প্রাকৃতিক উপায়ে এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ
এ্যাজমা বা হাঁপানি :
গ্রীক শব্দ Az-MA থেকে Asthma শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ ‘দ্রুত নিঃশ্বাস নেয়া’। এ্যাজমা এমন একটি অবস্থা যাতে ফুসফুসের বায়ুনালীসমূহ আক্রান্ত হয়। এ্যাজমায় আক্রান্ত হলে ফুসফুসের বায়ুবাহী নালীসমূহ অত্যাধিক সংবেদনশীল (Hyper active) হয়ে যায় এবং সহজে ফুটে ওঠে ও প্রদাহিত হয়। ফলশ্রুতিতে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবংশ্বাস নিতে বা ফেলতে কষ্ট হয়।
তীব্রতা অনুসারে এ্যাজমা- ২ প্রকার। যথা :
১. তীব্র হাঁপানি (Acute asthma)- এতে ফুসফুসের বায়ুবাহী নালীসমূহ আকস্মিকভাবে সংকুচিত হয় ও শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্টের সৃষ্টি করে।
২. দীর্ঘমেয়াদী হাঁপানি (Chronic Asthma)- এতে ঘন ঘন এ্যাজমায় আক্রান্ত হয় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।
এ্যাজমার কারণ:
বংশগতকারণে কারও কারও বেশি হয়ে থাকে। ঘরবাড়ির ধুলো-ময়লায়, মাইট পোকা, ফুলের বা ঘাসের পরাগ রেণু, পাখির পালক, জীব-জন্তুর পশম, ছত্রাক, কিছু খাবার, কিছু ওষুধ ও নানারকম রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি থেকে এলার্জিজনিত এজমা হয়ে থাকে।
অ্যাজমা রোগের লক্ষণ চেনার উপায় ।
– শ্বাসকষ্ট, সাথে শুকনো কাশি ।
– শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাঁশির মতো সাঁ সাঁ শব্দ ।
– হঠাৎ দমবন্ধ ভাব অনুভব করা ।
– ধুলোবালি বিশেষভাবে ঘরের ধুলো, ঠাণ্ডা কিংবা গরমের কারণে শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট ।
– ঋতু পরিবর্তনের সময় শ্বাসকষ্ট ।
– বিটাব্লকার বা অ্যাসরিন জাতীয় ওষুধ খেলে শ্বাসকষ্ট ।
হাঁপানির সমস্যা উপশমের কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানাচ্ছি:
আদা:
আদা হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসার জন্য বেশ পরিচিত। গবেষকরা গবেষণায় পেয়েছেন যে শ্বাসনালীর প্রদাহ এবং শ্বাসনালীর সংকোচনের ক্ষেত্রে আদা সাহায্য করে। এছাড়া তারা এটাও পেয়েছেন যে হাঁপানির কিছু ঔষধের মতো আদাতেও পেশিকে শিথিল করার মতো উপাদান রয়েছে।
- হাঁপানির কষ্ট উপশমে সামান্য একটু আদা লবন দিয়ে খেতে পারেন।
- সমপরিমাণ আদার রস, বেদানার রস এবং মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ থেকে ১ টেবিল চামচ করে দিনে ২-৩ বার খেতে পারেন।
- এছাড়া ১ চা চামচ আদার গুঁড়া দেড় কাপ পানিতে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ টেবিল চামচ খেতে পারেন।
- ১ ইঞ্চি আদার টুকরো কুঁচি করে কেটে বেশ অনেকটা পানি দিয়ে কম আঁচে ৫ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খেতে পারেন হাঁপানির সমস্যা কমাতে।
সরিষার তেল:
যখন হাঁপানির আক্রমণ হয় তখন কিছুটা সরিষার তেল কুসুম গরম করে বুকে এবং পিঠে মালিশ করলে শ্বাস প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার হয় এবং স্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে।
শুকনো ডুমুর ফল:
ডুমুর ফলের পুষ্টি গুনাগুন শ্বাস যন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং কফ পরিষ্কার করত ও শ্বাস কষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
- এক কাপ পানিতে ৩টি শুকনো ডুমুর ফল সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই ফল এবং ফল ভেজানো পানিটা খালি পেটে খেতে হবে। কয়েকমাস একটানা খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
রসুন:
নিচে উল্লেখিত প্রক্রিয়াতে রসুন খেলে তা হাঁপানির প্রাথমিক পর্যায়ের ফুসফুসের বাধা দূর করতে সাহায্য করে।
- পৌনে এক কাপ পানিতে বড় ২-৩ কোয়া রসুন ফুটিয়ে নিয়ে কক্ষ তাপমাত্রায় এলে সেটা পান করুন।
কফি:
সাধারণ ক্যাফেইন থাকা কফি পান করলে তা হাঁপানির সমস্যায় বেশ উপকারে আসে। গরম কফি শ্বাস নালীকে পরিষ্কার করে এবং নিঃশ্বাস নেয়া সহজ করে। তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত কফি খাওয়া যাবে না। দিনে খুব বেশি হলে ৩ কাপ কালো কফি খেতে পারেন। আর যদি কফি পছন্দ না হয় তাহলে গরম রঙ চা খেতে পারেন।
