পদকের কাছে গিয়েই সুযোগ হাতছাড়া : জাকিয়া
শেষ পর্যন্ত যদি নির্ভার থাকতে পারতেন তিনি! যেই পদকচিন্তাটা মাথায় ভর করেছে অমনি সব গুলিয়ে গেল জাকিয়া সুলতানার। তাই পদকের কাছে গিয়েও শেষমেশ দূরেই থাকতে হয়েছে এবং গোল্ড কোস্ট গেমস হয়ে গেল এই বাংলাদেশি শ্যুটারের ছোট ক্যারিয়ারে বড় আফসোসের নাম।
শ্যুটিংও পদকের খেলা। কিন্তু পদকের চিন্তা মাথায় আনা যাবে না। আনলেই মাথা বিগড়ে যাওয়া অবধারিত, বাড়তি চাপ-তাপে সেরা শ্যুটারেরও এলোমেলো হয়ে যায় সব। তাই কোচরা বলেন মুনি-ঋষির মতো নির্মোহ হয়ে শ্যুটিং রেঞ্জে দাঁড়াতে হয়। জাকিয়াও কাল এভাবে শুরু করেছিলেন। পদক তো দূরের কথা, ফাইনালে ওঠারও স্বপ্ন ছিল না তাঁর। যতটা সম্ভব নিখুঁত খেলে যাওয়াটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এটা বেশ ভালো কাজ দিয়েছিল তাঁর ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে।
ফাইনালে খেলার স্বপ্ন না দেখা জাকিয়া ৪১০.৫ স্কোর করে ষষ্ঠ হয়ে উঠে গেছেন সেরা আটের ফাইনালে। ফাইনালেও যথারীতি কোচের কথা শিরোধার্য করে তিনি নির্মোহ ভঙ্গিতে শুরু করেন। একের পর এক বড় নাম যখন ছিটকে যাচ্ছেন তখনো জাকিয়া মারছেন নিখুঁত! এভাবে পদকের একদম কাছাকাছি ২৫ বছর বয়সী শ্যুটার, আরেক ধাপ অতিক্রম করতে পারলেই অন্তত ব্রোঞ্জ মিলবে। এই ভাবনাটা যেই মাথায় ঢুকেছে অমনি সব এলোমেলো হয়ে গেল এই শ্যুটারের, ‘ফাইনালে ওঠার পর কোচ বলেছিলেন পদকের চিন্তা করবে না। শুধুই নিজের সেরাটা মেরে এসো।
তাঁর কথা মেনেই আমি খেলছিলাম। সত্যি বললে, পদকের স্বপ্ন দেখার সাহসও আমার ছিল না। কিন্তু চতুর্থ স্থানে ওঠার পর হঠাৎ মনে হলো, এখন তো পদক জেতার ভালো সুযোগ আছে। এরপর দুটি শটই ভীষণ বাজে হয়ে গেল।’ এতক্ষণ যিনি এত ভালো শ্যুটিং করছিলেন হঠাৎ তাঁর স্কোর নেমে এলো ৯.২ ও ৯.১-এ। এত খারাপ মারার পর আর টিকে থাকা যায় না। ২০২ স্কোর করে চতুর্থ হয়ে আত্মসমর্পণ করছেন জাকিয়া। চাপের কাছেই লুটিয়ে পড়া জাকিয়াকে দেখে স্বাভাবিকভাবে কোচেরও ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু ক্লাভস ক্রিস্টেনসেন বলছেন অন্য কথা, ‘তার কাছে তো আমি এতটা আশাই করিনি, সে যা করেছে দুর্দান্ত। শুরুতে এত ভালো মারছিল, সেটা আমি কল্পনা করিনি।
এটা তার জন্য অভিজ্ঞতা নেওয়ার গেমস ছিল।’ তার পরও যে পদকের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল? ‘ওখানেই দরকার অভিজ্ঞতার। অভিজ্ঞ শ্যুটার হলে সে ওই চাপ উতরে বেরিয়ে পদক নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারত। সে যা করেছে তাতে আমি খুব খুশি। জাকিয়া দেখিয়েছে, তার সামর্থ্য আছে’—বলেছেন বাংলাদেশের ডেনিশ রাইফেল কোচ। ২০০৮ সালে বিকেএসপিতে শ্যুটিং শুরু করা এই তরুণীর আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বলতে দুটি শ্যুটিং বিশ্বকাপ আর ২০১৬ সালে এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ জয়।
এরপর গোল্ড কোস্টে এসে লালমনিরহাটের এই মেয়ে বড় সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন। কোচেরও দাবি তাই, ‘মনোযোগী হয়ে লেগে থাকলে সামনে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।’কোনো লক্ষ্য ছাড়া গোল্ড কোস্টে এসে সেই ভবিষ্যেক জাকিয়াও দেখতে পেয়েছেন। ‘এখানে কোনো টার্গেট নিয়ে আসিনি। আমি নিজেও বুঝি, এ রকম গেমসে পদকের স্বপ্ন দেখার মতো জায়গায় নেই আমি। শুধুই নিজের খেলাটা খেলতে চেয়েছিলাম।
এভাবে খেলে নিজের স্কোর আরো বাড়িয়ে নিতে পারলে একসময় ভালো করতে পারব। তবে পদকের কাছাকাছি গিয়ে পারিনি, এ জন্য তো একটু মন খারাপ হবেই। অবশ্য এই পারফরম্যান্স নিয়ে আমি খুশি।’ এই খুশির হাওয়া কিন্তু দক্ষিণ এশীয় গেমসের সোনাজয়ী শ্যুটার শাকিল আহমেদের গায়ে লাগেনি। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে ফাইনালে উঠে কোনো দাগ কাটতে পারেননি। পারেননি জাকিয়ার মতো লড়াই করতে। ষষ্ঠ হয়েই বিদায় নিয়েছেন শাকিল। তাঁর সঙ্গী আনোয়ার হোসেন অবশ্য ফাইনালের আগেই শেষ হয়ে গেছেন।
তেমনি জাকিয়ার সঙ্গী আতকিয়া হাসান দিশার পরিণতিও হয়েছে আনোয়ারের মতো। তাই বলে সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। শাকিলের প্রিয় ৫০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্ট এখনো বাকি আছে। এই ইভেন্টে তাঁকে নিয়ে আশাবাদী পিস্তল কোচ মার্কো সকিচ। আরেকটি খবর হলো, ৫০ মিটার থ্রি পজিশনে খেলছেন না বাকী। কারণ গোল্ড কোস্টে পা রাখার পর থেকেই তিনি ওই রুপার প্রস্তুতি নিতে লেগে পড়েছিলেন। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের সেই রুপাই তো একমাত্র সম্বল বাংলাদেশের।