fbpx

অচেনা বাংলাদেশের সামনে নতুন শ্রীলঙ্কা

জানুয়ারিতে যখন ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এল শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ উড়ছে।

ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ে-শ্রীলঙ্কাকে হটিয়ে ট্রফিটা জেতা নিয়ে শঙ্কা তেমন ছিলই না, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতেও জয়ের আশাটাও ছিল উঁচু তারে বাঁধা। বছর দুয়েক ধরে শ্রীলঙ্কা কেবলই নিচে নামছিল, বাংলাদেশ সে সময়ে উড়ছিল।

ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে মার্চে চলে আসুন। ঢাকা থেকে আসুন কলম্বোয়। শ্রীলঙ্কা এখন উড়ছে, আর বাংলাদেশ দল নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে। মাঝে ত্রিদেশীয় সিরিজ, টেস্ট, টি-টোয়েন্টি—সবই জিতে নিয়ে গেছে লঙ্কানরা। বাংলাদেশ পড়ে গেছে হারের ঘূর্ণাবর্তে। এদিক-ওদিক অনেক হাতড়েও একটা জয় মিলছে না।

আত্মবিশ্বাসে ১৮০ ডিগ্রি ফারাক নিয়েই আজ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস করতে নামবেন দুই অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল ও মাহমুদউল্লাহ।

লঙ্কানদের অবশ্য এতে বিশ্বাস নেই। থাকলেও অন্তত মুখে সেটি বলছে না। ম্যাচের আগে যে প্রতিপক্ষকে অসম্মান করতে নেই! শ্রীলঙ্কান দলের পেস বোলিং কোচ রুমেশ রত্নায়েকেও সৌজন্যবোধ মেনেই চললেন। কাল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের দুরবস্থার প্রসঙ্গ উঠতেই ভদ্রলোক ‘ও রকম আপনাদের মনে হচ্ছে’ বলে এড়িয়ে গেলেন। বরং তুলনা দিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের গত বছর দুয়েকের বাজে সময়ের সঙ্গে, ‘ওদের হয়তো একটু খারাপ সময় যাচ্ছে, যেমনটা আমাদের গেছে এর আগের দুই বছর। তবে আমরা এই ম্যাচটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছি। কারণ আমি নিশ্চিত ওরা দেখিয়ে দিতে চাইবে, (সর্বশেষ সিরিজের পর) ওরা যে বদলেছে, সেটি বোঝাতে চাইবে।’

তা বাংলাদেশ যে চায়, সেটি নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সমস্যা হচ্ছে, চাওয়া আর পাওয়ায় মিলছে না। ভারতের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে মেলেনি। মিলবে কী, প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেনি বাংলাদেশ। আজও জয় না এলে? এরপরও দুটি ম্যাচ বাকি থাকবে বাংলাদেশের। তবে ১৮ তারিখ নিদাহাস ট্রফির ফাইনালটা ‘ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা’ হওয়া ঠেকানো তখন কঠিনই হয়ে পড়বে।

বালাই ষাট! অমন চিন্তা করতেও রাজি নয় বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে এসে তাসকিন আহমেদ তো গ্রুপ পর্বে বাকি তিন ম্যাচের সব কটিতেই জয়ের আশা দেখিয়ে গেলেন, ‘এখনো তিনটা ম্যাচ আছে। তিনটার মধ্যে দুটিতে ভালো রানরেট নিয়ে জিতলে আশা করি ফাইনালে যাওয়া যাবে, তিনটা জিতলে তো কথাই নেই।’

আশা দেখাচ্ছেন, তবে আশার বেলুনটাকে ফোলাচ্ছেনও না তাসকিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাটিতেই যেখানে সর্বশেষ দুটি টি-টোয়েন্টিতে হার জুটেছে কপালে, সেখানে এবার তাদেরই মাটিতে ম্যাচ। লঙ্কানরা আছেও আগুনে ফর্মে। তাসকিনও তাই বাস্তবের মাটিতেই পা রাখছেন, ‘ওদের মাটিতে ওদের সঙ্গে খেলা, চ্যালেঞ্জটা সহজ হবে না। প্রথম ম্যাচটা ভারতের সঙ্গে জেতায় ওদের আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। তবে আমাদেরও মানসিকভাবে শক্ত থেকে ওদের সঙ্গে লড়ে যেতে হবে।’ লড়াইয়ের ‘শর্ত’টাও জানিয়ে দিলেন, ‘আমাদের ব্যাটিং-বোলিং দুই দিক থেকেই আরও ভালো অবদান রাখা লাগবে।’

ক্রিকেটে কোন ম্যাচে সেটা লাগে না? তবু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কথাটা আলাদা করে বলে দিতে হয়। টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচের স্মৃতিই বলতে বাধ্য করে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, শেষ কবে সব ক্ষেত্রেই একসঙ্গে ভালো করেছে বাংলাদেশ দল? করেনি বলেই…এই যাহ্, সর্বশেষ ১৪ ম্যাচে ১৩ হারের কথাটা বলতে না চাইলেও এসেই পড়ে বারবার!

শ্রীলঙ্কা বলেই সর্বশেষ সিরিজের কথাটাও আসে। সেবার দুই ম্যাচেই ‘উদার’ বোলিং করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ১৯৩ রানের স্কোরটাও আগলে রাখা যায়নি, দ্বিতীয় ম্যাচে তো আগে ব্যাটিং পেয়ে শ্রীলঙ্কা করে ফেলে ২১০। নিদাহাস ট্রফির প্রথম ম্যাচে আবার ব্যাটসম্যানরা দেখিয়েছেন ‘সৌজন্যবোধ’। নিজেরা রান নিয়ে কষ্ট দেননি ভারতীয় বোলারদের। ১৩৯ তো এ যুগের টি-টোয়েন্টিতে রানই নয়!

তা আজ বুক ফুলিয়ে বলার মতো রানটা কত হতে পারে? তাসকিন ‘১৭০-১৮০’-তেই চোখ রাখছেন। কিন্তু এখানেও আবার শঙ্কা! ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কুশল পেরেরা যেমন ব্যাটিং করলেন, তারপর শঙ্কাটা না এসেই পারে না। থিসারা পেরেরা, কুশল মেন্ডিসরা তো আছেনই!

তাই বলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়াটা সম্ভবত ঠিক হবে না। রুমেশ রত্নায়েকের মন্তব্যকেও তাই গুরুত্ব দিতে হয়, ‘বাংলাদেশ কিন্তু শক্ত দল। নিজেদের মাটিতে সবাইকে হারিয়েছে। আমাদের এখানে এসে আমাদের হারিয়েছে। বড় বড় কিছু নাম আছে ওদের দলে, দুর্দান্ত কিছু করার প্রতিভাও আছে।’

আরেকটা ব্যাপার আছে। প্রেমাদাসাও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচের স্মৃতি। মাশরাফির টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায়ের সেই ম্যাচটা জয় দিয়েই রাঙিয়েছিল বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *