fbpx

কারামুক্তির আগেই কৃষকের চিরমুক্তি

একবার নয়, চার-চারবার জামিনের আবেদন করেছিলেন কারাবন্দি কৃষক মানিক মিয়া কারামুক্তির আগেই কৃষকের চিরমুক্তি

একবার নয়, চার-চারবার জামিনের আবেদন করেছিলেন কারাবন্দি কৃষক মানিক মিয়া। প্রতিবারই তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। অবশেষে আজ রোববার জামিন পান তিনি। কিন্তু কারামুক্তি পাবেন না কখনো।

আজ দুপুরে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. জসিম উদ্দিনের আদালতের কাঁঠগড়ায় ঢলে পড়েন মানিক মিয়া। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মানিক মিয়া কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দি গ্রামের মরহুম আবদুস ছালামের ছেলে। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক ছিলেন। তিনি কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলা চালিয়ে আহত করা ও চুরির অভিযোগ এনে পাকুন্দিয়ার সম্মানিয়া গ্রামের মো. শহীদ মিয়া ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর পাকুন্দিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় মানিক মিয়াকে প্রধান আসামি, তাঁর স্ত্রী আছমা বেগম ও ছেলে সাদ্দামসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তদন্ত শেষে গত ১১ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

মানিক মিয়ার আইনজীবী সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট খন্দকার মো. শাহজাহান জানান, গত ১২ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া ৩ নম্বর বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু বিচারক ধীমান মণ্ডল জামিন না মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে আরো তিনবার মানিক মিয়ার পক্ষে জামিনের আবেদন করা হলে প্রতিবারই না মঞ্জুর করেন বিচারক। অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মামলাটি অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে স্থানান্তর করা হয়। আজ মামলার ধার্য তারিখে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মানিক মিয়ার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. জসিম উদ্দিন। আদেশের পর পরই চেম্বারে এসে জামিননামা তৈরি করে দাখিলের প্রক্রিয়া শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঁঠগড়ায় মানিক মিয়ার ঢলে পড়া ও মৃত্যুর খবর পান তিনি।

শাহজাহান আরো বলেন, মানিক মিয়ার বিরুদ্ধে এজাহারের লিখিত বর্ণনার সঙ্গে হাসপাতালের প্রদত্ত প্রতিবেদনের কোনো সামঞ্জস্য নেই।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এ এম লিটন হিলালী বলেন, কাঁঠগড়ায় মানিক মিয়ার শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছিল এবং মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। দুপুর পৌনে ১টার দিকে তিনি ঢলে পড়ে অচেতন হয়ে যান।

অপর আইনজীবী আফজালুর রহমান কাজল জানান, মানিক মিয়া কাঁঠগড়ার সামনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের কাছে একাধিকবার পানি খেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিচারক নামার পর পানি দিবে বলে জানান পুলিশ সদস্য।

এই অভিযোগ অস্বীকার করে কিশোরগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এই ঘটনা সত্য নয়। পানি চাওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই মানিক মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। সম্ভবত স্ট্রোক করায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশ বর্তমানে মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

মানিক মিয়ার স্ত্রী বিলাপ করে জানান, তাঁর স্বামীর কোনো দোষ ছিল না। বিনা কারণে জেল খাটছিলেন। এটা তিনি সহ্য করতে পারেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *