fbpx

প্রসঙ্গ পিতামাতা

প্রসঙ্গ পিতামাতাঃ একতরফা কোনো কিছুই ভালো না

একতরফা কোনো কিছুই ভালো না
মোঃ মাকসুদ উল্যাহ্ঃ অনেক পিতামাতা সন্তানের বৈধ আয় রোজগারের সামর্থের বাইরে তাঁর কাছে অনেক কিছু দাবী করে। এমন কিছু দাবী করা অনুচিত যাতে সে অবৈধ পন্থায় টাকা উপার্জনের দিকে পা বাড়ায়।
এক সন্তানের ওপর বাকি সন্তানদের জীবন-জীবিকার দায় চাপিয়ে দেন অনেক পিতামাতা এটা খুবই অমানবিক। এমন করার অধিকার পিতামাতার নেই। মনে রাখবেন , এমনটা করলে আপনার ভালোর পরিবর্তে খারাপই বেশি হবে এবং পরিবার ধ্বংস হবে। এক্ষেত্রে বাকি সন্তানেরা চেষ্টা পরিশ্রম বাদ দিয়ে অলস হয়ে সংশ্লিষ্ট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। পরে দিনশেষে আশানুরুপ কিছু না পেলে ভাইদের মাঝে অসহিষ্ণুতা ও হানাহানি সৃষ্টি হয়। মনে রাখবেন, কুরআন সুন্নাহর কোথাও এক সন্তানের ওপর বাকি সন্তানদের জীবন-জীবিকার দায় চাপিয়ে দেয়ার অধিকার আপনাদেরকে দেয়া হয় নি।
আপনাদের সন্তান আপনাদের চাইতে তাঁর শ্বশুর শাশুড়িকে বা অন্য কোনো কাউকে বেশি শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করলে আপনারা যেমন কষ্ট পান, তেমনি সন্তানের চাইতে অন্য কাউকে বেশি শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করলে সন্তানেরাও ঠিক তেমনি কষ্ট পায়। তাই নির্বোধ বা অসভ্য লোকদের পরামর্শ মোতাবেক নিজের উচ্চশিক্ষিত সন্তানকে পরিচালনা করার চেষ্টা করবেন না। কেননা, অনেক পিতামাতা চায়, তাদের এমবিবিএস ডাক্তার সন্তান যেন, গ্রামের ফার্মেসিব্যবসায়ীর পরামর্শ / মর্জি মোতাবেক ডাক্তারি করে! মনে রাখবেন, ওই নির্বোধ বা অসভ্য লোক নয়, বরং আপনার সন্তানই আপনার সর্বোচ্চ শুভাকাঙ্ক্ষী। অসভ্য লোকেরা শুভাকাঙ্ক্ষীর বেশে আপনাদের কাছে আসবে। তাদের টার্গেট আপনার সন্তানের উন্নতির পথ রুদ্ধ করা এবং সন্তানদের মাঝে বিদ্বেষ ও হানাহানি ছড়ানো।
প্রত্যেক সন্তানই এক একটা মানুষ। আর প্রত্যেক মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার একটা সীমা আছে। তার আয়ুও সীমাবদ্ধ। আপনার কোনো এক বা একাধিক সন্তান চাকুরি পেলে তার কাছে এমন কিছু প্রত্যাশা করবেন না যাতে সে হারাম আয় করতে বাধ্য হয়। বরং বলুন, ” আমরা প্রয়োজনে কম খাবো কম পোশাক পরবো তবু সন্তান যেন কোনো অবৈধ আয় না করে।” বরং লক্ষ্য করুন সে যে বেতন পায় , তা দিয়ে সে নিজে সেই শহরে ঠিকমতো চলতে পারে কি না। অনেক পিতা মাতা আছে, যারা চায় চাকুরি পাওয়ার পর তার সন্তান প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই যেন একটি দালান বানায়। এটা অন্যায় মানসিকতা। কিছু লোক আছে যারা পথে ঘাঁটে একজন চাকুরীজীবী লোক দেখলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বলে ওঠে, “আপনার পিতামাতার দিকে একটু খেয়াল রাখিয়েন”। এটা একটা খারাপ আচরন এবং অসভ্যতা বটে।
এই লোক তার পিতামাতার দিকে একটু খেয়াল রাখতেছে, নাকি প্রয়োজনের চাইতে বেশি খেয়াল রাখতেছে, সেটা আপনি জানলেন কিভাবে? নিশ্চিত না হয়ে এভাবে কাউকে পথেঘাটে যখন তখন এ ধরনের পরামর্শের আদলে অপমানিত করার অধিকার আপনার নেই। বরং পিতামাতাকে উপরে উল্লেখিত পরামর্শগুলো দেয়া বেশি জরুরী হয়ে পড়ছে। কেননা নিজের সন্তান বিসিএস এর নির্দিষ্ট ক্যাডারে চান্স পেলে অনেক পিতামাতাকে গর্ববোধ করতে দেখা যায়। কারন, সন্তান এবার ঘুষ খেয়ে টাকার পাহাড় বানাতে পারবে! অনেক পিতা মাতা আছেন যারা নিজেদের সন্তানদের মধ্যে হাতে ধরেই বৈষম্য করেন। তারা মনে করেন, এক সন্তান চাকুরি পেলেই বাকিদের রিজিকের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে হবে সেটা তারা প্রকাশ্যে আলোচনা করতে নারাজ।
এক্ষেত্রে তারা মূলত ঘুষ এবং রাষ্ট্রীয় বা কোম্পানির সম্পদ নানাভাবে লুট করাটাকেই উপায় মনে করে। বরং সব সন্তানকে নিজ কষ্ট পরিশ্রমের মাধ্যমে যোগ্যতা/ দক্ষতা তৈরী করে স্বাবলম্বী হওয়ার উৎসাহ দিতে হবে সদা। অনেক পিতা মাতা চান, তাদের ছেলে শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক এনে প্রতিষ্ঠিত হোক। এটাও অমানবিক! সবাই একতরফাভাবে পিতামাতার গুনগান করে। পিতামাতার অন্যায় বিষয়গুলোকে কেউই তুলে ধরতে চায় না! একতরফা কোনো কিছুই ভালো ফলাফল বয়ে আনে না।
লেখকঃ চিকিৎসক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
https://currentbdnews24.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *