কলম্বিয়াকে কাঁদিয়ে
কলম্বিয়াকে কাঁদিয়ে শেষ আটে ইংল্যান্ড
শেষ আটে ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ড তখন হয়তো নিজেদের শেষ আটে দেখতে পাচ্ছিল। তাদের অপেক্ষা কেবল শেষ বাঁশি বাজার। এমন সময় সব হিসাব পাল্টে দিলেন ইয়েরি মিনা। অতিরিক্ত সময়ে গোল করে দলকে বাঁচানোর পাশাপাশি কলম্বিয়ান এই সেন্টার ব্যাক ম্যাচের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দিলেন আরও ৩০ মিনিট। যে ৩০ মিনিটে কলম্বিয়া লড়ে গেল সমানে সমানে। তবুও শেষ রক্ষা হলো না তাদের। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলের জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল ইংল্যান্ড।
টাইব্রেকার লড়াইয়ে জর্ডান হেন্ডারসনের নেওয়া পেনাল্টি কিক ফিরিয়ে কলম্বিয়াকে সাময়িক স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন গোলরক্ষক ডেভিড অস্পিনা। নিজেদের বাকি থাকা দুটি শট ইংলিশদের জালে জড়াতে পারলেই কলম্বিয়ার মিলে যেত শেষ আটের টিকেট। কিন্তু মাতেউস ইউরাইবের নেওয়া চতুর্থ শটটি আটকে গেল গোলবারে। এরপর বাধার দেয়াল তুলে দাঁড়ালেন ইংল্যান্ডের গোলক্ষকক জর্ডান পিকফোর্ডও। যে বাধায় বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল কলম্বিয়ার। আর টাইব্রেকার ডেরা থেকে মুক্তি মিলল ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপ ইতিহাসে টাইব্রেকারে এটাই ইংলিশদের প্রথম জয়।
খেলা টাইব্রেকারে গড়ালেও পুরো ম্যাচে থ্রি লায়নসদের শাসন সহ্য করে যেতে হয়েছে কলম্বিয়াকে। সেভাবে আক্রমণই করতে পারেনি তারা। প্রথমার্ধে মাত্র একটি আক্রমণ করা কলম্বিয়া ৯০ মিনিটে একটি কর্নার আদায় করতে পেরেছে। যেখানে অবিরত আক্রমণ করে যাওয়া ইংল্যান্ড কর্নার পেয়েছে ছয়টি। তবে অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে টক্কর দিয়ে লড়েছে কলম্বিয়া। তবুও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় অধরাই থেকে গেল তাদের। শুধু বিশ্বকাপ নয়, কোনো পর্যায়েই ইংল্যান্ডকে কখনও হারাতে পারেনি ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটি।
প্রথমার্ধের শুরু থেকেই দাপটের সঙ্গে খেলতে থাকে ইংল্যান্ড। এই অর্ধে গোল আদায় করতে না পারলেও কলম্বিয়াকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি তারা। একের পর এক আক্রমণে কলম্বিয়াকে দিশেহারা করে তোলে ইংলিশরা। আক্রমণ ফেরাতে ব্যস্ত কলম্বিয়া প্রথমার্ধে মাত্র একবার ইংল্যান্ডের ডি বক্সে হানা দিয়েছে। যদিও এই আক্রমণে সেভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা।
৬ মিনিটে ফ্রি কিক পায় ইংল্যান্ড। কিন্তু অ্যাশলে ইয়াংয়ের নেওয়া ফ্রি কিক সহজেই সামলে নেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ডেভিড অস্পিনা। ১৩ মিনিটে ফের আক্রমণ সাজায় থ্রি লায়নসরা। যদিও রহিম স্টারলিং সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেননি। তিন মিনিট পরই কলম্বিয়ার রক্ষণভাগকে কাঁপিয়ে দেন গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে সবার আগে থাকা ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন।
কেইরান ট্রিপিয়ারের ক্রস খুঁজে নেয় হ্যারি কেইনকে। সুযোগ বুঝে হেডও করেন ইংলিশ স্ট্রাইকার। কিন্তু হ্যারি কেইনের হেড একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কলম্বিয়া কেবল আক্রমণ ফিরিয়েই যাচ্ছিল। এমনকি গোছালো ফুটবলও খেলতে পারছিল না তারা। রক্ষণভাগে বল এলে সেটাকে সতীর্থ খেলোয়াড়কে না দিয়ে উড়িয়ে মারছিল তারা। মনে হচ্ছিল আক্রমণ করার তেমন কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই, গোল না হজম করলেই চলে।