ইউক্যালিপটাস তেল:
বিশুদ্ধ ইউক্যালিপটাস তেল হাঁপানির চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী। কারন এতে রয়েছে জমাট বাধা দূর করার গুনাগুন। গবেষণায় দেখা যায় যে ইউক্যালিপটাস তেলে থাকা ইউক্যালিপটল নামক রাসায়নিক পদার্থ মিউকাস ভাঙতে সাহায্য করে। যদিও এই তেলটি আমাদের দেশে সহ্জলভ্য নয় তবে চাইলে অনলাইনে কিনে নিতে পারেন।
- সামান্য কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল পেপার টাওয়েল বা রুমালে নিয়ে ঘুমানোর সময় মাথার পাশে রাখুন যেন এর গন্ধটা নিঃশ্বাসের সাথে যায়।
- এছাড়া কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল গরম পানিতে দিয়ে সেটার বাষ্পের মাঝে গভীর নিঃশ্বাস নিন। দ্রুত উপশম পাবেন।
মধু:
মধু হচ্ছে হাঁপানির সবচেয়ে পুরনো নিরাময়ক উপাদান। মধুতে থাকা অ্যালকোহল এবং ইথারিয়েল তেল হাঁপানির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
- অনেক সময় শুধুমাত্র মধু গন্ধ শুঁকেই অনেকে ভালো ফলাফল পেয়ে যায়।
- এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১চা চামচ মধু মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করুন দিনে ৩ বার।
- রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ১ চা চামচ মধুর সাথে আধা চা চামচ দারচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটি গলার কফ দূর করতে এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করবে।
পেঁয়াজ:
পেঁয়াজের প্রদাহ বিরোধী গুনাগুন হাঁপানির শ্বাস কষ্ট দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া পেঁয়াজে থাকা সালফার ফুসফুসের প্রদাহ দূর করতেও সাহায্য করে। ভালো শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য শুধু কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন। যদি কাঁচা খেতে না পারেন তাহলে রান্নায় একটু বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে সেই পেঁয়াজ খান।
লেবু:
হাঁপানির রোগীদের দেহে অনেক সময় ভিটামিন সি এর মাত্রা কম থাকে। লেবুতে থাকা প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হাঁপানির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
- এক গ্লাস পানিতে অর্ধেকটা লেবু চিপে স্বাদ অনুযায়ী কিছুটা চিনি দিয়ে নিয়মিত খেতে পারেন হাঁপানির আক্রমণ কমাতে।
এছাড়া বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর কমলা, পেঁপে, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলও হাঁপানির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
হাঁপানি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের উপায়:
১ এলার্জিকারক বস্তু এড়িয়ে চলা :যেমন ধুলো,বালি,ঘরের ঝুল,ধোঁয়া,ঝাঁঝালো গন্ধ ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা
২.ধূমপান পরিহার করা
৩. পেশাগত কারণে এ্যাজমা হলে চেষ্টা করতে হবে পেশা বা স্হান পরিবর্তন। রান্নায় ৪.ভেষজ মশলাগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
৫.খাবারে অমেগা৩ ফ্যাটি এসিড রাখার চেষ্টা করুন। তেল, মাছ ইত্যাদি।
৬.খাবার তালিকাতে প্রচুর তাজা ফল ও সবজি রাখুন। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি এবং ই ফুসফুসের কার্যকারিতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
৭.প্রক্রিয়াজাত করা ও আলাদা খাবারের গন্ধ দেয়া ও প্রিজারভেটিভ দেয়া খাবার পরিহার করুন হাঁপানির আক্রমণ কমাতে।
যদি কারো ল্যাক্টোজে অসহিষ্ণুতার জন্য দুধে অ্যালার্জি থাকে তাহলে দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার বাদ দিন।
হাঁপানির সমস্যা কমাতে এগুলো কিছু ঘরোয়া উপায়। তবে রোগের সমস্যা যদি প্রকট হয় এবং এসব উপায়ে কোনো উপশম না হয় তাহলে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ধন্যবাদ #ডা_শাহানাজ_ম্যাডাম সুন্দর লেখার জন্য।আরও বিভিন্ন বি ষ য়ে লেখবেন আ শা করি। পুরাতন বি ষ য় নতু ন ভা বে জানতে পেরে ভা ল লাগলো।
Excellent post we will want to better post in next(MD. Polash mahmud)
SDSM.