fbpx

ট্রেজারি অডিটরের বাসা থেকে ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার

ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসা থেকে ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুদক।

কিশোরগঞ্জে ভূমি অধিগ্রহণের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কারাগারে থাকা ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসা থেকে ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুদক। মঙ্গলবার রাত ১১টায় কিশোরগঞ্জ  সদর উপজেলার  কাতিয়ারচর এলাকায় ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসায় দুদক ঢাকা বিভাগের পরিচালক নাসিম আনোয়ার, সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ, মো. মনিরুল ইসলাম ও মো. ফজলুল বারী অভিযান চালিয়ে এসব টাকা উদ্ধার করেন।

সৈয়দুজ্জামানের শোবার ঘরে স্টিলের আলমারির ওপরে দুটি ব্যাগে তিনটি কাগজের প্যাকেটে রাখা এক হাজার ও ৫শ’ টাকার ১০৪টি বান্ডেলে এই টাকা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে এক হাজার টাকার বান্ডেল রয়েছে ৭০টি, আর ৫শ’ টাকার বান্ডেল রয়েছে ৪৪টি। টাকা গোনা এবং প্যাকেট করাসহ রাত সোয়া ১টা পর্যন্ত চলে এ অভিযান। অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদক ঢাকা বিভাগের পরিচালক নাসিম আনোয়ার জানান, পাঁচ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতে মূল অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জের গ্রেপ্তারকৃত সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলামের ১৬৪ ধারার জবানবন্দির সূত্র ধরে এই অভিযান চালানো হয়।

এ সময় সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈদ, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত ও পরিদর্শক (অপারেশন) তানভীর আহমেদসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ১৭ই জানুয়ারি পিরোজপুর থেকে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে ২রা ফেব্রুয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সেতাফুল। জবানবন্দিতে সেতাফুল ইসলাম পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতে তার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর এবং অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মাঈনুল হক জড়িত ছাড়াও আত্মসাতের টাকার অংশ হিসেবে ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানকে পাঁচ লাখ ও পিয়ন মো. দুলাল মিয়াকে এক লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। এই জবানবন্দির সূত্র ধরে ঢাকার প্রধান কার্যালয় থেকে আসা দুদকের একটি উচ্চপর্যায়ের টিম কাগজপত্র পরীক্ষাসহ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে মো. সৈয়দুজ্জামান ও দুলাল মিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় এবং গত ৬ই ফেব্রুয়ারি অডিটর সৈয়দুজ্জামান ও পিয়ন দুলাল মিয়াকেও দুদক গ্রেপ্তার করে। পরে গত ১১ই ফেব্রুয়ারি ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও অফিস সহায়ক দুলাল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে ১৪ই ফেব্রুয়ারি দু’জনেই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম ও ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান উভয়েই মাদকাসক্ত ছিলেন। তারা একসঙ্গে মাদকগ্রহণসহ পরস্পরের বাসায় যাতায়াত ছিল। এই ঘনিষ্ঠতার কারণেই আত্মসাতের একটি অংশ ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসায় রাখা হয়। মঙ্গলবার রাতে সেখানে দুদকদল হানা দিয়ে দুইটি বাজারের ব্যাগে রাখা মোট ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করে।
এদিকে সেতাফুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের নাম আসার পর গত ২০শে ফেব্রুয়ারি তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। ওএসডি করার পর গত ৪ঠা মার্চ নতুন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করে মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস কিশোরগঞ্জ ছাড়েন। এর দুইদিন পরই মঙ্গলবার রাতে ট্রেজারির অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসা থেকে ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুদক।
পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কিশোরগঞ্জ জেলায় ‘হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প’ এর জন্য মোট ১৪০.৩৯৯ একর ভূমি অধিগ্রহণের মূল্য বাবদ অগ্রিম হিসেবে তিনটি এলএ কেসের বিপরীতে পৃথক তিনটি চেকের মাধ্যমে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রদান করে। তিনটি চেকের টাকাই চালানের মাধ্যমে ট্রেজারিতে জমা করেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম। পরবর্তিতে ২০১৭ সালের ৫ই ডিসেম্বর একটি ভাউচারের মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকার চেকে প্রাপকের নামের কলামে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির স্থলে অবৈধভাবে ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা, কিশোরগঞ্জ লিখে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করেন।

সেতাফুল ইসলাম কর্তৃক অবৈধভাবে দাখিলকৃত এই চেকের বিপরীতে অগ্রিম সমন্বয় সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর প্রদান করেন যাতে এলএ কেসের বিপরীতে দাবিকৃত পাঁচ কোটি টাকা নগদ/চেকে বিতরণের উদ্দেশ্যে জনস্বার্থে অগ্রিম উত্তোলন বিধায় উত্তোলিত অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিককে নগদ বিতরণের পর প্রাপ্তি স্বীকার ও মাস্টাররোলসহ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে এবং অবিতরণকৃত টাকা এককালীন সংশ্লিষ্ট খাতে জমা করা হবে মর্মে ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে প্রত্যয়ন প্রদান করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা চেকটি পাস করে সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় পাঠান। ৬ই ডিসেম্বর সেতাফুল ইসলাম চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ২ কোটি টাকা উত্তোলন ছাড়াও ৬ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের বাজিতপুর শাখার গ্রাহক তপন ইন্ডাস্ট্রিজের নামে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করেন। পরে ৭ই ডিসেম্বর আরেকটি চেকের মাধ্যমে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা মো. সেতাফুল ইসলাম উত্তোলন করেন।
আত্মসাতের এই ঘটনায় দুদক ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল বাদী হয়ে গত ১৭ই জানুয়ারি মো. সেতাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা (নং-৩১) করার দিনই সন্ধ্যায় পিরোজপুর সার্কিট হাউজের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দুদক বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সমন্বিত দল।

https://currentbdnews24.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *