আকাশছোঁয়া দাম
বাজার ভরা ইফতারি আকাশছোঁয়া দাম
ইফতারি আকাশছোঁয়া দাম
এসেছে সিয়াম সাধনার মাস। কিন্তু সংযমের দেখা নেই ইফতারির বাজারে। ভাজাপোড়া থেকে ফলমূল- সব কিছুরই দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম। বাকি সব খাবার যেমন তেমন, এক হালি ‘বাংলা’ কলার দাম ৫০ টাকা চাইলেন বিক্রেতা। ছোলা, মুড়ি, কাবাব, হালিম- সব কিছুরই যথেচ্ছ দাম চাইছেন বিক্রেতারা। বাধ্য হয়ে ক্রেতারা রোজার প্রথম দিনে তাই আকাশছোঁয়া দামেই ইফতারি কিনলেন।
সবচেয়ে বড় ইফতারির বাজার চকবাজার পরিদর্শনে এসে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনও বললেন, ‘দাম অনেক চড়া। ইফতারি তৈরির পণ্যসামগ্রীর দাম কম, তাই এত মূল্য বৃদ্ধির কোনো যুক্তি নেই।’
এদিকে দাম বাড়লেও ইফতারির বাজারে ছিল উপচেপড়া ভিড়। চকে আসা সাইদুর রহমান বললেন, ‘কী আর করা, ইফতার তো করতে হবে।’
ছুটির দিন শুক্রবার প্রথম রোজায় রাজধানীর পথঘাট ছিল ফাঁকা। সকালের বৃষ্টির পর দুপুরটাও কেটেছে অলস। বিকেল থেকে শুরু হয় ইফতারির হাঁকডাক। হোটেল-রেস্তোরাঁ, মসজিদ, বিপণিবিতানের সামনে, বাজারগুলোর পথের ধারে, বাণিজ্যিক, আবাসিক এলাকার ফুটপাতে পর্যন্ত ইফতার সামগ্রীর পসরা। পুরো রাজধানী যেন পরিণত হয় ইফতারির বাজারে। রাজধানীর প্রতিটি সড়কের পাশে শামিয়ানা টানিয়ে রাস্তার পাশে বসে ইফতারির পসরা। বিকেলের আগেই ভাজা শুরু হয় বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, জিলাপিসহ নানা পদের খাবার। পাশেই টেবিল পেতে বিক্রি। দোকানের সংখ্যা যেমন অগণন ক্রেতাও তেমনি অগণিত।
বরাবরের মতো এবারও প্রধান ইফতারির বাজার চকবাজার। দেড়শ’ বছরের পুরনো এই ইফতারির বাজারে জুমার নামাজের পর থেকেই ক্রেতাসমাগম শুরু হয়। বিকেল ৪টার পর পা ফেলার জায়গা ছিল না।
চকবাজারে শাহি মসজিদের সামনের রাস্তায় বরাবরের মতো যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘বড় বাপের পোলায় খায়’, ‘সুতি কাবাব’, ‘রোস্ট’, ‘পায়া’, কিমা’, ‘শাহি পরোটা’, কিমা পরোটা’, ‘শাহি জিলাপি’সহ শতাধিক পদ বিক্রি হয়। ঘুগনি, ছোলা, পেঁয়াজু তো ছিলই।
মাংসের দাম বেড়েছে, এ অজুহাতে কেজিতে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’-এর দাম হাঁকা হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। খাসির পায়াও বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকায়। আস্ত হাঁসের রোস্টের দাম চাওয়া হয় দুই হাজার টাকা। ৪০০ টাকার হাঁস রোস্ট করে পাঁচ গুণ দাম দাবি করার যুক্তি কি? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না বিক্রেতা। কিন্তু দুই হাজারের কমে বিক্রি করতে রাজি নন। অবশেষে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করলেন।
বৃষ্টিতে কাদায় মাখামাখি চকে ছিল শিক কাবাব, সুতি কাবাব, ছোপা রুস্তম, মুঠিয়া, বটি কাবাব, জালি কাবাব, রেশমি কাবাব, পাখির রোস্ট, মুরগির রোস্ট, মোরগ মোসাল্লাম, সমুচা, শিঙাড়া, ঘুগনি, ছোলা, পেঁয়াজু, জিলাপিসহ শত পদ। কাদা মাখামাখি পথেই চলেছে ডুবো তেলে বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, জিলাপি ভাজার কাজ। পাশেই টেবিল পেতে বিক্রি। এত দামের পরও ক্রেতার কমতি নেই।
গরুর সুতি কাবাবের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হয়েছে। খাসির কাবাব ৬০০ থেকে হয়েছে ৮০০ টাকা। মুরগির রোস্ট ২০ টাকা বেড়ে ২৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ৪০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে চকে। আলাউদ্দিন সুইটসে খাসির শাহি পরোটার দাম ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা হয়েছে। গরু ও মুরগির পরোটার দাম ৭০ টাকা। সাধারণ দোকানগুলোতেও কিমা পরোটা বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
ক্রেতার মতো স্যাটেলাইট টিভি ক্যামেরার ভিড়ও কম ছিল না। প্রায় সবক’টি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করেছে ইফতারির বেচাকেনা। উচ্চ মূল্যের ক্ষোভ বিক্রেতাদের ওপর না ঝেড়ে সাংবাদিকদের ওপর ঝাড়লেন ক্রেতারা। সাধারণ মানুষ যতটা কিনলেন, তার চেয়ে ইফতারির ছবি তুলে সাধ মিটিয়েছেন। সেলফিও তোলা হলো বিস্তর।
শুক্রবার চকে দইবড়া বাটি ভেদে দাম ৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রহমানিয়া রেস্টুরেন্টে ফিরনি ২৫ থেকে ৬০ টাকা, বোরহানি ১০০ টাকা লিটারে বিক্রি হয়েছে। আনন্দ রেস্টুরেন্টের নার্গিস কাবাব ১৫ টাকা। হালিম প্রকারভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। জিলাপি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। শাহি জিলাপি ২৫০ টাকায়।
ইফতারে শরবতের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকার শতবর্ষী নূরানী কোল্ড ড্রিংকস ও বিউটি। আম, বেল, কাশ্মীরি শরবত, লাবাংয়ের চাহিদা বেশি। আর ফালুদা তো চকের সব দোকানেই আছে। চকবাজার পরিদর্শন করে মেয়র সাঈদ খোকন ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করেন। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বললেন তিনি।