জিদানের চাকরি থাকবে তো ?
জিদানের চাকরি থাকবে তো? প্রশ্নটি না করে পারা যাচ্ছে না। স্কোয়াডে দারুণ সব খেলোয়াড় থাকার পরও বারবার ফর্ম হারানো সব খেলোয়াড়কে মূল একাদশে নামাচ্ছেন। বদলি নামানোর সময়ও সেরা খেলোয়াড়কে তুলে নিচ্ছেন। পছন্দের খেলোয়াড়দের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ তো পুরোনোই হয়ে গেছে। এরই সুযোগ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই মাঠে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে ভিয়ারিয়াল। ইতিহাসেই প্রথমবারের মতো। লা লিগার শিরোপা দৌড় থেকে কত দূরে রিয়াল? অট্টহাসির আওয়াজ না তুলে এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়!
ভাগ্যও শত্রু হয়ে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদের। না হলে এত গুলো সুযোগ থেকেও কেন গোল হবে না! ম্যাচের শুরু থেকেই দাপুটে ফুটবল রিয়ালের। ১৩ মিনিটেই বল জালে ঢুকল। কিন্তু বেলের সে গোল বাতিল হলো অফসাইডে। সে দুঃখ ১৮ মিনিটেই ভুলতে পারত বার্নাব্যু। কিন্তু বক্সের অনেক বাইরে থেকে নেওয়া মার্সেলোর শটটা অসাধারণ এক পাঞ্চে ফিরিয়ে দিলেন ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক এসেনহো।
২২ মিনিটে এসেনহোর সঙ্গে হাত মেলাল ক্রসবার। রোনালদোর নেওয়া ফ্রি কিক এসেনহোর হাতও আটকাতে পারেনি, বারও বাধা হয়ে গোল বঞ্চিত করল রিয়ালকে। ২৮ মিনিটে প্রতি আক্রমণে উল্টো এগিয়ে যেতে বসেছিল ভিয়ারিয়াল। কিন্তু বাক্কার সামনে সময়মতো দাঁড়িয়ে গেলেন নাচো। সেটাই প্রথমার্ধের একমাত্র ব্যতিক্রম। বাকি সময়টা রিয়ালের একের পর এক আক্রমণের গল্প।
২৯ মিনিটে আরেকটি সুযোগ পেয়েও পোস্টের পাশ দিয়ে বল পাঠিয়েছেন রোনালদো। পরের মিনিটেও আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন রোনালদো। ৩২ মিনিটে পরিষ্কার পেনাল্টি পেয়েছিল রিয়াল। কিন্তু রেফারি ও লাইন্সম্যান দুজনের চোখই কীভাবে যেন দেখতে পেল না ডিফেন্ডারের হাতে বল লাগানো। ৪৪ মিনিটেও আরেকটি পরিষ্কার পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হয়েছে রিয়াল। ডান প্রান্ত থেকে ইস্কোর পাসে শট নিয়েছিলেন রোনালদো। মাত্র কয়েক ফুট দূর থেকেই সেটা ঠেকিয়ে দিয়েছেন এসেনহো। তবে রিপ্লেতে দেখা গেছে, রোনালদোকে বলের দিকে দৌড়ানো অবস্থায় ফাউল করা হয়েছিল। কিন্তু এবারও রেফারির দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে ঘটনাটি।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই রকম চলেছে ম্যাচের গল্প। রিয়াল আক্রমণ করছে, বারবার গোল বাঁচিয়ে দিচ্ছেন এসেনহো। ৫১ মিনিটে ক্রুসের আরেকটি শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক। ৬৯ মিনিটেই জিদান অবাক করে দিলেন সবাইকে। রিয়ালের আক্রমণভাগে যে দুজন সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছিলেন, সেই ইস্কো ও বেলকে তুলে নিলেন। সে জায়গায় নামলেন এসেনসিও ও লুকাস ভাসকেজ। দুই উইং ব্যবহার করে আক্রমণের পরিকল্পনা। কিন্তু এ দুজনকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে তো!
টনি ক্রুস ও মার্সেলো প্রায় প্রতিটি আক্রমণকেই বাধাগ্রস্ত করেছেন নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে। বারবার ভালো পজিশনে চলে যাওয়ার পরও এসেনসিও-ভাসকেজ বল পাচ্ছিলেন না। মার্সেলো ঠিক কত গুলো ক্রস করতে গিয়ে বল নষ্ট করেছেন সেটি পরে আর গোনা যাচ্ছিল না। ক্রুসও অসংখ্য কর্নার পাওয়ার পরও রোনালদো কিংবা অন্য কাউকে ভালো কোনো সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনই এক কর্নার থেকে পাওয়া বলেই ৮৭ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠে ভিয়ারিয়াল। ফাঁকায় বল পাওয়া উনাস এনেলের প্রথম শট নাভাস ঠেকালেও দ্বিতীয় শট আর ঠেকাতে পারেননি। পাবলো ফরনালসকে আটকানোর দায়িত্ব যার, সেই ভারানে তো তখনো প্রতিপক্ষের অর্ধে। কিংবা রক্ষণে সহযোগিতা করতেই সেবায়োস কিংবা কোভাচিচের মতো মিডফিল্ডারের পরিবর্তে জায়গা পান যিনি, সেই কাসেমিরোরও দেখা পাওয়া যায়নি।
ও, এমন এক ম্যাচেও তৃতীয় কোনো খেলোয়াড়কে বদলি নামাননি জিদান। বোর্হা মায়োরাল কিংবা কোভাচিচরা তাই বেঞ্চে বসে বসে ভিয়ারিয়ালের ইতিহাস গড়াই দেখলেন। কে জানে, জিদানও হয়তো ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন। ক্লদিও রানিয়েরির পর ফিফার বর্ষসেরা কোচ নির্বাচিত হওয়ার মৌসুমেই ছাঁটাই হয়ে!