নার্সারির জঙ্গলে নিয়েই গলায় রশি পেঁছিয়ে চলে নির্মম নির্যাতন
নার্সারির জঙ্গলে নিয়েই গলায় রশি পেঁছিয়ে চলে নির্মম নির্যাতন। নির্যাতনে নাক-মুখ নিয়ে ফেনা বের হলে অচেতন হয়ে পড়ে :৪ কিশোরের ভয়ঙ্কর কান্ড!
চট্টগ্রাম ব্যুরো : স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ছেলেটিকে তুলে নেয় তারা। নার্সারির জঙ্গলে নিয়েই গলায় রশি পেঁছিয়ে চলে নির্মম নির্যাতন। নির্যাতনে নাক-মুখ নিয়ে ফেনা বের হলে অচেতন হয়ে পড়ে সে। অপরহণকারীরা নিশ্চিত হয় ছেলেটি ‘মারা’ গেছে। ওই অবস্থায় তাকে সেখানে ফেলে রেখে ফিরে যায় তারা। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলেটির বাসায় ফোন দেয়। মুক্তিপণ হিসাবে দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা। আর না দিলে ছেলের লাশ পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি।
এমন ভয়ঙ্কর কাÐ যারা ঘটিয়েছে তারা পেশাদার কোন অপরাধী নয়, কিশোর ও উঠতি যুবক। নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র তারা। মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা দেওয়ার ফাঁদ পেতে গতকাল (রোববার) চারজনকে পাকড়াও করে পুলিশ। তবে ভাগ্যক্রমে অপহরণকারীদের আস্তানা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় ছেলেটি। সে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ বলছে, নগরীতে কিশোর অপরাধীদের যে ভয়ঙ্কর বিস্তার ঘটছে এ ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ মুক্তাদির রহমান, মোঃ শাকিল, এ আল কিবরিয়া ও শাহিদ আজ-মাঈন। তাদের সবার বয়স ১৮ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে মুক্তাদির নগরীর সেন্ট্রাল পাবিলক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শাকিল নগরীর ইসলামীয়া ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। কিবরিয়া সরকারি সিটি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ও মাঈন রেলওয়ে বহুমুখী স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। তাদের সবার বাসা নগরীর সদরঘাট থানার মাদারবাড়ি এলাকায়। অপহৃত মেহেদী হাসান মিসকাত সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ডে-কেয়ার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
সদরঘাট থানার ওসি নেজাম উদ্দিন ইনকিলাবকে জানান, মিসকাতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মুক্তিপণের টাকা দেয়ার ফাঁদ পেতে ভোরে ৩ জনকে কলেজিয়েট স্কুল লাগোয়া নার্সারি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মাঈনকে দুপুরে মাদারবাড়ি এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর এ ৪ কিশোর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওই স্কুল ছাত্রকে অপহরণ এবং মুক্তিপণ দাবির কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ ও অপহৃতের পরিবারের সদস্যরা জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিপণের জন্য মিসকাতকে অপহরণ করে তারা। স্কুল থেকে যাওয়ার পথে তাকে তুলে নিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের পেছনে নার্সারির জঙ্গলে নিয়ে যায় তারা। সেখানে তার গলায় রশি পেঁছিয়ে তাকে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে সে অচেতন হয়ে পড়লে তারা মনে করে মিসকাত মারা গেছে। সেখানে তাকে ফেলে তারা চলে যায়। পরে মেহেদীর বাবার কাছে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
মেহেদীর বাবা আব্দুল জলিল জানান, ডে কেয়ার স্কুলে মেহেদীর ক্লাস চলত রাত আটটা পর্যন্ত। রাতে স্কুল থেকে বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় তারা খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে মেহেদী গুরুতর আহত অবস্থায় বাসায় ফিরে যায় জানিয়ে তিনি বলেন, মেহেদীর শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোলা রয়েছে। এসময় সে তাকে অপহরণ করে মারধর করার কথা জানায়। মেহেদীর গলায় ফাঁস দেয়ার দাগও আছে। তিনি বলেন, মেহেদী বাসায় ফেরার পর অপহরণকারীরা তার মায়ের মোবাইলে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ও টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তিনি বলেন, তাদের কথা পাত্তা না দিয়ে আমি ছেলের চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু তারা একের পর এক টাকা চেয়ে ফোন করতেই থাকে। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানাই।
ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেয়ে গভীর রাতে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে পুলিশ টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখায় অপহরণকারীদের। ভোর রাতে তারা টাকা নিতে নার্সারি এলাকায় গেলে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে তাদের গ্যাঙ লিডার মুক্তাদিরের পরিকল্পনার অনুযায়ী টাকা আদায়ের জন্য তারা মেহেদীকে অপহরণ করেছে। নার্সারির পেছনে নিয়ে তোয়ালে দিয়ে মেহেদীর গলায় ফাঁস দেয়া হয় এবং তাকে মারধর করা হয়। জ্ঞান হারিয়ে মুখে ফেনা চলে আসায় মেহেদী মারা গেছে ধারণ করে তারা পালিয়ে যায়। অপহরণকারীদের ধারণা ছিল মেহেদী মারা গেছে এবং পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে যাবে।
ওসি নেজাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নার্সারি এলাকা থেকে মেহেদীকে বাঁধার জন্য ব্যবহার করা প্লাস্টিকের রশি, তোয়ালে, তার স্কুল ব্যাগ ও পড়নের প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে। মেহেদীর পরিবারকে ফোন করার জন্য গ্রেফতারকৃতরা যে মোবাইল সিম ব্যবহার করেছিল সেটি তারা স্টেশন রোড থেকে কিনেছিল বলে জানিয়েছে। উল্লেখ্য, নগরীতে কিশোর অপরাধীদের অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। তারা এলাকাভিত্তিক গ্রæপ গঠন করে খুন, চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে। সম্প্রতি নগরীর ষোলশহর ২নং গেইটে পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশ সদস্যদের গুলি করার ঘটনায় ৬ কিশোর ধরা পড়ে। জামালখানে কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ধরা পড়ে আরও ৫ কিশোর।