বাংলাদেশের পক্ষে দ্রততম ফিফটি এখন মোস্তাফিজের
আগের বলটায় ছিল এলবিডব্লুর জোরালো আবেদন। আউটও দিয়ে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন উপুল থারাঙ্গা। পরের বলে আর বাঁচতে পারেননি শ্রীলঙ্কান ওপেনার। থারাঙ্গাকে পরিষ্কার বোল্ড করেই ওয়ানডেতে উইকেটের ‘ফিফটি’ পূর্ণ করলেন মোস্তাফিজ।
ভয়ংকর কাটারগুলো এতটাই বাঁক নিচ্ছে, শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা কখনো কখনো কোনো কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না! থিসারা পেরেরাকে করা একটা বল তো লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে পিচ করে বেরিয়ে গেল অফ স্টাম্পে বাতাস লাগিয়ে! মোস্তাফিজুর রহমানের কী আফসোস!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত ম্যাচটা একটু ‘আফসোস’ নিয়ে শেষ করেছিলেন মোস্তাফিজ। মাশরাফি বিন মুর্তজা তাঁকে আনতে চাননি বোলিংয়ে। তবুও নিজ আগ্রহে এসেছিলেন, যদি ওয়ানডেতে উইকেটের ফিফটি হয়ে যায়। আজ সেটি হয়ে গেল একটু নাটকের জন্ম দিয়েই।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম ৫০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি এখন মোস্তাফিজেরই। বাঁহাতি পেসারের লেগেছে ২৭ ম্যাচ (২৬ ইনিংস)। আগের রেকর্ডটি ছিল আবদুর রাজ্জাকের। বাঁহাতি স্পিনারের লেগেছিল ৩২ ওয়ানডে।
বাংলাদেশের রেকর্ড হলেও বিশ্ব রেকর্ড থেকে মোস্তাফিজ বেশ পিছিয়ে। ১৯ ওয়ানডেতে উইকেটের ফিফটি করে এই তালিকায় সবার ওপরে অজন্তা মেন্ডিস। ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ১১ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ বাংলাদেশের রেকর্ডটা নিজের তো করবেনই, আশা জাগিয়েছিলেন বিশ্ব রেকর্ডটাই নিজের করে নেওয়ার। কিন্তু শুরু যতটা দুর্দান্ত ছিল, মাঝে নানা চোটাঘাতে ব্যাহত হয়েছে বাঁহাতি পেসারের অগ্রযাত্রা। আজকের ফাইনালের আগের ৮ ওয়ানডেতে তাঁর উইকেটসংখ্যা মাত্র ৬টি।
শুধু বাংলাদেশের রেকর্ড হলেও বিশ্বের এই তালিকায় অনেক রথী-মহারথীকে পেছনে ফেলেছেন মোস্তাফিজ। ৫০ উইকেট পেতে স্যার অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়ের গার্নার, ম্যালকম মার্শাল, ইয়ান বিশপ, আবদুল কাদির, সাকলায়েন মুশতাক, গ্লেন ম্যাকগ্রা, শোয়েব আখতারকে মোস্তাফিজের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলতে হয়েছে।
চার ক্যারিবীয় কিংবদন্তির কথা ধরুন। রবার্টসের লেগেছিল ২৯ ম্যাচ, বিশপের ২৮, গার্নারের ৩৪ আর মার্শালের ৪০ ম্যাচ। পাকিস্তানি গ্রেটদের মধ্যে কাদিরের লেগেছিল ৩৩, সাকলায়েনের ২৮, শোয়েবের ২৯ ম্যাচ। অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি ম্যাকগ্রার লেগেছিল ৩৭ ম্যাচ।
মোস্তাফিজের বিষাক্ত কাটার, বিভ্রান্তিকর স্লোয়ার এখন ব্যাটসম্যানরা অনেক সতর্কভাবে খেলেন। রান নেব না, তবুও উইকেট দেব না—এই ভাবনায় ব্যাটসম্যানরা ‘দ্য ফিজে’র বিপক্ষে প্রচুর ডট খেলেন। এবার ত্রিদেশীয় সিরিজে দুর্দান্ত বোলিং করলেও উইকেট প্রাপ্তিতে বেশ পিছিয়ে মোস্তাফিজ। অবশ্য তাতে লাভ হচ্ছে বাংলাদেশেরই!
মোস্তাফিজকে বেশি সতর্ক হয়ে খেলতে গিয়ে শ্লথ হয়ে পড়ার রানের চাকা সচল করতে গিয়ে অন্য বোলারদের উইকেট দিচ্ছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা। আজ যেমন সেটি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
নতুন করে ফিরে আসা মোস্তাফিজের সামনে দীর্ঘ পথ। দ্রুততম ৫০ না হোক, দ্রুততম ১০০ উইকেটের রেকর্ডে নিজের নাম লেখানোর ভালো সুযোগ আছে তাঁর। রেকর্ড এখন মিচেল স্টার্কের, ৫২ ম্যাচে। এই রেকর্ড ছুঁতে হলে পরের ২৫ ম্যাচে ৫০ উইকেট পেতে হবে ফিজকে।