ফাঁসির আদেশ
রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের ফাঁসির আদেশ
আলবদর বাহিনীর কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের ফাঁসির আদেশ
মানবতাবিরোধী অপরাধে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার আলবদর বাহিনীর কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করে।
এ আলবদর নেতার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা চার অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে আসামি ফকিরকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাকে।
রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হলো-
১. একাত্তরের ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় রিয়াজ উদ্দিন বেশ কয়েকজন রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ফুলবাড়িয়া সদরের আব্দুল মজিদকে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আটক ও নির্যাতন চালায়। একইদিন দুপুর ১টায় শহীদুল্লাহ মাস্টার, জামসেদ আলী এবং অপরিচিত আরও কয়েকজনকে আটক করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। ২৫ আগস্ট আব্দুল মজিদ,শহীদুল্লাহ মাস্টার,জামসেদ আলী এবং অপরিচিত আরও দুজনকে গুলি করে হত্যা করে স্থানীয় নদীতে লাশ ফেলে দেয়।
২.একাত্তরের ৫ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে রিয়াজ উদ্দিন ফকির রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পুলিশ স্টেশনের ঋষিপাড়া গ্রাম থেকে বাসন্তি ঋষি, গীতা রানী ঋষি ও নির্মলা ঋষিকে তুলে নেয়। পরে তাদেরকে পাকিস্তানি সেনারা ধর্ষণ করে। এরপর গণেন ঋষি, রিফাত ঋষি, গগণ ঋষি, কালু ঋষি, মঙ্গলা ঋষি, দীনেশ ঋষি, উমেশ ঋষি এবং মহিন্দর ঋষিকে গুলি করে স্থানীয় নদীতে তাদের লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
আছিম বাজারে এলোপাতাড়ি গুলিঃ
৩.একাত্তরের ১৩ নভেম্বর দুপুর আনুমানিক ১২টার সময় আল বদর কমান্ডার রিয়াজ উদ্দিন ফকির সশস্ত্র রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে আছিম বাজারে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে এবং নির্যাতন চালায়। এছাড়াও সেখান থেকে ১৩ জনকে ধরে নিয়ে গুলি করে আখালিয়া নদীতে তাদের লাশ ভাসিয়ে দেয়। তবে এ ঘটনায় সবমিলিয়ে ৪৩ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে। চার. একাত্তরের ২১ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে রিয়াজ উদ্দিন রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ভালুকজান গ্রাম থেকে আলতাফ আলী মণ্ডল, তালেব আলী মণ্ডল, সেকেন্দার আলী মণ্ডল এবং লাল মাহমুদ মণ্ডলকে তাদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে লাল মাহমুদ মণ্ডলকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং অন্য তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
একই মামলায় তিন আসামির মধ্যে অন্য দুজন ফুলবাড়িয়ার রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ আলী গ্রেফতারের পর ও রাজাকার ওয়াজ উদ্দিন পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন। এজন্য তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২২ আগস্ট থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ফুলবাড়িয়া উপজেলার বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড, রাঙ্গামাটিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন বানা নদী, দিব্যানন্দ ফাজিল মাদ্রাসা, ফুলবাড়িয়া ঋষিপাড়া, আছিম বাজার ও ভালুকজান গ্রামে তিনি অপরাধগুলো সংঘটিত করেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।