চাকরির অভাব নেই।
যোগ্যতা তৈরী করুন, চাকরির অভাব নেই।
চাকরির অভাব নেই।
মোঃ মাকসুদ উল্যাহ্:- এসএসসির ফলাফল হয়েছে। এখন কলেজে ভর্তির প্রশ্ন। যারা নিজ যোগ্যতায় ভালো ফলাফল করেছেন, তারা আরো মনোযোগ দিয়ে সামনের দিনগুলোতে অধ্যয়ন করুন। আপনারাই হবেন ভবিষ্যতের মহাকাশ বিজ্ঞানী, খনি বিজ্ঞানী, সমুদ্র বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ব্যাংকার, বিভিন্ন. দেশী বিদেশী বড়বড় কোম্পানীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
যারা গড়পরতা ফলাফল করেছেন, তারা এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী হোন এবং একটু কষ্ট করে ইংরেজী শিখুন। বিভিন্ন পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে পাস করে পরবর্তীতে বিদেশে চলে যেতে পারেন। চাকরির অভাব হবে না। কিন্তু যারা ফলাফল খুব একটা সুবিধা করতে পারেন নি, তারা আর কলেজে ভর্তি হয়ে টাকা আর সময় নষ্ট করা সমীচীন নয়। তারা বরং দেশেই বিভিন্ন শারীরিক পরিশ্রমের কাজ শুরু করতে পারেন। কৃষি, পশু পালন, মাছ চাষ, কাঠ মিস্ত্রী, রাজ মিস্ত্রী ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিশ্রমের কাজ শিখে বিদেশে চলে যেতে পারেন। দেশ হবে সমৃদ্ধ।
জানতে পারলাম আমাদের দেশের প্রায় সব শিক্ষিত যুবকেরা চেয়ারে বসে থাকার চাকরি চায়। শারীরিক পরিশ্রমের চাকরি তাদের অপছন্দ। সবাই প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা হতে চায়। সে কারনে অনেক কারিগরি পেশায় বিদেশের লোকেরা প্রশিক্ষন নিয়ে এসে স্থান করে নিচ্ছে। তারা এদেশ থেকে মুদ্রা তাদের দেশে পাঠাচ্ছে। আর এদেশের শিক্ষিত যুবসমাজের অনেকে বেকার থাকতেছে! ডাক্তার হওয়ার পর ২ বছর ২ মাস ৯ দিন গ্রামে চাকরি করে এসেছি। দেখেছি অল্পশিক্ষিত যুবকদের অনেকে বেকারত্বের কারনে কেউ একটি ক্লিনিক দিতে চায়। কেউ সাংবাদিক হতে চায়।
কেউ হতে চায় রাজনীতিবিদ! বেকারত্বের কারনে কেউ যদি এসব বিষয়কে পেশা বলে মনে করে গ্রহন করে ; তাহলে সেদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি খারাপ থাকতে বাধ্য। বেকারত্ব ঘুচাতে এসব আপত্তিকর পন্থা অবলম্বন না করে বরং যুবকদের উচিত ঐসব পেশাগত প্রশিক্ষন নেয়া ; যেগুলোর কারনে বিদেশিরা আমাদের দেশে চাকরি করতেছে আর আমরা থাকতেছি বেকার। বেকারদের মধ্যে শিক্ষিত যুবকের হার বেশি। এমএ, এমকম, এমএসসি বেকার! কী দরকার এত লেখাপড়া করে সময় ব্যয় করে শেষে নিজেকে উচ্চশিক্ষিত বেকার হিসেবে দেখার আর হতাশ হওয়ার? আবেগ পরিহার করে বরং আগে থেকেই বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিন। এসএসসি বা এইচএসসি পাসের পরই কম্পিউটার ব্যবহার করা শিখুন। গ্রাফিক্স শিখুন। কিছু লিখে সেটা ছাপানো শিখুন। এগুলো যারা শিখবে, দেশে বিদেশে তাদের চাকরির অভাব হবে না। যিনি এমএ পাস কিন্তু কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন না, তার চাকরি হবে না।
