বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার
আক্কেলপুর উপজেলা থেকে দক্ষিণে আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরে দেওড়া গ্রামের অবস্থান। একসময় গ্রামটি অনেক উঁচু ছিল। ধীরে ধীরে বসতি গড়ে ওঠায় এখন সমতলে পরিণত হয়েছে। এসব ভিটেমাটির নিচে অসংখ্য ইটের টুকরা রয়েছে। কোদালের কোপ দিলেই ভিটেমাটিতে ইটের টুকরা ও ইটের গাঁথুনি বের হয়ে আসে। দেওড়া গ্রামের ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বাড়ির আঙিনায় পাথরের বিষ্ণুমূর্তি রাখা আছে।
অনেক বছর আগে গ্রামের একটি মন্দিরের পাশে মূর্তিটি পাওয়া গিয়েছিল। সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা দেওড়া গ্রামটি পরিদর্শন করেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গ্রামটি থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের কিছু নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এ নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘মাটি খুঁড়লে মিলছে ইট-মূর্তি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার দেওড়া গ্রামের ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বাড়িতে থাকা বিশাল আকারের বিষ্ণুমূর্তি টি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের জাদুঘরে পাঠানো হচ্ছে। গতকাল রোববার বিকেলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে মূর্তিটি উদ্ধার করেন। পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব এ তথ্য জানায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব দাবি করেছে, উদ্ধারকৃত বিষ্ণুমূর্তি কষ্টিপাথরের। মূর্তিটির ওজন ৩৮০ কেজি। মূর্তিটি ৯৯৫ থেকে ১০৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পাল বংশীয় প্রথম রাজা মহীপালের আমলের। এটি দেওড়া গ্রাম এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মূল্য ৭৫ কোটি টাকা।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র
প্রথম আলো
ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূর্তিটি গ্রামের একটি মন্দিরের পাশে আমার পূর্বপুরুষেরা পেয়েছিলেন। তখন থেকেই মূর্তিটি আমাদের কাছে আছে। একসময় মূর্তিটি মন্দিরে রাখা হয়েছিল। দুই দফায় এটি চুরি হয়। চুরি রোধে মূর্তিটি বাড়ির আঙিনায় সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে রেখেছিলাম।’
র্যাব
র্যাব দাবি করেছে, উদ্ধারকৃত বিষ্ণুমূর্তিটি কষ্টিপাথরের। মূর্তিটির ওজন ৩৮০ কেজি। মূর্তিটি ৯৯৫ থেকে ১০৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পাল বংশীয় প্রথম রাজা মহীপালের আমলের। এটি দেওড়া গ্রাম এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মূল্য ৭৫ কোটি টাকা।
আক্কেলপুরের ইউএনও এস এম হাবিল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বগুড়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক নাহিদ সুলতানা সম্প্রতি দেওড়া গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ওই গ্রামের ব্রজেন্দ্রনাথ সাহার বাড়িতে একটি বিষ্ণুমূর্তিটি ছিল। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। তাই মূর্তিটি পাহাড়পুর জাদুঘরে হস্তান্তরের জন্য ব্রজেন্দ্রনাথ সাহাকে বলা হয়েছিল। ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা মূর্তিটি হস্তান্তর করেননি। র্যাব সদস্যরা মূর্তিটি উদ্ধার করেছেন। আজ সোমবার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের জাদুঘরে মূর্তিটি হস্তান্তর করা কথা রয়েছে।’
মূর্তিটি গ্রামের একটি মন্দিরের পাশে আমার পূর্বপুরুষেরা পেয়েছিলেন। তখন থেকেই মূর্তিটি আমাদের কাছে আছে।ব্রজেন্দ্রনাথ সাহা, দেওড়া গ্রামের বাসিন্দা
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের কাস্টেডিয়ান ফজলুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, পুরাকীর্তি কখনো ব্যক্তির হয় না। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে মূর্তিটি উদ্ধারের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছিল। গতকাল র্যাব মূর্তিটি উদ্ধার করেছে। আজ মূর্তিটি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।