; ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ ঢাকা ব্যাংক; ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ ওয়ান ব্যাংক; ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ এক্সিম ব্যাংক; ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক; ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রিমিয়ার ব্যাংক; ১২ দশমিক সাত শতাংশ ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক; ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ ব্র্যাক ব্যাংক; ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক; ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক; ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ মেঘনা ব্যাংক; ১০ দশমিক ২০ শতাংশ মিডল্যান্ড ব্যাংক; ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ফারমার্স ব্যাংক; ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ ইউনিয়ন ব্যাংক; ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ এনআরবি ব্যাংক; ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে মধুমতি ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেওয়ার কারণে এবং নতুন করে আমানত না আসায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এটি মোকাবিলায় ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আমানতের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে, যার কারণে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহারও কমাতে পারছে না। আমরাও চাই ঋণের সুদহার কমাতে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের সরকারি আমানত দিতে হবে।’
জানা গেছে, গত বছরে দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই ব্যাপক হারে বেড়েছে ঋণ বিতরণ। গত ডিসেম্বর বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া নভেম্বরে ১৯ দশমিক শূন্য ছয়, অক্টোবরে ১৮ দশমিক ৬৩, সেপ্টেম্বরে ১৯ দশমিক ৪০, আগস্টে ১৯ দশমিক ৮৪ ও জুলাইয়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ফলে অধিকাংশ ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়ে যায়। পাশাপাশি আমদানি দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলো।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমা কমিয়ে দিয়েছে, যা ডিসেম্বরের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। নতুন করে যেসব ব্যাংক এই সীমা অতিক্রম করছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমেছে ব্যাংকগুলো। ফলে আমানতের সুদহারও বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। আগে যেখানে তিন থেকে ছয় শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করত, এখন আট থেকে ১২ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে ব্যাংকগুলো। আমানতের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ঋণের সুদহার।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘নতুন বছরের শুরু থেকেই ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়েছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি।’
সূত্র: শেয়ার বাজার