কিন্তু যিনি এইচএসসি পাস অথচ কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী, দেশে বিদেশে তার একটি ভালো বেতনে চাকরি হবে। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, দশম শ্রেনীর একটি জ্যামিতি বইয়ের জ্যামিতিক ছবিগুলো যেমন, ত্রিভূজ, বৃত্ত, রম্বস ইত্যাদি কিভাবে কম্পিউটারে নকশা করে একটি কাগজে করে প্রিন্টার থেকে বের করে আনতে হবে, এগুলো শিখুন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য কিভাবে কম্পিউটারে ফরম পূরন করতে হয় সেটা শিখুন। সাথে ইংরেজীতে কিছুটা দক্ষতা থাকলেই দেশে বিদেশে চাকরির দরজা খোলা। বড় বড় হাসপাতাল ক্লিনিকের ফার্মেসিতেও রোগী ওষুধ ক্রয় করার পর, কম্পিউটারে সেই ওষুধগুলোর মূল্যসহ একটি তালিকা করে ছেপে ক্রেতার হাতে দিতে হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যখন, চাকুরির জন্য সাক্ষাৎকার নেয়, তখন কয়েকজন চাকুরি প্রার্থীর মধ্যে যে প্রার্থী কম্পিউটার ব্যবহারে যত পারদর্শী, তার চাকুরি হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। কম্পিউটার ব্যবহার শিখতে হলে ইংরেজী জানা লাগে। ইংরেজীতে দক্ষতা অর্জন করা কঠিন নয়।
যারা এসএসসি পাস করেছেন, কিন্তু ইংরেজীতে দুর্বল, তারা আবার চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেনীর ইংরেজী বই খুলে নিজেই শেখার চেষ্টা করুন। তারপর ষষ্ঠ শ্রেনীর বই, তারপর সপ্তম শ্রেনীর বই। এভাবে ধাপে ধাপে। এতে লজ্জার কিছু নেই। বরং এই বয়সে এসে পঞ্চম/ ষষ্ঠ শ্রেনীর বই থেকে শিখতে শুরু করলে বিষয়টি আরো সহজ মনে হবে, যেটা পঞ্চম শ্রেনীর একজন শিক্ষার্থীর কাছে খুব কঠিন। যারা বিদেশে চাকরি করতে চান, তারা উপরোল্লিখিত কৌশলের পাশাপাশি আই ই এল টি এস (IELTS) কোর্স করতে পারেন। তাছাড়া অনার্স মাস্টার্স লেখাপড়ার পাশাপাশি ইংরেজীতে ভালো দক্ষতা অর্জন করার পাশাপাশি কম্পিউটার ব্যবহারে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করতে পারলে বিদেশি কোম্পানীতেও আপনি চাকরি পাবেন সহজেই।
ঘরে বসেও ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। কুরবানীর জন্য বিদেশ থেকে পশু কিনতে হবে কেন? এতে দেশের সম্পদ বিদেশে চলে যায়। আপনি বরং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কার্যালয়ে যান। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কিভাবে সর্বনিম্ন খরচে পশু পালন করে স্বাবলম্বী হওয়া যায় জেনে নিন। আপনি হবেন স্বাবলম্বী, দেশ হবে সমৃদ্ধ। কুরবানীর জন্য বিদেশ থেকে পশু কিনতে হবে না। আপনাকেও বেকার থাকতে হবে না। মাছ, চিংড়ি চাষ করুন। এজন্য কোনো তথ্য দরকার হলে উপজেলা বা জেলার সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন। আপনার চাষের মাছ বিদেশে রফতানী করা যাবে। সেটা হবে আপনার জন্য এবং দেশের জন্য সুখবর। কারিগরী লাইনে লেখাপড়া করুন। কাজ শিখে বিভিন্ন দেশে চলে যান।
লেখকঃ চিকিৎসক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।