গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে
গাজীপুরে নৌকা-ধানের শীষের লড়াই চলছে
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শান্তিপূর্ণভাবে চলছে ভোটগ্রহণ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জাম রয়েছে। দলীয় প্রতীকে এবারই প্রথম এই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এর ফল প্রভাব ফেলবে জাতীয় রাজনীতিতে।
সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এরপর হবে ভোটগণনা। তারপর ফলাফল ঘোষণা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
সকালেই বাসা থেকে বের হয়েছেন প্রার্থীরা। দিনভর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে ভোটের খবর নেবেন তাঁরা। সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। শহরের প্রবেশমুখগুলোতে দেখা গেল, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) একাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেল টহল দিচ্ছে। তারা শহর প্রদক্ষিণ করছে।
সিটি নির্বাচনের মেয়র পদের প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার—দুজনই বলেছেন, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী। তবে হাসান সরকারের সন্দেহ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর বলেছেন, ভোট সুষ্ঠু হবে। বিএনপির প্রার্থীর পরাজয়ের ভয়ে আগেই এসব কথা বলছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা গাজীপুরের নির্বাচন সফল করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ওই সব সংস্থা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ওই সব কেন্দ্রে বাড়তি পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান এক লাখ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমতউল্লা খানকে পরাজিত করেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৫৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই ৫৭টির মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও সংরক্ষিত ১৯ নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন এবং একটি মেয়র পদের জন্য সাতজন প্রার্থী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। মোট ৩৪৫ জন প্রার্থী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৫ জন পুরুষ এবং ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী ভোটার।
নিরাপত্তার জন্য ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে সেখানে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রায় ১২ হাজার র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে ৫৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সংরক্ষিত আসনে ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ইতিমধ্যে র্যাব মোতায়েন শুরু করেছে। ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭টি এবং অতিরিক্ত একটিসহ মোট ৫৮টি টিম মোতায়েন থাকবে। প্রতি দুটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ২৯ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। এদের মধ্যে ১২ প্লাটুন জয়দেবপুর, বাসন চান্দনা চৌরাস্তা ও কাউলতিয়া এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ৭ প্লাটুন কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকায়, ১০ প্লাটুন টঙ্গী এলাকায় থাকবেন। এ ছাড়া পুলিশ এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৮টি মোবাইল ফোর্স, ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরে চার দিন ৫৭টি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। আরও ১০ জন অতিরিক্ত হিসেবে ৬৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন। সিটি করপোরেশনের প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে মোট ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। তাঁরা ২৪ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত নগরীতে দায়িত্ব পালন করবেন।