প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুণ
উচ্চ রক্তচাপ, যার আরেক নাম হাইপারটেনশন বা HTN ।
যখন কোন ব্যাক্তির রক্তের চাপ সব সময়েই স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে থাকে তখন তাকে হাইপারটেনশন (Hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ বলে। উচ্চ রক্ত চাপের কোন উল্লেখ যোগ্য কারণ কোনও চিকিৎসা-শাস্ত্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি।পৃথিবীতে ২৫ বছরের উর্ধে জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১৭.৩ মিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপ অথবা উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত জটিলতায় মৃত্যু বরণ করেন।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
সাধারনভাবে নিম্নলিখিত কারনে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকেঃ
- অতিরিক্ত কাজের চাপ
- অতিরিক্ত মদ্যপান
- উচ্চমাত্রার লবণের ব্যবহারের
- মেদ
- পরিবারের আকার বড় হওয়া
- বেশী আওয়াজ
- ঘিঞ্জি পরিবেশ
- গর্ভধারণের কারণে
উচ্চমাত্রার লবণের ব্যবহারের কারনে প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ রোগী এই রোগে আক্রান্ত হন। উত্তরাধিকার সূত্রে উচ্চ রক্তচাপ একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত শতকরা ১০ ভাগ পর্যন্ত মহিলা গর্ভধারণের কারণে উচ্চ রক্তচাপের স্বীকার হন।
উচ্চ রক্ত চাপের প্রকারভেদ
শ্রেণী | হৃদ-সংকোচনচাপ | হৃদ-প্রসারণচাপ | কি করবেন? | ||
mmHg | kPa | mmHg | kPa | ||
সাধারণরক্তচাপ | ৯০–১১৯ | ১২–১৫.৯ | ৬০–৭৯ | ৮.০–১০.৫ | বর্তমান লাইফস্টাইল অনুসরণ করুন। |
প্রিহাইপারটেনশন | ১২০–১৩৯ | ১৬.০–১৮.৫ | ৮০–৮৯ | ১০.৭–১১.৯ | বর্তমান লাইফস্টাইল অনুসরণ করুন অথবা সাস্থ্যকর লাইফস্টাইল গ্রহণ করুন। |
হাইপারটেনশনপর্যায়-১ | ১৪০–১৫৯ | ১৮.৭–২১.২ | ৯০–৯৯ | ১২.০–১৩.২ | বর্তমান লাইফস্টাইল অনুসরণ করুন অথবা সাস্থ্যকর লাইফস্টাইল গ্রহণ করুন। যদি ১ মাসের মধ্যে ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসে তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। |
হাইপারটেনশনপর্যায়-২ | ≥১৬০ | ≥২১.৩ | ≥১০০ | ≥১৩.৩ | বর্তমান লাইফস্টাইল অনুসরণ করুন অথবা সাস্থ্যকর লাইফস্টাইল গ্রহণ করুন। ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসলে অতি দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। |
বিচ্ছিন্ন হৃদ-সংকোচনহাইপারটেনশন | ≥১৪০ | ≥১৮.৭ | <৯০ | <১২.০ |
প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায় :
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মানুষ বেশিরভাগ সময়ই ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। তবে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করেই কিন্তু এটা কমানো সম্ভব। এমন কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে; যা সব রক্তচাপকেই নিয়ন্ত্রণে রাখে।
প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ কমানোর উপায়গুলো নিম্নে দেওয়া হল :
১.ব্যায়াম করুন
ব্লাড প্রেসার কমানোর একটি কার্যকারী উপায় হচ্ছে ব্যায়াম। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেই এক সপ্তাহ পর ব্লাড প্রেসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। এজন্য হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাটা এবং সাইকেল চালানোর মতো আরও অনেক কাজ করতে পারেন আপনি।
২.কলা খান
পটাসিয়ামের প্রধান উৎসই হচ্ছে কলা। তাই রক্তচাপ কমাতে প্রতিদিন কলা খান। এছাড়া অন্যান্য যেসব খাবারে পটাসিয়াম রয়েছে যেমন- আলু, কমলা লেবুর জুস এবং দই ইত্যাদি খাবারও খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৩.লবণ কম খান
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে লবণ কম খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাদের দিনে ১৫শ মিলিগ্রামেরও কম লবণ খাওয়া উচিত।
৪.ধুমপান এড়িয়ে চলুন
ধুমপায়ীদের সবচেয়ে বেশি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি রয়েছে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাচঁতে চাইলে তা এড়িয়ে চলুন।
৫.ওজন কমান
অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম একটি কারণ। তাই এটি নিয়ন্ত্রণের ওজন কমিয়ে ফেলুন। শুধু রক্তচাপ নয়, অতিরিক্ত ওজন হার্টের কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করে। তাই এটি কমিয়ে ফেলাই ভালো।
৬.অ্যালকোহলের মাত্রা কমানো
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে অ্যালকোহলের মাত্রা কমিয়ে ফেলুন। গবেষণা দেখা গেছে, দিনে ২ প্যাকের বেশি অ্যালকোহল পান করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
৭.ধ্যান বা মেডিটেশন
প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম করে প্রার্থনা, ধ্যান বা মেডিটেশন করলে ব্লাড প্রেসার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়া নিয়ম করে যোগ ব্যায়াম করলেও ব্লাড প্রেসার কমানো সম্ভব।