জীবনে সবচেয়ে বড় দুঃখ
বিল গেটসের জীবনে সবচেয়ে বড় দুঃখ কী জানলে অভাক হবেন
তাঁর জীবনে এই পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো বিদেশি ভাষা না জানা
বহুমুখী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা বিল গেটসকে নতুন করে পরিচয় করে দেওয়ার কিছু নেই। একাধারে ১৩ বছর (১৯৯৫-২০০৭) বিশ্বের শীর্ষ ধনী ছিলেন তিনি। এখনো তিনি বিশ্বসেরা ধনীদের তালিকাতেই আছেন। সারা বিশ্বে বিল গেটস হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর মূল নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস।
গেটস ও তাঁর সতীর্থ পল অ্যালেন ‘মাইক্রোসফট’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৫ সালে, যা বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বিল ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চকে বিয়ে করেন। ২০০০ সালে নিজের এবং স্ত্রীর নাম জুড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
৫ মে বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বিল গেটস সম্পর্কে জানা-অজানা বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ মানুষ বিল গেটস সম্পর্কে তিনটি তথ্য জানে। এক. তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন। দুই. তিনি সবচেয়ে সফল প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তিন. নিজের প্রতিষ্ঠিত বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতি অত্যন্ত মহানুভব ও সহায়তাপরায়ণ।
এসবের বাইরেও বিল গেটস সম্পর্কে জানার আছে আরও অনেক কিছু। তাঁর অপরিমেয় প্রচেষ্টা, পরিশ্রম, সাধনা ও সাফল্য নিয়ে বিশ্ববাসীর কৌতূহলও আছে ব্যাপক। বিল গেটস সম্পর্কে আরও জানা-অজানা বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো:
১. কিশোর বয়সে ওয়াশিংটনের লেকসাইড প্রিপারেটরি স্কুলে পড়ার সময় বিল গেটস সাধারণ ইলেকট্রিক কম্পিউটারে তাঁর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখেন। এটি ছিল পেপার ও পেনসিল গেম টিক-টাক-টো সংস্করণ।
২. একদিন স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর কম্পিউটার প্রোগ্রামের কোডিং দক্ষতা আবিষ্কার করে। পরে ক্লাসের শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুতের জন্য স্কুলের কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরির অনুমতি দেয়।
৩. কিশোর বয়সেই গেটস বিশ্বকোষ এনসাইক্লোপিডিয়া সিরিজ পড়ে ফেলেন।
৪. প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা স্যাট-এ ১৬০০ স্কোরের মধ্যে তিনি ১৫৯০ স্কোর করে রেকর্ড করেন।
৫. বিল গেটস কলেজ থেকে ছিটকে পড়া শিক্ষার্থী। তিনি ১৯৭৫ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ছেড়ে পুরোপুরি মাইক্রোসফটে মনোনিবেশ করেন।
৬. হার্ভার্ড ছাড়ার দুই বছর পর লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও লাল বাতি উপেক্ষা করে গাড়ি চালানোয় তিনি নিউ মেক্সিকোতে গ্রেপ্তার হন।
৭. কোথাও যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট-কর্মীদের লাইসেন্স প্লেট ট্যাবে সংরক্ষণ করতেন। তিনি বলেন, কোম্পানিকে তিনি নিজের মতো পেয়েছিলেন। ফলে তিনি সেটা যৌক্তিক উপায়ে সাজাতে পারেন।
৮. তাঁর সংগ্রহে আছে পোরশে গাড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশগত সুরক্ষা সংস্থা অথবা পরিবহন বিভাগের অনুমোদনের পর ১৩ বছর আগে তিনি পরিবেশবান্ধব ৯৫৯টি স্পোর্টস পোরশে গাড়ি সংগ্রহ করেন।
৯. আকাশপথে ভ্রমণের জন্য গেটস বিশেষ কোচ ব্যবহার করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নিজস্ব প্লেন ব্যবহার করে আসছেন। যেটিকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘বিগ স্প্লার্জ’।
১০. প্লেন ছাড়াও তাঁর সংগ্রহে বিজ্ঞান বিষয়ে চিত্রকর লেওনার্দো দা ভিঞ্চির সংকলন ‘দ্য কোডেক্স লিসেস্টার’ আছে, যেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ১৯৯৪ সালে নিলামের মাধ্যমে তিনি ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে তা সংগ্রহ করেন।
১১. গেটসের বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁর সন্তানেরা প্রত্যেকে উত্তরাধিকার সূত্রে মাত্র এক কোটি ডলার পাবে।
১২. বিল গেটস বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেন তাঁর ফাউন্ডেশনে। তিনি বলেন, মাইক্রোসফটে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এখনো তিনি কাজ করছেন। যেটি সবকিছু স্মরণ করিয়ে দেবে, আপনাকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি যা চিন্তা করেন, মনোযোগ দেন, তা আপনার হাতের মুঠোয় আনতে সহযোগিতা করবে।
১৩. এই প্রযুক্তিবিদ বলেন, যদি মাইক্রোসফটের কাজ প্রকাশ্যে না আসত, তবে সম্ভবত তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একজন গবেষক হতেন।
১৪. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে তাঁর আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তিনি বলেন, শীর্ষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন শিবিরের পক্ষে তিনি। উল্লেখ্য, এলেন মাস্ক ও প্রয়াত স্টিফেন হকিংয়ের মতো বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তিবিজ্ঞানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
১৫. বিল গেটস গান শুনতে বেশ পছন্দ করেন। তার প্রিয় ব্যান্ড ‘ইউয়িজার’। তবে ‘ইউ টু’ রক ব্যান্ডও তাঁর প্রিয় তালিকায় রয়েছে।
১৬. বছরে প্রায় ৫০টি বই পড়েন বিল গেটস। বলেন, মূলধারার বই পড়া এখনো চলছে। আমি নতুন কিছু শিখি এবং আমার বোঝাপড়া উভয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।
১৭. বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের এই কর্ণধার কোনো বিদেশি ভাষা জানেন না। আর এটাকে তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, তাঁর জীবনে এই পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দুঃখ হলো বিদেশি ভাষা না জানা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের সিয়াটলে ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন বিল গেটস। সেই সূত্রে তাঁর মাতৃভাষা ইংরেজি। যেহেতু তাঁর বিদেশি কোনো ভাষা জানা নেই, সুতরাং ইংরেজিতেই চলে তাঁর যত গবেষণা ও কর্মযজ্ঞ।