২২ মিনিটে গিয়ে প্রথমার্ধের একমাত্র পরিস্কার আক্রমণটি করে কলম্বিয়া। যদিও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি প্রধান অস্ত্র হামেস রদ্রিগেজকে ছাড়াই মাঠে নামা কলম্বিয়া। জোহান মজিকার শট অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। এরআগে জুয়ান কুয়াদরাদোর নেওয়া শট পরিস্কার করেন ইংলিশ ডিফেন্ডার জন স্টোনস। এটাই প্রথমার্ধে কলম্বিয়ার একমাত্র আক্রমণ। এরপর আবারও বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড।
৩০ মিনিট পেরনোর পর অবশ্য বল দখলের লড়াইয়ে ফিরতে থাকে কলম্বিয়া। ইংল্যান্ডের রক্ষণভাবে বল ভেড়ানোর চেষ্টাও চালাতে থাকে তারা। কিন্তু সফল হতে পারেননি ফ্যালকাও-কুয়াদরাদোরা। ৩৭ মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করে ইংল্যান্ড। কিন্তু জর্ডান হেন্ডারসনের বানিয়ে দেওয়া দারুণ বলটি নিজের আয়ত্তে নিতে পারেননি হ্যারি কেইন। ৪২ মিনিটে ট্রিপিয়ারের নেওয়া ফ্রি কিক গোলপোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। গোলশূন্যভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধেও দাপট ধরে রাখে ইংল্যান্ড। কলম্বিয়ার রক্ষণভাগে হানা দিয়ে যেতে থাকে তারা। অবিরত আক্রমণ করে যাওয়ার ফসল ৫৭ মিনিটে পেয়ে যায় ইংলিশরা। কলম্বিয়ার ডিফেন্সিফ মিডফিল্ডার কার্লোস সানচেজ ডি বক্সের মধ্যে ফেলে দেন হ্যারি কেইনকে। পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। স্পটকিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি গোল্ডেন বুটের পথেও আরেক ধাপ এগিয়ে যান হ্যারি কেইন। রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬ গোল করেছেন ইংলিশ এই স্ট্রাইকার।
১-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও আক্রমণের ধার কমায়নি ইংলিশরা। ব্যবধান দ্বিগুণ করতে একই গতিতে খেলে যেতে থাকে তারা। ৬৩ মিনিটে ডেলে আলীর হেড একটুর জন্য কলম্বিয়ার জালে জড়ায়নি। এরপর একটু একটু করে ম্যাচে ফিরেছে কলম্বিয়া। ৮২ মিনিটে সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়ে যায় রেনে হিগুইতা-কার্লোস ভালদেরামার দেশ। কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রায় ফাঁকা ডি বক্স পেয়েও সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি কুয়াদরাদো। তার নেওয়া শট অনেক উপর দিয়ে চলে যায়।
৮৭ মিনিটে কলম্বিয়ান অধিনায়ক রাদামেল ফ্যালকাওয়ের দুর্বল শট সহজেই সামলে নেন ইংলিশ গোলরক্ষকক জর্ডান পিকফোর্ড। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ততক্ষণে শেষ। ইংল্যান্ড হয়তো ভেবেই নিয়েছিল ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে যাচ্ছে তারা। কিন্তু তখনও অতিরিক্ত ৫ মিনিটের খেলা বাকি। আর এই পাঁচ মিনিটেই ভাগ্য বদলে নেয় কলম্বিয়া। কুয়াদরাদোর কর্নার কেক থেকে হেড করে ইংল্যান্ডের জালে বল জড়িয়ে দেন ইয়েরি মিনা। পুরো ম্যাচে এটাই ছিল কলম্বিয়ার প্রথম কর্নার। আর প্রথম কর্নার থেকেই গোল আদায় করে নেয় তারা।
১-১ গোলে সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এবার আর নিষ্প্রভ থাকেনি কলম্বিয়া। ইংল্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ে গেছে তারা। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে লক্ষ্যভেদ গড়তে পারেনি কোনো দল। দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের ফল পাল্টে দিতে পারেনি ইংল্যান্ড-কলম্বিয়া। ভাগ্য গিয়ে গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে কলম্বিয়াকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় ইংল্যান্ড।