বিরূপ প্রতিক্রিয়ার
একরামুল হক নিহতের ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফে
বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফে
র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহতের ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে টেকনাফে। এলাকাবাসীর দাবি, একরামুল হক ইয়াবা ব্যবসায় সংশ্নিষ্ট ছিলেন না। এ ঘটনায় র্যাবের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও তথ্যগত ভুল রয়েছে। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের অভিযানে একরাম নিহত হয়েছেন কি-না, তা তদন্তের দাবি উঠেছে।
শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের নোয়াখালিয়াপাড়ায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক। তিনি টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়ার মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে এবং একই ওয়ার্ডে পরপর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, টেকনাফ বাস স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও টেকনাফ মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হওয়ার ঘটনায় র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ই-মেইলে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার বাবার নাম বলা হয়েছে মোজাহার মিয়া ওরফে আবদুস সাত্তার। বাড়ি টেকনাফ পৌরসভার নাজিরপাড়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী, শীর্ষ গডফাদার; তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মাদক আইনে মামলা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে একরামের ভাই এহসানুল হক বাহাদুর জানান, তাদের বাবার নাম মোজাহার মিয়া না। টেকনাফ পৌর এলাকায় নাজিরপাড়া নামে কোনো এলাকাও নেই। একরাম কোনো সময় ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে মামলাও নেই।
তিনি বলেন, ‘একটি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকের কিছু লোক শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার ভাইকে ডেকে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে, জমি বিক্রির ব্যাপারে তারা একরামুলের সঙ্গে কথা বলতে চায়। কিন্তু পরে ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাই।’
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে নাজিরপাড়া নামে একটি গ্রাম রয়েছে, যা পৌর এলাকা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। ওই গ্রামে মোজাহার মিয়া নামে এক ব্যক্তির তিন ছেলে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। একই এলাকায় একরামুল নামে আরও এক ব্যক্তি রয়েছে, যার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।
একরামের স্ত্রী আয়েশা খাতুন বলেন, র্যাব ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তার স্বামীকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।
টেকনাফ থানার ওসি রণজিত কুমার বড়ুয়া জানান, নিহত পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিল। যার একটি মারামারির, অপরটি মাদক আইনে। মারামারির মামলাটি আদালতে শেষ হয়েছে। মাদকের মামলায় তার সংশ্নিষ্টতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
একরাম নিহত হওয়ার পর কক্সবাজার জেলাব্যাপী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সচেতন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেছেন, একরামুল হক মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না। এ বিষয় তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, একরামের মৃত্যুর বিষয়টি টেকনাফের মানুষ সহজভাবে নিচ্ছে না। কোথাও ভুল রয়েছে। বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিষ্কার করা জরুরি। তিনি বলেন, নিহত একরাম ও তার পরিবার বরাবরই স্থানীয় ইয়াবা ডনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, একরাম তার বাড়ির নির্মাণ কাজ অর্থাভাবে শেষ করতে পারেননি। নিজের সন্তানের স্কুলের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ী- এটা হাস্যকর।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিক মিয়া বলেন, টানা ২১ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ওই সময়েই একরামুল ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। আজ এমন একজন রাজনৈতিক কর্মী ইয়াবার নামে খুনের শিকার হলেন! অথচ রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া অগণিত ইয়াবা কারবারি বহাল তবিয়তে রয়েছে।
এ বিষয়ে র্যাব-৭ এর কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন বলেন, নিহত একরাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি ও ইয়াবার শীর্ষ গডফাদার। বন্দুকযুদ্ধের পর লাশের পাশ থেকে একটি বিদেশি রিভলবার, পাঁচটি গুলি ও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।