ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চান
ক্যান্সার : লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ……
দিন দিন ক্যান্সার যেমন বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে এই রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা। ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয় এটা আজ মানুষ বুঝতে পেরেছে । সচেতনতার কারনে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগও বাড়ছে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এবং চিকিৎসা করলে ক্যান্সার পুরোপুরি সেরেও যেতে পারে অথবা ক্যান্সারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়। বাড়ন্ত অবস্থায় ধরা পড়লেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোগীর কষ্ট কষ্ট অনেকটা কমানো যেতে পারে।
টিউমার মানেই কি ক্যান্সার?
টিউমার হল শরীরের অস্বাভাবিক টিস্যু পিণ্ড, যার কোষ অতি দ্রুত এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। কোষের ধরন ও আচরণভেদে টিউমার সাধারনত দুই(২) ধরনের হয়ঃ ১. বিনাইন (Benign) : এটি বিপজ্জনক নয়; ২. ম্যালিগনেন্ট (Malignant) : এটি বিপজ্জনক টিউমার। ক্যান্সার হচ্ছে এক ধরনের ম্যালিগনেন্ট টিউমার। অতএব, শরীরে পিণ্ড বা টিউমারের আচরণ যদি ম্যালিগনেন্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্যের মতো না হয় কিংবা রোগীর যদি ক্যান্সারের অন্যান্য লক্ষণসমূহের কোনটাই না থাকে, তাহলে এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
টিউমার মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয়। স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের সচেতনতা দিন দিন বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা রকম রোগের ভীতি যোগ হচ্ছে। আজকাল অনেকেই ছোট একটি টিউমার হলেই ক্যান্সার হল ভেবে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। অনেক সময় চিকিৎসক বুঝিয়ে বলার পরও ভয় কাটতে চায় না। আমাদের টিউমার বা ক্যান্সার সম্বন্ধে প্রাথমিক কিছু ধারণা না থাকার কারনে অনেক পরীক্ষার পরও ভয় থেকে যায়, রিপোর্টে সঠিক আছে কিনা? তাই । টিউমার বা ক্যান্সার সম্বন্ধে প্রাথমিক কিছু তথ্য জেনে নিন।
ক্যান্সারের কারণ
সুনির্দিষ্টভাবে ক্যান্সারের কারণ এখনও জানা যায়নি তবে নানান কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। ক্যান্সার বৃদ্ধির জন্য আমাদের বদলে যাওয়া জীবনযাপন অনেকাংশে দায়ী। উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার, যেমন ফাস্টফুড এবং খাদ্যতালিকায় ফাইবার জাতীয় খাবার কম পরিমাণে থাকার কারনে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত পরিমানে মিষ্টি জাতীয় খাবারের কারনে বয়স্ক ব্যক্তি এমনকি বাচ্চাদের মধ্যেও স্থূলতার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাও ক্যান্সারের একটি বড় কারণ। এ ছাড়াও ধূমপানসহ বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্য গ্রহন এবং পরিবেশ দূষণ ক্যান্সার বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে দায়ী।
ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন?
অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত সকল রোগের সমষ্টিই ক্যান্সার নামে পরিচিত। এই রোগে মৃত্যুর হার অন্যান্য রোগের তুলনায় অনেক বেশি। এরোগের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সাধারণত প্রতি চার(৪) জন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ১ জন ব্যক্তি মারা যায়। সাধারণত সাতটি বিষয়কে ক্যানসারের বিপদ সংকেত বলা হয়। যেমন- খুসখুস কাশি, ভাঙ্গা কণ্ঠস্বর, সহজে ঘা না শুকালে, স্তনে বা শরীরের কোথাও কোনো চাকা বা পিণ্ডের সৃষ্টি হলে, মল ত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন হলে, ঢোক গিলতে কোনরকম অসুবিধা বা হজমে অসুবিধা হলে, তিল কিংবা আচিলের কোনো সূক্ষ পরিবর্তন হলে। সাধারণভাবে এই সাতটি বিপদ সংকেতের কথা সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচার হলে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সারকে অনেকাংশে নির্মূল করা সম্ভব হয় কিন্তু ক্যান্সার সহজে ধরা না পড়ার কারনে, এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। যদিও ক্যান্সার সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকলে এবং একটু সচেতন হলে ক্যান্সার থেকে বেচে থাকা যায়।
ক্যান্সার থেকে বাঁচাতে পারে ৮টি মশলা
১.হলুদ :-এতে রয়েছে শক্তিশালী কারকিউমিন পলিফেনল। কারকিউমিন ক্যান্সার সেলের গ্রোথকে নিয়ন্ত্রণ করে। কারকিউমিন শরীরে অ্যাপপটোসিস তৈরি করে যা শরীরে ক্যান্সারের জন্ম দেওয়া ক্ষতিকারক সেল মেরে ফেলতে সাহায্য করে। মেলানোমা, ব্রেস্ট ক্যান্সার, ব্রেন টিউমার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার এবং লিউকেমিয়ার মতো ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে হলুদ।
২.মৌরি:- ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধে এই মৌরিই যে এক শক্তিশালী যোদ্ধা তা কি জানতেন? মৌরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যানসার প্রতিরোধে খুবই উপকারী। মৌরিতে রয়েছে অ্যানেটহোল যা ক্যান্সার সেলের আক্রমণমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৩.জাফরান:– জাফরানে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক এক কার্যকরি উপাদান, ক্রোসেটিন (প্রাকৃতিক ক্যারোটিনয়েড ডাইকার্বোক্সিলিক অ্যাসিড)। এটি শুধু যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি রোধ করে তা নয়, ক্রোসেটিন ক্যান্সারাস টিউমারের আকার কমাতেও সাহায্য করে ম্যাজিকের মতোই।
৪.জিরা:- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জিরায় রয়েছে থাইমোকুইনান নামক এক যৌগ যা প্রস্টেট ক্যান্সারের জন্যে দায়ী সেলের শরীরে ছড়িয়ে পড়া আটকায়।
৫.দারুচিনি:– সারা দিনে মাত্র এক চা-চামচ দারুচিনিগুঁড়ো। আর ক্যান্সারের মারণ থাবা থেকে আপনি থাকবেন শত হাত দূরে। সকালের চায়েই হোক অথবা স্যালাডে সিজনিং হিসেবে, আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন আয়রন ও ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ দারুচিনি।
৬.আদা:– প্রতিদিনের রান্নায় কোনো না কোনো খাবারে আদা থাকবেই। ক্যান্সার থেকে বাঁচার জন্যেও আদা অনেক উপকারী? রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি মেটাবলিজিম বাড়ায় এবং ক্যান্সার সেল ধ্বংস করতেও সমান উপযোগী।
৭.অরিগ্যানো:- এই যোদ্ধা আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহৃত না হলেও এখন যে কোনও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে পাওয়া যায়। অরিগ্যানোয় রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল কম্পাউন্ড। এতে মজুদ ফাইটো কেমিক্যাল, কারসেটিন শরীরে ম্যালিগনক্যান্সার সেল তৈরি হওয়া রোধ করে।
৮.নাগা মরিচ:- শরীরে ক্যান্সার সেলের ছড়িয়ে পড়া রোধ তো করেই। তাছাড়া, লিউকেমিয়ার টিউমার সেলের আকার কম করতেও সাহায্য করে নাগা মরিচ।তবে রান্নায় খুব বেশি পরিমাণে নাগা মরিচ না খাওয়াই ভাল। অতিরিক্ত ঝাল হওয়ার ফলে শরীর গরম হয়ে যেতে পারে।
সয়া প্রোটিন
বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে প্রস্তুতকৃত একটি সুষম পুষ্টি খাদ্য। যাতে রয়েছে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার আদর্শ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক প্রোটিন, অতি কম পরিমাণে কার্বহাইড্রেড, নিত্য প্রয়োজনীয় সাত প্রকার মিনারেলস, নয় প্রকার ভিটামিন ও ফাইবার-এ সমৃদ্ধ।
পরিবর্তিত খাদ্য হিসেবে নিয়মিত সেবনে দেহের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিশ্চিত ও নিরাপদভাবে কার্যকরী। তদুপরি দেহের বাড়তি চর্বি/কোলস্টেরল এবং রক্তে বাড়তি সুগারেরমাত্রা দ্রুত কমিয়ে স্বাভাবিক করে। করোনারী শিরার ব্লকেজ ও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস, মাইগ্রেন, টিউমার ও ক্যানসারসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কমিয়ে দেয়।