ফ্যাটি লিভার ও প্রতিরোধে করণীয়
লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে যাওয়াকে ফ্যাটি লিভার ডিজিস (Fatty Liver Disease) বলে।
অনেকেই ভাবেন কেবলমাত্র মদ্যপান করলেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু মদ্যপান না করলেও ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাকে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। মূলত অস্বস্থ্যকর ডায়েট, অনিয়মিত লাইফস্টাইলের কারণে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। দেখে নিন কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কাদের বেশি হয়:- সাধারণত মাঝবয়সী ব্যক্তিরা এ ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ। যদিও শিশুদের ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে সাধারণত মাঝবয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। সাধারণত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলট্রাসনোগ্রাম করেই ফ্যাটি লিভারের রোগ নির্ণয় করা হয়। তবে সবাইকে আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যে তার ফ্যাটি লিভার আছে কি না- এ রকম কোনো প্রস্তাবনা নেই। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা স্থূলকায় বা যাদের রক্তে চর্বি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা দরকার। এই সংক্রান্ত আলোচনা এই আর্টিকেলের নিচের দিকে করা হয়েছে।
ফ্যাটি লিভার এর উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ
- Malaise বা মাদকদ্রব্য যা মানব দেহের স্বাভাবিক মেটাবলিক ক্যাপাসিটি দূর্বল করে ভারসাম্যহীন করে তোলে।
- ডায়াবেটিস
- হাইব্লাড প্রেসার বা হাইপার টেনসন
- হাই ব্লাড কোলেস্টরেল অর্থাৎ রক্তে কোলেস্টরেল বৃদ্ধি পাওয়া
- প্রেগনেনসি বা গর্ভধারণকালীন একিউট ফ্যাটি লিভার
- গ্লাইকোজেন সংরক্ষণ সমস্যা
- কনজেনিট্যাল ডিজঅর্ডার (জন্মগত ব্যাধি)
- ইনফেক্সনস্ (টিউবারকিউলোসিস এবং ম্যালেরিয়া)
- বিভিন্ন রাসায়নিক কেমিক্যালযুক্ত খাদ্য ও ঔষধ
- অত্যন্ত অপুষ্টি অর্থাৎ পুষ্টিজনিত ভারসাম্যহীনতা
- স্থূলতা (অত্যধিক মোটা হওয়া)
- হঠাৎ দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
- স্থুলতা কমানোর জন্য সার্জারী
- করটিকোস্টিরয়েড
- ভেলপ্রোয়িক এসিড (এপিলেপটিক বা মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়)
- হাইপার টেনসন কিংবা অনিয়মিত হার্ট বিটের জন্য মেডিকেসন
- সিডেটিভ বা বেদনানাশক
- ব্রেস্ট ক্যানসার এর মেডিকেসন
- মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন-এ গ্রহণ
- গ্রেড-১, গ্রেড-২, গ্রেড-৩
- গ্রেড-১ ও ২ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা যায়।
- শরীর অধিক মাত্রায় স্থূল হলে।
- এলকোহল বা মাদক গ্রহণ করলে।
- উচ্চরক্ত চাপ যা ঘন ঘন উঠানামা করে।
- ব্লাড কোলেস্টেরল লেভেল বৃদ্ধি পেলে।
ফ্যাটি লিভার এর লক্ষণসমূহ
- Malaise অর্থাৎ খুবই অস্বস্তিকর শারীরিক অবস্থা ফলে রোগী শুধু বিশ্রাম চায়।
- Fatique অর্থাৎ শারিরীক ও মানসিক অবসাদ বা দূর্বলতা।
- উদরের মধ্যে পরিপূর্ণতা এবং ভারী ভাব। বিশেষতঃ ডানদিকে উপরিভাগে অধিক।
- মাঝে মধ্যে চাপের কারণে লিভারে ব্যথা হতে পারে।
ফ্যাটি লিভার হওয়ার কারণে যেসব রোগ হয়
- হেপাটাইটিস (Hepatitis) :– লিভার প্রদাহ। সাধারণত ভাইরাস কর্তৃক আক্রান্ত হয়। যেমনণ্ড হেপাটাইটিস ই, ঈ এবং উ। অতিরিক্ত মদ্যপান, ঔষধ সামগ্রী, এলার্জিক রিয়েকশন বা প্রতিক্রিয়া কিংবা স্থুলতা ইত্যাদি।
- সিরোসিস (Cirrhosis ) :- লিভার দীর্ঘস্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়া অর্থাৎ তার স্বাভাবিক কার্য মতা হারিয়ে ফেলা।
- লিভার ক্যান্সার (Liver cancer) :- সাধারণত সিরোসিস এর শেষ অবস্থা। হেপাটোসেলুলার ক্যারকিনোমা।
- লিভার ফেইলিওর (liver failure):- লিভার ফেইলউর বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমনণ্ড ইনফেকসন, জেনেটিক এবং অতিরিক্ত এলাকোহল।
- এসাইটস (Ascites ):- সিরোসিসের ফলে পেটের মধ্যে লিভার ফ্লুইড নির্গত হয়ে পেট ফুলে যায় এবং ভারী হয়।
ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা
শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব রোগীর প্রায় ৫০ শতাংশের লিভার বড় পাওয়া যায়। রক্ত পরীক্ষায় সিরাম ট্রান্স-এমাইনেজ বেশি থাকতে পারে। তবে এটি স্বাভাবিক থাকলেই যে লিভারে হেপাটাইটিস নেই এ কথা বলা যায় না। ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরীক্ষা হচ্ছে আলট্রাসনোগ্রাম, যদিও সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এ ক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য। পাশাপাশি ফ্যাটি লিভারের অধিকাংশ রোগীরই রক্তে সুগার, কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্যাটি লিভার শনাক্ত করার উপযোগী পরীক্ষার নাম হচ্ছে ফাইব্রোস্ক্যান। তবে নিশ্চিত করে ফ্যাটি লিভার নির্ণয়ের পরীক্ষা হচ্ছে লিভার বায়োপসি। এতে একদিকে যেমন নির্ভুলভাবে ফ্যাটি লিভার ডায়াগনসিস করা যায়, তেমনি পাশাপাশি লিভারে স্টিয়াটোহেপাটাইটিস, ফাইব্রোসিস ও সিরোসিসের উপস্থিতি সম্পর্কেও একমাত্র এই পরীক্ষার মাধ্যমেই শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।