ওয়ানডে আসতেই দাপুটে বাংলাদেশ
দুবার করে জীবন ফিরে পাওয়ার সুযোগ ভালোভাবেই কাজে লাগালেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। সাকিব সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে খেই হারালেও তামিম শেষ করে ফিরেছেন। বাংলাদেশ ওপেনার নামের পাশে যোগ করেছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। তাতে চার উইকেটে বাংলাদেশ গড়ে লড়াকু এক সংগ্রহ। এরপর বল হাতে দারুণ লড়াই। যে লড়াইয়ে ঝুলিতে জমা হয়ে গেল দারুণ এক জয়।
আইপে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটে-বলে ছড়ি ঘুরিয়ে উইন্ডিজকে ৪৮ রানে হারিয়ে দিল ছন্দ ফিরে পাওয়া বাংলাদেশ। গায়ানাতে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশকে পথ দেখিয়ে ২৭৯ রানে পৌঁছে দেন ম্যাচসেরা তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। জবাবে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার দারুণ বোলিংয়ে ২৩১ রানে থেমে যায় স্বাগতিক ক্যারিবীয়রা। ২০০৯ সালের পর উইন্ডিজের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে জিতল বাংলাদেশ।
ওয়ানডে আসতেই বদলে যাওয়া এক দলের নাম বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে ভয়ঙ্কর, সেটা মাঠে আরও একবার প্রমাণ করলেন মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিকরা। অথচ এই বাংলাদেশই টেস্ট সিরিজে উইন্ডিজের বিপক্ষে ছিল অসহায়। চার ইনিংসের একটিতেও ২০০ পেরনো স্কোর গড়তে পারেনি তারা। প্রিয় ফরম্যাট পেতেই স্বাগতিকদের শাসন করে ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরু দেখে হয়তো টেস্ট সিরিজের দৃশ্যই মনে পড়েছে সবার। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাজঘরে ওপেনার এনামুল হক বিজয়। আসা যাওয়ার মিছিলের জন্য হয়তো অনেকে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ফরম্যাট যখন ওয়ানডে, তখন বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনার দুয়ার বন্ধ করে দেওয়ার উপায় কই!
সেটাই করেছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। রেকর্ড জুটি গড়ে পাল্টে দিয়েছেন হিসাব নিকাশ। তবে এতটাই ধীর-স্থির শুরু করেছেন এই দুজন যে, দেখে বোঝার উপায় ছিল না তারা রান নেওয়ার জন্য উইকেটে গেছেন। ৮.৩ ওভারের মধ্যে ৩৯টি ডট বল গেছে। প্রথম বাউন্ডারি এসেছে নবম ওভারে গিয়ে। প্রথম আট ওভারে রান জমা হয় মাত্র ১৬। ১০০ করতে লেগেছে ২৫.৩ ওভার।
কিন্তু এদিকে নজর দেননি তামিম ও সাকিব। নিজেদের থিতু করেছেন উইকেটে। যেটার ফল পেয়েছেন দুজনই। যদিও বেশ কয়েকবার জীবন ফিরে পেয়েছেন তারা। তবে সেটা নিশ্চয়ই রেকর্ড বইয়ে লেখা থাকবে না। রেকর্ড বইয়ে থাকবে তাদের ২০৭ রানের অসাধারণ জুটি। যে জুটিতে বাংলাদেশ কেবল বড় সংগ্রহই পায়নি, ম্যাচও জিতেছে।
ঠান্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে তামিম-সাকিব দুজনই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন তারা। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তামিম-সাকিব দুজনই তখন সেঞ্চুরির খুব কাছে। এমন সময় আক্ষেপে পুড়তে হয় সাকিবকে। ব্যক্তিগত ৯৭ রানের সময় বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে দেবেন্দ্র বিশুর হাতে ধরা পড়েন ১২১ বলে ছয়টি চারে নিজের ইনিংসটি সাজানো বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
সাকিবের বিদায়ে ভাঙে ২০৭ রানের জুটি। ততক্ষণে রেকর্ড বইয়ে নাম উঠে যায় তামিম-সাকিবের। তাদের গড়া ২০৭ রানের এই জুটি দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া যে কোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সাকিব ফিরলেও তামিম তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি।
এতেই ক্ষান্ত হননি তামিম। ১৬০ বলে ১০টি চার ও তিনটি ছয়ে ১৩০ রানের ইনিংস খেলা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ইনিংস শেষ করে ফিরেছেন। আর শেষের দিকে ১১ বলে তিনটি চার ও দুটি ছয়ে মুশফিকুর রহিমের ঝড়ো গতির ৩০ রান বাংলাদেশকে পৌঁছে দেয় ২৭৯ রানে। উইন্ডিজের লেগ স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু দুটি এবং আন্দ্রে রাসেল ও অধিনায়ক জেসন হোল্ডার একটি করে উইকেট নেন।
২৮০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উইন্ডিজের শুরুটা ভালো হয়নি। ঘুরিয়ে বলা যায়, ভালো শুরু করতে দেননি ৩৭ রানে চার উইকেট নেওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজা। উইন্ডিজের দলীয় ২৭ রানের মাথায় এভিন লুইসকে ফিরিয়ে দেন এই ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেরা বোলিং করা মাশরাফি। কিছুক্ষণ পর আঘাত হানেন রুবেল হোসেন। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান শাই হোপকে সাজঘর দেখিয়ে দেন ডানহাতি এই পেসার।
যদিও আউটটি হয়নি। কারণ রুবেলের ডেলিভারিটি লেগ স্টাম্পেরও বাইরে ছিল। কিন্তু ক্রিস গেইলের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় রিভিউয়ের পথে এগোননি হোপ। আম্পায়ারের আউটের সিদ্ধান্তে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল ঠান্ডা মাথায় খেলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শিমরন হিটমায়ারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হওয়ায় রান আউট হয়ে ফিরতে হয় ৬০ বলে একটি চার ও দুটি ছয়ে ৪০ রান করা গেইলকে।
এরপর হিটমায়ারই যা লড়েছেন। উইন্ডিজের বাকি ব্যাটসম্যানরা মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেল, মিরাজদের বোলিংয়ের সামনে সুবিধা করতে পারেননি। ৫২ রান করা হিটমায়ারকে ফেরান ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা মুস্তাফিজ। পরের বলে রোভমান পাওয়েলের উইকেটও তুলে নেন বাঁহাতি এই বাংলাদেশ পেসার। ক্যারিবীয়দের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান দেবেন্দ্র বিশুর ২৯ ও আলজারি যোসেফের ২৯ রান হারের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র।