fbpx

করোনার বিরুদ্ধে মানবশরীর যেভাবে লড়ছে, বের করলেন অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীরা

নতুন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯-এর সঙ্গে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার লড়াইয়ের কৌশল আবিষ্কারের দাবি করেছেন অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীরা। আজ মঙ্গলবার এ–সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা পত্রিকা নেচার মেডিসিনে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেচার মেডিসিনে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সাধারণ ফ্লু থেকে মানুষ যেভাবে সেরে ওঠে, ঠিক একই প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাস থেকেও সেরে উঠছে। এ ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার কোন কোষগুলো সক্রিয় ভূমিকা নেয়, তা খুঁজে পেলে এর প্রতিষেধক তৈরি সহজ হবে।

অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীদের নতুন এ ফলাফল আশ্বস্ত করেছে গবেষণারত অন্য বিজ্ঞানীদের। মেলবোর্নের পিটার ডোহার্টি ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি পরিচালিত এ গবেষণাকে অনেকেই ‘ব্রেক–থ্রু’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। এরই মধ্যে এ–সম্পর্কিত গবেষণা আরও এগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে আর্থিক তহবিল দিয়েছেন অস্ট্রেলীয় সরকার ও চীনের ধনকুবের জ্যাক মা।

গবেষক দলটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ক্যাথেরিন কেডজিয়েরস্কা বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। কারণ, এই প্রথমবারের আমরা বুঝতে শুরু করেছি যে আমাদের শরীর করোনাভাইরাসের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করে।’

বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৫২টি দেশের ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে সাত হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত মানুষের একটি বড় অংশই সেরে উঠছে। অর্থাৎ, মানুষের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা সফলভাবে ভাইরাসটির সঙ্গে লড়তে পারছে। কিন্তু কীভাবে এ সাফল্য আসছে, তা এত দিন বোঝা যাচ্ছিল না। সর্বশেষ এই গবেষণা সেই উত্তরটিই দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা শরীরের চারটি প্রহরী কোষকে শনাক্ত করেছেন, যা নতুন করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে। এই কোষগুলোকে শনাক্তের জন্য বিজ্ঞানীরা মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করেন, যাঁর আগে অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস নেই। অস্ট্রেলিয়ার এক হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া চীনের উহানের ৪৭ বছর বয়সী ওই আক্রান্ত নারী ১৪ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠেন।

গবেষকেরা জানান, চিকিৎসাকালে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের পুরো দল ওই রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কীভাবে সাড়া দিচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করেন। ওই নারীর শরীরের উন্নতি হতে শুরু করার তিন দিন আগে থেকে তাঁর রক্তে বিশেষ কিছু কোষের উপস্থিতি দেখা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও সেরে ওঠার আগে আগে একই ধরনের কোষের আবির্ভাব দেখা যায়।

অধ্যাপক ক্যাথেরিন কেডজিয়েরস্কা বিবিসি অনলাইনকে বলেন, ‘পর্যবেক্ষণের এই ফলাফল আমাদের ভীষণভাবে আবেগাপ্লুত করে। চার সপ্তাহ ধরে আমরা একটানা কাজ করেছি।’

কথা হলো এই গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ? সোয়াইনবার্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের ডিন ব্রুস থমসন বলেন, ‘ভাইরাসটি মোকাবিলায় শরীরের প্রহরী কোষের সক্রিয় হওয়ার ক্ষণ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে এর গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে অনুমান করা সম্ভব। শরীর কখন সাড়া দিচ্ছে, জানলে ভাইরাসটি থেকে মুক্তি পাওয়ার পথে আপনার অবস্থান কোথায়, তাও আপনি জানবেন।’

এই অগ্রগতির বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট জানান, এই আবিষ্কার ভাইরাসটির প্রতিষেধক খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে এটি আক্রান্ত ব্যক্তিদের সম্ভাব্য চিকিৎসার পথও বাতলে দেবে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ক্যাথেরিন কেডজিয়েরস্কা জানান, বিজ্ঞানীদের পরবর্তী লক্ষ্য হবে, কেন কিছু ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার দুর্বলভাবে সাড়া দেয়, তা খুঁজে বের করা। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কী এমন ঘাটতি থাকে যে এ থেকে মুক্তি পাওয়া এত কঠিন হয়ে পড়ে। আর এটি বুঝতে পারলেই সুরক্ষার উপায়টিও আমরা বুঝে যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *