fbpx

বিদায় মেসি, বিদায় আর্জেন্টিনা

ধুঁকে ধুঁকে শেষ ষোলোয় পা। এই আর্জেন্টিনা আর কতটা পথই পাড়ি দেবে? এভাবেই ভেবেছিল সবাই। তবুও নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পাওয়া মহামূল্যবান জয়ের পর স্বপ্নের রঙ গাঢ় হয়েছিল নীল-আকাশীদের। কিন্তু কে জানত সেই স্বপ্ন নিমেষেই গুড়িয়ে যাবে ফরাসি উত্থানে। ফ্রান্সের এক ঝাঁক তরুণ তুর্কির বুলেট গতির ফুটবলে আর্জেন্টিনা উড়ে গেল মুহূর্তেই। ৪-৩ গোলের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া হারে বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হলো লিওনেল মেসি ও তার দলের।

আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকতে থাকতে এই আর্জেন্টিনা বড্ড ক্লান্ত। সময় যেন এবার এক ঝাপটায় সব হতাশা ঝেরে ফেলার, কাজান এরিনা স্টেডিয়ামে সেটাই করতে নেমেছিল উজ্জিবীত হয়ে ওঠা মেসিরা। কিন্তু মাঠে নেমে কিলিয়ান এমবাপ্পে, অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান, অলিভার জিরুডদের দুর্বার গতির ফুটবলের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন মেসিরা। শেষ ম্যাচে নেতা হয়ে ওঠা মেসি আবারও নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফিরলেন। কিন্তু আলোর দিশা মিলল না। আরও একবার রাজ্যের হতাশা নিয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্নের শেষ টানতে হলো তাকে।

আর্জেন্টিনা তিনটি গোল দিলেও পুরো ম্যাচে শাসন করেছেন কেবল এমবাপ্পে। দুটি গোল দিয়েছেন, আরেকটিতেও অবদান ছিল ফরাসি এই তরুণ তুর্কির। সঙ্গে গ্রিজম্যান, পাভার্ডদের হার না মানা ফুটবলশৈলী মেসিদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। আর কাজান এরিনাতে ওড়ে ফরাসিদের বিজয় কেতন। এই জয়ে কোয়ার্টার ফাইনোলে উঠে গেল এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা ফুটবল খেলা ফ্রান্স।

এটি ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতের ম্যাচ। পরিকল্পনাতেও ভিন্নতা আনেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। গঞ্জালো হিগুয়েনের ওপর ভরসা রাখেননি তিনি। সঙ্গে সার্জিও আগুয়েরোকেও একাদশে রাখেননি আর্জেন্টিনার কোচ। কিন্তু শুরুতে কোচের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ছাপ রাখতে পারলেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা। ম্যাচ শুরু হওয়ার পর বেশ কয়েক মিনিট আর্জেন্টিনাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দারুণ ছন্দ নিয়ে খেলা আর্জেন্টিনাকে অচেনা মনে হচ্ছিল। বল পাস দেওয়া, রিসিভ করায় আর্জেন্টিনাকে একেবারে নবীন দল মনে হচ্ছিল। এর খেসারত দিতে বেশি সময় লাগেনি। ৮ মিনিটেই পিছিয়ে পড়তে পারত তারা। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়ের ভুল পাসে বল পেয়ে ছোটেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাকে ফেরাতে গিয়ে ডি বক্সের বাইরেই এমবাপ্পেকে ফেলে দেন জাভিয়ের মাশ্চেরানো।

অসাধারণ ফ্রি কিক নেন ফ্রান্স মিডফিল্ডার অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান। কিন্তু এ যাত্রায় বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। গ্রিজম্যানের শটটি গোলবারে লেগে ফিরে আসে। কিন্তু এই স্বস্তি বেশি সময় থাকেনি মেসির দলের। ১১ মিনিটে আবারও পাল্টা আক্রমণে ফরাসিরা। এবারও সেই এমবাপ্পে। ডি বক্সের মধ্যে ফরাসি স্ট্রাইকারকে ফেলে দেন মার্কোস রোহো। স্পটকিক থেকে গোল করে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন গ্রিজম্যান।

১৯ মিনিটে আবারও গোল হজম করার যোগাড় হয়েছিল আর্জেন্টিনার। অবিরত পাল্টা আক্রমণে আল বিসেলেস্তেদের রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে দেওয়া এমবাপ্পে আবারও আক্রমণে যান। এবার ফাউল করেন তাগলিয়াফিকো। সবাই ধরেই নিয়েছিল পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছেন রেফারি। কিন্তু কপাল ভালো পেনাল্টি ছিল না সেটি। ফ্রি কিক থেকে পগবার নেওয়া শট উপর দিয়ে চলে যায়।

১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে খেলার ধার বাড়ায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেভাবে পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না তারা। ৪১ মিনিটে গিয়ে স্বস্তি ফেরে নীল-আকাশী শিবিরে। এভার বানেগার পাস থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে চোখধাঁধানো শটে গোল করে আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরান অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। সমতায় থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে দুই দল।

বিরতি থেকে ফিরেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৪৮ মিনিটে ডি বক্সের মধ্য থেকে শট নেন মেসি। সেই শটে আলতোভাবে পা ছুঁয়ে দেন গ্যাব্রিয়েল মারকাদো। স্বস্তিই ফিরেছিল আর্জেন্টিনা শিবিরে। কিন্তু এরপর যা হয়েছে সেটা রীতিমতো হাইলাইটসের মতো। ৫৭ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে অসারণ শটে গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান বেঞ্জামিন পাভার্ড।

সমতায় ফিরতেই নতুন দলে পরিণত হয় ফ্রান্স। বল পেলেই পাল্টা আক্রমণে সোজা আর্জেন্টিনার ডি বক্সে হানা দিচ্ছিল এমবাপ্পে, গ্রিজম্যান, জিরুডরা। ৬৪ মিনিটে গিয়ে মিলে যায় সাফল্য। হুড়োহুড়ির মধ্য থেকে বল পেয়ে যান পুরো ম্যাচ একাই শাসন করা এমবাপ্পে। ভুল করেননি ফরাসি এই স্ট্রাইকার। আর্জেন্টিনার গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জড়িয়ে দেন জালে।

মেসিরা তখন ফেরার নেশায়। কিন্তু ৬৮ মিনিটে আবারও এমবাপ্পের হুমকির মুখে আর্জেন্টিনা। বল পেয়ে এমবাপ্পেকে এগিয়ে দেন অলিভার জিরুড। আরও একবার ফরাসিদের উৎসবে মাতাতে সময় নেননি পিএসজিতে খেলা তরুণ এই স্ট্রাইকার। ৪-২ গোলে যায় ফ্রান্স। হার তখনই চোখ রাঙাচ্ছিল মেসিদের। তবুও ম্যাচ বাঁচাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে গেলেন তারা। ৯৩ মিনিটে গোল করে স্বপ্ন জিইয়ে রাখলেন বদলি হিসেবে মাঠে নামা আগুয়েরো। তবুও শেষ রক্ষা হলে না খেই হারিয়ে অনেকগুলো সুযোগ নষ্ট করা আর্জেন্টিনার। কোয়ার্টার বা সেমি ফাইনাল নয়, ৪-৩ গোলের হারে বিদায় নিতে হলো শেষ ষোলো থেকেই।

https://currentbdnews24.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *