অস্টিওপোরোসিস বা হাঁড় ক্ষয় প্রতিরোধের উপায়
অস্টিওপোরোসিস বা হাঁড়ের ক্ষয়রোগ হচ্ছে এমন একটি রোগ যার ফলে হাঁড়ের ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যাওয়ায় হাঁড় ক্ষয় প্রাপ্ত হয়।
এতে হাঁড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়, হাঁড়ের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হয়ে ক্রমেই হাঁড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ফলে হাঁড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।
কারণসমূহ :
প্রধান প্রধান লক্ষণ সমূহ :
• হাঁড় ও পেশীতে ব্যথা।
• ঘাড় ও পিঠে ব্যথা।
• খুব সহজে দেহের বিভিনড়ব স্থানে হাঁড় (বিশেষ করে মেরুদন্ড, কোমর বা কবজির হাঁড়) ভেঙ্গে যাওয়া।
• কুঁজো হয়ে যাওয়া ।
ঝুঁকি যাদের বেশি :
• মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ পরবর্তী মহিলা।
• অপর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করা।
• ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন করা।
• শরীর চর্চা না করা।
• রিউমেটয়েড আর্থাইটিস বা গেঁটে বাত।
• এইডস, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ এবং এসব রোগের ব্যবহৃত ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়।
• দীর্ঘ দিন যাবৎ কর্টিকোস্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করা।
কিছু নিয়মনীতি মেনে চললে অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ রোধ করা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক তেমনই কয়েকটি উপায়-
- মানসিক চাপের সাথে হাড়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক চাপে থাকলে আমাদের দেহে নিঃসরণ হয় কারটিসোল নামক একটি হরমোনের যা হাড়ের ক্ষয়ের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। তাই মানসিক চাপ যতো দূরে রাখবেন আপনার জন্য ততই ভালো হবে।
- দেহে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরেও হাড়ের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হয় না। তাই হাড়ের সমস্যা ও ক্ষয় রোধ করতে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে হবে সর্তকভাবে। মাছ, মাছের তেল, দুধ, সয়া দুধ, ফলমূলে রয়েছে ভিটামিন ডি। সূর্যের আলোর মাধ্যমেও দেহের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ সম্ভব।
- মজবুত হাড়ের জন্য খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। কম ফ্যাট যুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে প্রতিদিন। দুধ, ডিম, কাঠবাদাম, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছ, সবুজ শাকসবজি, ব্রকলি, প্রচুর পরিমাণে ফলমূল রাখতে হবে খাদ্য তালিকায়। এতে করেই আপনি পেতে পারেন মজবুত হাড়।
- ধূমপানের ফলে হাড়ের ক্ষয় বাড়তে থাকে এবং এরজন্য হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়। যারা নিয়মিত ধূমপান ও মদ্যপান করেন তাদের দেহ খাবারের পুষ্টি সঠিকভাবে দেহে সরবরাহ করতে পারে না। ফলে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। তাই সুস্থ দেহ ও হাড়ের জন্য ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করে দিন আজই।
- যারা একটানা বসার কাজ করেন তাদের দেহের হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায় অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি। যারা একেবারেই শারীরিক পরিশ্রম করেন না তাদের হাড় অপেক্ষাকৃত নরম ও দুর্বল হয়ে পড়ে দ্রুতই। শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা, নাচ, সাইকেল চালানো, সাতার কাটা ইত্যাদি বেশ ভালো শারীরিক পরিশ্রম যা হাড়কে মজবুত করে তোলে এবং হাড়ের ক্ষয়রোধে সহায়তা করে।
- প্রতিদিন বেশি করে বাদাম খাবেন। বাদাম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফসফরাসের দারুণ উৎস।
- প্রতিদিন বেশি করে সবজি খাবেন। সবজি হাড়ের জন্য খুবই উপকারী। আপনার রোজকার খাদ্যের তালিকায় তাই ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপির মত সবজি রাখবেন যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করবে।
- হাড়ের ক্ষয় রোধে খেজুর বেশ কার্যকরী। কেননা খেজুর ক্যালসিয়াম ম্যাঙ্গানিজের দারুন উৎস। আর কপার ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের জন্য উপকারী।
অস্টিওপোরোসিসে হাঁড়ের ঘনত্ব কমে হাঁড় ছিদ্রুযুক্ত, দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসা না নিলে একান্ত ব্যক্তিগত কাজকর্ম যেমন: নামায পড়া, গোসল করা, টয়লেটে যাওয়া, হাঁটা-চলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কাজেই অস্টিওপোরোসিস সর্ম্পকে আমাদের সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।