আজ নিদাহাসে অন্যরকম লড়ায়ে বাংলাদেশ-ভারত
আগের ম্যাচের পাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে দুই দল।
জয় নিয়ে ইস্পাত দৃঢ় করবে নিজেদের মনোবল। শেষ পর্যন্ত কারা জয় পায় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খরা ঘোচানো ঐতিহাসিক জয়ে সরে গেছে টাইগারদের সংশয়ের মেঘ। গুঁড়িয়ে গেছে মানসিক বাধার দেয়াল। মিলেছে আত্মবিশ্বাসের রসদ।
ফিরে পাওয়া সেই বিশ্বাসের ভেলায় চেপেই এবার আরেকটি চ্যালেঞ্জ জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার কাছে হারলেও বাংলাদেশকে হারিয়ে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে দ্বিতীয় দেখা স্বাগতিক লঙ্কানদের বিশাল ব্যবধানে হারায় ভারত। তাই লঙ্কানদের বিপক্ষে পাওয়া আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগাতে চাইবে ভারত। মোটামুটি সহজ সমীকরণ নিয়েই বুধবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। হারলে প্রতিপক্ষ ফাইনালে। আর জিতলে নিজেরাই এক পা দিয়ে রাখবে ফাইনালে। ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা শেষ ম্যাচে। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচেই দুর্দান্ত জয় তুলে নেয়া বাংলাদেশের চোখ ফাইনালের দিকেই। আর দুই ম্যাচে টানা জয় পেয়ে উজ্জীবিত ভারতও।
ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে হার দিয়েই নিদাহাস ট্রফি শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ডগড়া জয় দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশের লক্ষ শুধুই ফাইনাল। বাংলাদেশ রয়েছে মাঝামাঝি অবস্থানে। ভারতের কাছে হেরে নিদাহাস ট্রফিতে শুরুটা ভালো না হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার গড়া ২১৪ রানের পাহাড় টপকে ধূসর ছবিটা রঙিন করে তুলেছে বাংলাদেশ। আজ ভারতকে হারাতে পারলে আরাধ্য ফাইনাল চলে আসবে দৃষ্টিসীমায়। হারলেও সুযোগ থাকবে। তখন শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের কোনও বিকল্প থাকবে না।
অন্যদিকে আজ জিতলেই ফাইনালে চলে যাবে ভারত।আর হেরে গেলে তাকিয়ে থাকতে হবে শুক্রবারের বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচের দিকে। ভারতের সুবিধা হল নেট রান রেটে এগিয়ে তারা। তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে লীগ টেবিলের শীর্ষেও তারা। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার ঝুলিতে আছে সমান দুই পয়েন্ট। তবে এক ম্যাচ কম খেলা বাংলাদেশ নেট রান রেটে শ্রীলংকার চেয়ে পিছিয়ে আছে। ফাইনালের সমীকরণটা আরও জটিল হয়ে উঠবে আজ বাংলাদেশ জিতলে এবং শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে হারলে।তখন তিন দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে।
সেক্ষেত্রে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকা দল দুটি পাবে ফাইনালের টিকিট। রান রেটের বিষয়টিও তাই আজ মাথায় রাখতে হবে বাংলাদেশকে। তবে আগে ভারতের গেরো খোলার চ্যালেঞ্জটা জয় করতে চান মাহমুদুল্লাহরা। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুল্লাহ সেই স্বপ্নের কথা জানিয়ে বলেন, আমরা এই সফরে আসার আগেই আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছিলাম যে আমরা ফাইনালে খেলবো। লক্ষ্য সব সময় জয়। শেষ ম্যাচে জয়ের পর অনেক কিছু করে ফেলেছি এমন নয়, আমরা আমাদের পা মাটিতেই রাখছি। আমাদের টি-টুয়েন্টি স্কিল নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। আমি আশা করি আমরা তা দূর করতে পারবো ভালোভাবে।তবে বৈচিত্র্যময় ভারতীয় বোলিং টাইগারদের ভাবাচ্ছে কিছুটা। মাহমুদুল্লাহর কথায়, ভারতীয় বোলাররা তাদের বলের গতিতে তারতম্য এনেছে, বিশেষ করে পেসাররা। তারা যখন ধীরে বল করছে টার্ন আদায় করে নিচ্ছে। পেসাররা গতির তারতম্য ঘটাচ্ছে।
আমাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। তবে ‘বাংলাদেশি ব্যান্ড’এর ক্রিকেট খেলে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও জানিয়ে রাখলেন টাইগারদের অধিনায়ক।নিদাহাস ট্রফির ৩ ম্যাচের ২টিতে জিতলেও নিজেদের অধিনায়কের অফ-ফর্ম নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে ভারতের। শিখর ধাওয়ান দারুণ ফর্মে থাকলেও সুরেশ রায়না বড় করতে পারছেন না ইনিংস। সর্বশেষ ম্যাচে দিনেশ কার্তিক ২৫ বলে ৩৯ করেছেন। মনিশ পান্ডে মিডল অর্ডারে স্বস্তি দিচ্ছেন। তবে বোলিংয়ে জয়দেব উনাদকাট তিন ম্যাচ খেললেও রান দিয়েছেন বেশি। শেষ দুই ম্যাচে শারদুল ভালো করেছেন।
বৈচিত্র্যে ভালো করছেন বিজয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচেই বেশি বেশি রান দিয়েছেন স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর প্রত্যেক ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে আসছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতে সহজ পথেই ফাইনাল নিশ্চিত করতে চাইবে টি-টুয়েন্টি সংস্করণের প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।টি ২০ সংস্করণে দু’দলের আগের ছয় ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতেছে ভারত। ২০১৬ টি ২০ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে এক রানের সেই অবিশ্বাস্য হারের দুঃস্মৃতি কখনই ভোলা সম্ভব নয়। তবে সেই দুঃস্মৃতি ভারতকে ফিরিয়ে দেয়া খুবই সম্ভব।
মানসিক বাধাটা কেটে গেছে আগের ম্যাচেই। যে বাংলাদেশ আগে কখনও টি ২০ তে দুইশ’ করতে পারেনি, তারাই কিনা শ্রীলংকার বিপক্ষে ২১৫ রানের কঠিনতম লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে। রাঙিয়েছে ইতিহাসের পাতা। ৩৫ বলে ৭২* রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংসে ঐতিহাসিক এ জয়ের নায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবালের ব্যাটেও ছিল দুঃসাহসী আত্মবিশ্বাসের ছটা।