ইতিহাস মুছে ফেলা যায় নাঃ শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় আসেন বেলা তিনটার দিকে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ যেখানে শিশুপার্ক ঠিক সেখানে সেদিনের মঞ্চ ছিল। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেখানে উপস্থিত থাকার। জাতির পিতা সেখানে দাঁড়িয়েই ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বিজয় অর্জন করব। শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী করব। এটাই আজকের শপথ।’
ওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ সময় বক্তব্য দেন।
গত অক্টোবরে ইউনেস্কো ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐহিত্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর এই প্রথম ৭ মার্চ উদযাপিত হচ্ছে। আর দিনটি উদযাপনে আওয়ামী লীগ সেই সোহরাওয়ারার্দী উদ্যানেই আয়োজন করে জনসভা।
সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দিতে থাকেন জনসভায়। জনসভাকে ঘিরে গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে সাজানো হয় উৎসবের সাজে। নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার প্রতিকৃতি নিয়ে আসেন। উদ্যানে স্বাধীনতার স্তম্ভের লেনে ভাসানো হয় বেশ কিছু সত্যিকারের নৌকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় আসেন বেলা তিনটার দিকে। তিনি বক্তব্য দিতে উঠেন বেলা চারটা ৪০ মিনিটের দিকে।
শুরু থেকেই বক্তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের নানা দিক ব্যাখ্যা করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই ভাষণকে নিষিদ্ধ করায় সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমালোচনা করেন। বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেলেও অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। আর সেই কাজ করছেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। আর এ কারণে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে আবার তাকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কর্মদিবসে জনসভা করায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আজকের দিনটি বাঙলির সম্পদ। এই দিনটি পাল্টানোর ক্ষমতা কারও নেই। ভোগান্তির বিষয়টি সহনশীলতার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করেন তিনি।
কাদের বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা এই দিনটি মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আর এটি কেবল বাঙালির ইতিহাস নয়, সারা বিশ্বের সম্পদে পরিণত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, ‘এই দেশ কখনও বাঙালির ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাঙালির জন্য একটি দেশ হবে। এই দেশকে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘একটি যুদ্ধ কীভাবে হতে পারে, তার দিক নির্দেশনা বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন ৭ মার্চ। এ জন্যই তিনি বলেছেন, আমি যদি হুমুক দিবার নাও পারি, তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে তোমরা ঝাঁপিয়ে পড়বে।’
তোফায়েল বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ ছিল মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর দুটি স্বপ্ন ছিল, স্বাধীনতা আর বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা। একটি তিনি করে গেছেন, অন্যটি তিনি পারেননি। সেটিই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে, সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে তার মেয়ে করে যাচ্ছেন।’
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসের আমু বলেন, ‘অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসার নিশ্চয়তা শেখ হাসিনার সরকার বাংলার মানুষকে দিচ্ছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র ব্যক্তি না, বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা এই দেশের মানুষ সহ্য করেনি, করবে না।’ ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোনো ষড়যন্ত্রই ঠেকাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছে। তাকে আবার নির্বাচিত করতে হবে।’
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘জাতির পিতা দেশে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর তার কন্যার হাত ধরে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অশিক্ষা, অজ্ঞানতা, স্বাস্থ্যহীনতা থেকে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পেয়ে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে চলছে। তার নেতৃত্বেই আমরা দেশকে উন্নত করব।’