fbpx

কিডনি সু্স্থ রাখার উপায়

আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কিডনি (Kidney)।

কিডনির প্রতি অযত্ন বা অনিয়মের ফলে জীবন হুমকির মুখে পরতে পারে যে কোন বয়সে।আমাদের শরীরে যে দুটো Kidney আছে তাদের কাজ হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৭০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে শরীরকে সুস্থ রাখা। দুটো কিডনিতে প্রায় ২০-২৫ লাখ ছাঁকনি রয়েছে, যা অনবরত রক্তকে পরিশোধিত করে যাচ্ছে। কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে এবং দেহের অস্থিগুলোকে শক্তিশালী করে থাকে।

কিডনি রোগের কারণ:

  • কিডনি রোগের অন্যতম প্রধাণ কারণ কিডনির প্রদাহ। কিডনির প্রদাহকে নেফ্রাইটিস বা Nephritic Syndrome বলে, যা কিডনির ছাঁকনি বা ফিল্টার মেমব্রেনকে ক্ষতবিক্ষত করে। এই রোগের কারণে শরীর থেকে অত্যাবশ্যক Protein বেরিয়ে যায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) ও ডায়াবেটিস (Diabetes) নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও হতে পারে কিডনি রোগ। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগ নয়, তবু কিডনিকে আক্রান্ত করে কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করে।
  • যাদের রক্তচাপ অতিরিক্ত কম থাকে, তাদেরও হঠাৎ করে কিডনি খারাপ হতে পারে।

 কিডনি রোগের উপসর্গ ঃ

  • এনার্জি কমে যাওয়া, অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা অথবা মনোযোগের সমস্যা হওয়া
  • ঘুমের সমস্যা হওয়া
  •  ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও ফেটে যাওয়া
  •  ঘন ঘন প্রস্রাব করা
  • প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে
  • প্রস্রাবে বেশি ফেনা হলে
  • চোখের চারপাশে ফুলে গেলে
  • পায়ের গোড়ালি ও পায়ের পাতা ফুলে গেলে
  • ক্ষুধা কমে গেলে
  •  মাংসপেশীতে খিঁচুনি হলে
  •  সবসময় শীত বোধ হওয়া
  •   ত্বকে র‍্যাশ হওয়া
  • বমি বা বমি বমি ভাব
  •  ছোটো ছোটো শ্বাস
  • পেছনে ব্যথা

কিডনি ভালো রাখার কয়টি উপায় ঃ

  •  পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে
  • লবণ কম খেতে হবে
  •  অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
  •  রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার চেষ্টা করতে হবে
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে
  • প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি খাওয়া যাবে না
  •  কোমল পানীয় ত্যাগ করতে হবে
  •  ধূমপান ও মদপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে
  •  নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                কিডনির স্বাস্থ্য সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখতে এই খাবারগুলোর অবদান অপরিসীমঃ১. ক্যাপসিকাম: কিডনি সুস্থ রাখতে ক্যাপসিকাম হতে পারে প্রথম পছন্দ। সালাদ কিংবা যেকোন রান্নাকে সুস্বাদু করতে এর জুড়ি নেই। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি-৬, ফলিক এসিড এবং ফাইবার বা আঁশ। এছাড়াও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন, যা কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।২. বাঁধাকপি ও ফুলকপি: বাঁধাকপি ও ফুলকপিকে বলা যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এর খনি। এরা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলস এর বিরুদ্ধে কাজ করে কিডনিকে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধেও এরা কাজ করে। দামে সস্তা হলেও এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি-৬ ও ফলিক এসিড। ফুলকপির একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে, এটি শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।

    ৩. রসুন: রসুনের গুণের কথা আমাদের সবারই জানা। এটি কিডনি প্রদাহ উপশম করার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিডনি রোগীদের জন্য রসুন বেশ উপকারী।

    ৪. পেঁয়াজ: পেঁয়াজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফ্লাভোনয়েড। এটি রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনিরোগজনিত উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা রয়েছে।

    আরো পড়ুন  রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর সহজ ৪টি উপায়

    ৫. আপেল: বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়। নিয়মিত আপেল খাওয়ার অভ্যাস করলে তা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা অনন্য।

    ৬. ডিমের সাদা অংশ: অনেকেই সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ডিমকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু ডিমের সাদা অংশে যে প্রোটিন রয়েছে তা কিডনির জন্য খুবই দরকারি।

    ৭. মাছ: মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছে রয়েছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড। এটি কিডনি, হার্ট ও লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া কোলেস্টেরল কমাতেও এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

    ৮. অলিভ ওয়েল: যেসব দেশে রান্নায় অলিভ ওয়েল বা জলপাই তেল ব্যবহার করা হয় সেসব দেশে কিডনি রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদির হার তুলনামূলকভাবে কম হয়। অলিভ ওয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনল, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে চমৎকার কাজ করে। রান্নায় অথবা সালাদে অলিভ ওয়েল যোগ করলে বাড়তি স্বাদ ও পুষ্টির যোগান বাড়ে।

    ৯.গোক্ষুর : গবেষণায় দেখা গেছে যাদের প্রসাবের পরিমাণ কমে যায় এবং হাত পায়ে পানি জমে তারা নিয়মিত গোক্ষুর চূর্ণ ৩ গ্রাম মাত্রায় সেবন মূত্রের পরিমাণ ঠিক হয়ে যাবে এবং শরীরে জমে থাকা পানি বা ইউরিক এসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

    ১০.রক্ত চন্দন: রক্ত চন্দন কিডনি রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ। রক্ত চন্দন ডাই ডাইরুটিক হিসাবে কাজ করে। এছাড়া প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বন্ধ করে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

    ১১.জুনিপার বেরিস: জুনিপার বেরি মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

    ১২.পাথরকুচি: গবেষণায় দেখা গেছে পাথরকুচি পাতার নির্যাস কিডনি পাথরী ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

 স্বাস্থ্য একটি অমূল্য সম্পদ এই সম্পদ সংরক্ষণের জন্যে উপরে উল্লিখিত পরামর্শ সমূহ যদি জীবনের শুরু থেকেই মেনে চলা যায় তাহলে শুধু কিডনী নয় সকল অসংক্রামক ব্যাধি থেকেই নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। কাজেই আসুন সকলেই নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। এতে অর্থ ব্যয় হবে সামান্যই। তবে যে উপকার পাওয়া যাবে তা অমূল্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *