প্রাকৃতিক উপায়ে মাত্র ১৫ দিনে কিডনির পাথর দূর করুন
মূত্রতন্ত্রের যত রোগ আছে, এর মধ্যে পাথরজনিত রোগ সবচেয়ে বেশি। প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন কিডনির পাথরে ভোগেন।
পাথর আকারে ক্ষুদ্র শস্যদানা থেকে শুরু করে টেনিস বল আকৃতির পর্যন্ত হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই ছোট পাথরগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। তবে কিডনির পাথর সাধারণত আকারে ছোট হয়ে থাকে। কিডনির ভেতরে কঠিন পদার্থ জমা হয়ে পাথর হয়। সাধারণত খনিজ এবং অম্ল লবণ দিয়ে কিডনির পাথর তৈরি হয়।
কারণঃ
আমাদের প্রস্রাবে পানি, লবন ও খনিজ পদার্থের সঠিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। বিভিন্ন কারণে আমাদের প্রস্রাবের উপাদানের এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যেমন-
- প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমান পানি পান করা।
- মাত্রাতিরিক্ত আমিষ/প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
- অতিরিক্ত খাবার লবন (সোডিয়াম সল্ট/টেবিল সল্ট) গ্রহণ।
- অতিরিক্ত অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ যেমন চকলেট।
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহের উপযুক্ত চিকিৎসা না করা।
লক্ষণ ঃ
- কিডনিতে পাথর হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়-
- পিঠের দুই পাশে এবং পাঁজরের নিচে ব্যথা হওয়া ও তলপেট এবং কুঁচকিতে ব্যথা ছড়িয়ে যাওয়া।
- প্রস্রাব ত্যাগের সময় ব্যথা হওয়া।
- প্রস্রাবের রঙ গোলাপী, লাল অথবা বাদামী হওয়া।
- বারবার প্রস্রাবের বেগ পাওয়া ।
- যদি কোনো সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে জ্বর এবং কাঁপুনী হওয়া।
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া।
১. ২০০ গ্রাম (১ কাপ) বাজরা নিয়ে কুসুম গরম পানিতে খুব ভালো ভাবে ধুয়ে রাখতে হবে। এটা করতে হবে রাতের বেলা তাহলে ভালভাবে ভিজবে। তারপর সেই ভেজানো বাজরাগুলো ৩ লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পাত্রে নিয়ে এর ২/৩ অংশে ফুটন্ত গরম পানি দিতে হবে এবং পাত্রটির মুখ খুব ভালো ভাবে বন্ধ করে একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে সারারাত রেখে দিতে হবে। পরদিন সকালে পাত্রটিতে একধরনের সাদা ঘোলাটে তরল পাওয়া যাবে। এটাই হচ্ছে সেই কাঙ্খিত ঔষধ। এখন এই পানিটি অন্য একটি পাত্র বা বোতলে নিয়ে নিন এবং সারাদিন যেকোনো সময় যেকোনো পরিমাণে পান করুন কোন বাধা নিষেধ ছাড়াই। আর বাজরা গুলো ফেলে না দিয়ে পরিজ রান্না করে সকালের সকালের স্বাস্থ্য সম্মত নাস্তা হিসেবে খেতে পারেন। এক কাপ বাজরার সাথে ৩ কাপ পানি দিয়ে ১৫ মিনিট ফুটালেই তৈরি হয়ে যাবে সকালের নাস্তা। প্রতিদিন রাতে আবার পরবর্তী দিনের জন্য নতুন করে বাজরার পানি তৈরি করে রাখুন একই প্রক্রিয়াতে। এভাবে প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে ১০-১৫ দিন নিয়মিত এই পানীয়টি খেতে হবে। এই ১০-১৫ দিনের মাঝে কিডনি পরিস্কারের পাশাপাশি এতে থাকা পাথর নরম হয়ে গলে প্রসাবের সাথে বেড়িয়ে যাবে। তখন কিডনিতে থাকা বালি, মিউকাস বা পাথরই বলেন সব দূর হয়ে তখন তা ইতিহাস হয়ে যাবে। ফোলা কমে গিয়ে কিডনী ও মূত্রতন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গগুলো সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিয়ে আসবে। এই খাদ্যশস্যটি প্রতেকের জন্য প্রযোজ্য, সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য এবং এটি যদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা হয় তবে তা অবশ্যই কিডনির জন্য স্বাস্থ্যকর হবে। যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ প্রয়োজন বিশেষ করে শরীরের সম্ভাব্য রোগ এড়ানোর জন্য এবং প্রাকৃতিক উপায়ে একে পরিষ্কার রাখার জন্য। এছাড়া লেবু এবং জলপাই তেলের মিশ্রণ তৈরি করে খেলে তা পিত্তথলি এবং কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে।
২. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুনআসুন জেনে নেওয়া যাক কিডনির পাথর তাড়ানোর ১২টি প্রাকৃতিক পদ্ধতি।
কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রধান কারণ যেহেতু পানিশুন্যতা সেহেতু প্রচুর পরিমাণে পান করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। পানি কিডনিতে টক্সিন জমতে দেয় না। আর পাথরের জন্য প্রাকৃতিকভাবে বের হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এবং নতুন পাথর হওয়াও ঠেকায়।
৩. আপেল সিডার ভিনেগার
এতে আছে সাইট্রিক এসিড যা কিডনির পাথর গলিয়ে ফেলতে সক্ষম। এছাড়া এর ক্ষারীয় উপাদান কিডনি থেকে বিষাক্ত বর্জ্য বের করে দিয়ে কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মেশান। এবং প্রতিদিন পান করুন। তাহলে কিডনি পাথর দূর হয়ে যাবে।
৪. বেকিং সোডা
এতে থাকা এসিড কিডনির পাথরে থাকা এসিড নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এবং পাথরের আকার ছোট করে আনে। এছাড়া কিডনি এবং মূত্রনালির প্রদাহ কমায় বেকিং সোডা।
এক গ্লাস পানির সঙ্গে আধা টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন। তাহলেই কিডনির পাথরগুলো একটা সময়ে গিয়ে বেরিয়ে আসবে।
৫. তুলসী পাতা
এটি টক্সিন পরিষ্কারক এবং কিডনিতে ইউরিক এসিডের হার কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এটি পেইনকিলার হিসেবেও কাজ করে। ৬. লেবু জুস এবং অলিভ অয়েল
লেবুর এসিডময় উপাদান কিডনির পাথরের আকার কমাতে সহায়তা করে। আর অলিভ অয়েল কিডনির পাথর সহজে বের করে আনতে সহায়ক।
লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড কিডনির স্বাস্থ্য ভালো করে এবং পুনরায় পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে। আর অলিভ অয়েল কিডনির পাথরগুলো সহজে বের করে আনার জন্য লুব্রিকেন্ট বা পিচ্ছিলকারক হিসেবে কাজ করে।
প্রতিদিন দুই চা চামচ লেবুর রসের সঙ্গে ২ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পান করুন। তাহলেই কিডনির পাথর দূর হয়ে যাবে।
৭. তরমুজের বীজ
সম্প্রতি তরমুজের বীজের চা কিডনির পাথর দূর করার ওষুধ হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। তরুমুজের বীজ এর রেচক গুনের জন্য বিখ্যাত। তরুমুজের বীজ শক্তিশালী ক্লিনজার এবং কিডনি থেকে বর্জ্য এবং অন্যান্য টক্সিক উপাদান বের করে দিতে সহায়ক। এর ফলে কিডনির ফাংশন উন্নত হয় এবং সার্বিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা স্বাস্থ্যবান কিডনির জন্য জরুরি।
এক লিটার পানি সেদ্ধ করে তাতে এক মুঠো তরমুজের বীজ বেটে মেশান। এরপর আধা ঘন্টা ধরে রান্না করে ঠাণ্ডা করে নিন এবং খেয়ে ফেলুন।
৮. বেদানার জুস
এর কষাটে উপাদান কিডনি পাথর দূর করতে সহায়ক। এটি কিডনির ইউরিক এসিডের মাত্রা কমায় এবং পাথর ভাঙতে সহায়ক। এরপর পাথরগুলো সহজেই পেশাবের সঙ্গে বের হয়ে আসে। বেদানার জুস আমাদের দেহের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সহায়ক।
এ কাপ বেদানার বীজ দুই কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে পিষে জুস বানিয়ে পান করুন।
৯. সেলারি
এই শাকটি খেলে কিডনি থেকে বর্জ্য অপসারণের গতি বাড়ে। এছাড়া কিডনির ক্ষারের হারে ভারসাম্যও ফিরিয়ে আনে এটি। এছাড়া প্রস্রাবের উৎপাদনেও উৎসাহ যোগায় সেলানি যা কিডনি থেকে পাথর অপসারণে সহায়ক।
এক পাত্র পানিতে এক আঁটি সেলারি শাক সেদ্ধ করে প্রতিদিন সেবন করুন।
১০. কলার ডাঁটা
নানা প্রাচীন গ্রন্থেও কলা গাছের ভেতরের সাদা ডাঁটার কিডনির পাথর অপসারণের গুন বর্ণিত আছে। এটি উচ্চমাত্রায় মূত্রবর্ধক এবং কিডনির পাথর ভাঙতে সহায়ক। প্রতিদিন যদি কলার ডাঁটার জুস খাওয়া যায় তাহলে কিডনির পাথর অপসারিত হবে।
আধা কাপ কলার ডাঁটার কুচি নিন এবং দুধের সঙ্গে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এর সঙ্গে এক চিমটি দারুচিনির গুড়ো মিশিয়ে পান করুন।
১১. কর্ণ হেয়ার
এর আরেকটি নাম কর্ন সিল্ক। ভুট্টার তুষ থেকে পাওয়া যায় এটি। এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে দেয় না। এবং পেইনকিলার হিসেবে কাজ করে। এছাড়া কিডনির প্রদাহও কমায় এটি।
এককাপ পানিতে এক মুঠো কর্ন হেয়ার সেদ্ধ করার পর রসটুক ছেঁকে নিয়ে পান করুন।
১২. কিডনি বিন
এতে আছেঁ উচ্চমাত্রার আঁশ যা যে কোনো ধরনের কিডনির রোগ উপশমে সহায়ক। একটি সস পেনে কিডনি বিন নিয়ে হালকা আঁচে ২-৩ ঘন্টা ধরে সেদ্ধ করুন। এরপর পানিটুকু ছেঁকে নিয়ে পান করুন। প্রতিদিন কয়েকবার এভাবে কিডনি বিনের রস পান করুন।
১৩. মুলার জুস
মুলার রসে থাকা খনিজ উপাদান কিডনির পাথর ভাঙতে এবং সহজে বের করে দিতে সহায়ক।
আধা কাপ মুলার কুচি নিয়ে পানিতে আধা ঘন্টা ধরে সেদ্ধ করুন। এরপর রসটুকু ছেঁকে নিয়ে পান করুন। পাথর বের না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন পান করুন।
কিডনির পাথর সম্পর্কে সজাগ থাকুন,আপনার খাদ্যাভ্যাসে পুষ্টিকর খাবার রাখুন। খাবারের কারণেই পাথর তৈরি হতে পারে। কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস ও মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন।