২০টি জেলায় আজ থেকে শুরু ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন
পশ্চিমবঙ্গের ২০টি জেলায় আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে শাসক দলের ব্যাপক তাণ্ডবের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল রোববার রাত ও আজ সকাল পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সকাল সাতটা থেকে ভোট নেওয়া শুরু হওয়ার পর থেকে শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোটদানে বাধা, ব্যালট ছিনতাই, ভোট লুট, ভোটকেন্দ্রে বোমাবাজি, এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দেওয়া, ব্যালটে জোর করে সিল মেরে ভোট দেওয়া এবং ব্যালট বাক্স খুলে ভোট গণনার অভিযোগ উঠেছে।
উত্তর ২৪ পরগনায় হামলার জন্য তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেন, বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতকারী এসে হামলা চালিয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, হামলাকারীরা স্থানীয় বাসিন্দা।সকালে পশ্চিমবঙ্গের ভাঙরে আরাববুল বাহিনী কলকাতার স্টার আনন্দ টেলিভিশনের একটি গাড়ির ওপর আক্রমণ করে। ক্যামেরা ও গাড়ি ভাঙচুর করে।
তাড়িয়ে দেয় সাংবাদিকদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাটের পাথরঘাটায় একটি ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট বাক্সে পানি ঢেলে দিয়ে ভোট বানচাল করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে ভোটকেন্দ্র দখলের জন্য শাসক দলের সমর্থকেরা বোমাবাজি করে ত্রাস সৃষ্টি করে ভোট লুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে আহত হন তিনজন। নদীয়ার শান্তিপুরে বাইক বাহিনী ভোটকেন্দ্রে ঢুকে তাণ্ডব চালালে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে বাহিনীর ১১টি বাইক আটকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। মহম্মদপুর বাজারে ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়েছে। জলপাইগুড়ির শিকারপুরে সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে বন্ধ হয়ে যায় ভোট। কোচবিহারের ওড়াবাড়িতে আড়াই ঘণ্টায় ১০০ শতাংশ জালভোট দেওয়ার পর ভোটকর্মীরা প্রাণভয়ে ব্যালট বাক্স নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে ফিরে গেছে।
মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে ব্যালট বাক্স লুট করে ব্যালট পেপারে সিল মেরে তা বাক্সে ফেলে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। কোচবিহারের বহু কেন্দ্রে সকাল নয়টার মধ্যে ভোটগ্রহণ শেষ করে দেয় শাসক দলের ভোটকর্মীরা।নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত সাতজনের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে আজ সকালে। আজ উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙ্গায় এক সিপিএম কর্মী তৈমুর গায়েন ও তাঁর স্ত্রী বোমার আঘাতে নিহত হয়েছেন। এখানে আহত হয়েছেন আরও দুই সিপিএম কর্মী।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় তপন মণ্ডল নামে বিজেপির এক কর্মী ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষের মারা যান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে তৃণমূল-এসইউসিআই সংঘর্ষে তৃণমূল-সমর্থক আরিফ আলী গাজী নিহত হন। অন্যদিকে নদীয়ার শান্তিপুরে গণপিটুনিতে সঞ্জীব প্রামাণিক নামে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নিহত সঞ্জীবসহ তিনজন বুথ দখল করতে এসেছিলেন। এ ছাড়া গতকাল রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের নামখানায় এক সিপিএম কর্মী দেবু দাসের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে দেবু দাস ও তাঁর স্ত্রী নিহত হয়েছেন।
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় এসে ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন ১০ জনকে ধরে ফেলে তাদের বেদম প্রহার করে। এতে সাতজন গুরুতর আহত হন। ধৃত ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা সিপিএমের এক নেতার ডাকে এখানে এসেছেন। এই ঘটনার পর উত্তর ২৪ পরগনার দায়িত্বে থাকা তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, বাংলাদেশের দুষ্কৃতকারীরা এসে এই হামলা চালিয়েছে। তবে স্থানীয়রা দাবি করেছেন, ধৃত ব্যক্তিরা স্থানীয়।
তারা শাসক দলের ডাকে এখানে ভোট ডাকাতি করতে এসেছিল। বর্ধমানের ঝালদায় মরিচের গুঁড়া ছড়িয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা তৈরি করে তৃণমূলের সমর্থকেরা। পূর্ব মেদিনীপুরের পাশকুড়ায় ভোটকেন্দ্রে মুখে কাপড় দিয়ে হাতে পিস্তল নিয়ে সন্ত্রাসীরা বুথে ঢুকে জোর করে ব্যালট পেপারে সিল মারে। এদিকে উত্তর দিনাজপুরে বিরোধী দলের এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
দেগঙ্গার চাপাতলায় এক কংগ্রেস প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙরে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। এবার রাজ্যের ত্রিস্তর পর্যায়ের গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০টি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ২১৭টি আসন ও জেলা পরিষদের ৮২৫টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পর এবার জেলা পরিষদের ৬২২টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৬ হাজার ১৫৮টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১ হাজার ৮৩৬টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।
নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ১৮ শতাংশ বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সব মিলিয়ে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ৮ হাজার ৬৪০।